টিপুকে গুলির পর মেসেজ দেওয়া হয় ‘ইট ইজ ডান’

ফাইল ছবি: প্রথম আলো

আওয়ামী লীগের নেতা জাহিদুল ইসলাম ওরফে টিপু হত্যাকাণ্ডের ঘটনার অন্যতম পরিকল্পনাকারী ওমর ফারুকসহ (৫২) চারজনকে গ্রেপ্তার করার কথা জানিয়েছে র‍্যাব। আসামিদের চারজনই ২০১৩ সালে হত্যার শিকার যুবলীগ নেতা মিল্কী অনুসারী বলছে র‍্যাব। র‍্যাব বলছে, টিপুকে গুলির পর আসামিরা একজন আরেকজনকে মেসেজ দেন ‘ইট ইজ ডান’।

রমনা ও মিরপুরসহ রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে গতকাল চারজনকে গ্রেপ্তার করে র‍্যাব। গ্রেপ্তার ওমর ফারুক মতিঝিল ১০ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। গ্রেপ্তার বাকি তিনজন হলেন আবু সালেহ শিকদার ওরফে শুটার সালেহ (৩৮), নাসির উদ্দিন ওরফে কিলার নাসির (৩৮) ও মোরশেদুল আলম ওরফে কাইল্যা পলাশ (৫১)।

আজ শনিবার দুপুরে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এসব তথ্য জানান, র‍্যাবের আইন ও গণমাধ্যম পরিচালক খন্দকার আল মঈন। রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র‍্যাবের মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।

আরও পড়ুন

প্রেস ব্রিফিংয়ে বলা হয়, আসামিরা র‍্যাবকে জানিয়েছেন, তাঁরা হত্যাকারী ও সহযোগীকে চেনেন না। হত্যাকারীকে ভাড়া করা থেকে শুরু করে হত্যার যাবতীয় পরিকল্পনার সমন্বয়কারী মূসা। হত্যাকাণ্ডের দিন নাসির ও পলাশ এজিবি কলোনি থেকে টিপুকে অনুসরণ করেছেন। আর ওমর ফারুকও শাহজাহানপুর এলাকায় ছিলেন। টিপুর গতিবিধি তাৎক্ষণিকভাবে মুসাকে জানিয়েছেন তাঁরা। আর মুসা সে আপডেট জানিয়েছেন হত্যাকারীদের। টিপুকে গুলির পর মুসাকে মেসেজ দেয় নাসির-‘ইট ইজ ডান’।

২৪ মার্চ রাত সোয়া ১০টার দিকে রাজধানীর শাহজাহানপুরের আমতলা মসজিদ এলাকায় এলোপাতাড়ি গুলিতে খুন হন মতিঝিল থানা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জাহিদুল ইসলাম ওরফে টিপু (৫৮)। সে সময় সড়কে যানজটে আটকা পড়ে রিকশায় বসে থাকা কলেজছাত্রী সামিয়া আফরিন ওরফে প্রীতি (২২)গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান। একই ঘটনায় গুলিবিদ্ধ হয়েছেন জাহিদুলকে বহন করা মাইক্রোবাসের চালকও।

হত্যাকাণ্ডের উদ্দেশ্য সম্পর্কে খন্দকার আল মঈন বলেন, বছরের পর বছর ধরে টিপুর সঙ্গে গ্রেপ্তার ব্যক্তিসহ মতিঝিলকেন্দ্রিক রাজনীতিবিদ ও আন্ডারওয়ার্ল্ডের অপরাধীদের দ্বন্দ্ব ছিল। মতিঝিল এলাকায় চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, স্কুল-কলেজের ভর্তি–বাণিজ্য ও কাঁচাবাজারসহ বিভিন্ন বাজারের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে এসব দ্বন্দ্ব ছিল।

আরও পড়ুন

র‍্যাবের আইন ও গণমাধ্যম পরিচালক খন্দকার আল মঈন আরও বলেন, ২০১৩ সালে যুবলীগ নেতা মিল্কী হত্যাকাণ্ড হয়। আসামিদের চারজনই মিল্কীর অনুসারী। তাঁরা বিশ্বাস করেন, মিল্কী হত্যাকাণ্ডে জাহিদুল ইসলাম টিপু জড়িত। মিল্কী হত্যার পরে বিচারের দাবিতে টিপুর বিরুদ্ধে পোস্টারিং, মিছিল, মানববন্ধন, আলোচনা সভা করেন গতকাল গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা। পরে আদালতে টিপু অব্যাহতি পাওয়ায় তাঁরা ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন।

আরও পড়ুন

হত্যাকাণ্ডের আরেকটি উদ্দেশ্য সম্পর্কে খন্দকার আল মঈন বলেন, গতকাল গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের দলটি ২০১৬ সালে রিজভী হাসান ওরফে ‘বোঁচা বাবু’কে হত্যা করে। বাবু ছিলেন টিপুর ঘনিষ্ঠ সহযোগী। বাবু হত্যা মামলায় পুলিশ গতকাল গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের মধ্যে থেকে তিনজন ওমর ফারুক, আবু সালেহ শিকদার ও নাসির উদ্দিনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দিয়েছে। সেই মামলাটি বর্তমানে দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের রায়ের অপেক্ষায় আছে। সে মামলায় অভিযোগপত্রে থাকা ব্যক্তিরা মোরশেদুল আলম ওরফে কাইল্যা পলাশকে সুরতহাল সাক্ষী বানায় মামলার গতিপথ পাল্টানোর জন্য।

র‍্যাবের আইন ও গণমাধ্যম পরিচালক আরও বলেন, বোঁচা বাবুর হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় মামলা করেছিলেন তাঁর বাবা আবুল কালাম। কিন্তু মামলার যাবতীয় খরচসহ সবকিছু দেখভাল করছিলেন জাহিদুল ইসলাম টিপু। আসামিরা ৫০ লাখ টাকা দিয়ে মামলার দফারফার জন্য টিপুকে প্রস্তাব দিয়েছিলেন। কিন্তু টিপু রাজি হননি। গতকাল গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তিদের দাবি, টিপুর কারণেই মামলা দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে গেছে এবং বিচার দ্রুত হচ্ছে। আসামিদের আশঙ্কা ছিল, এ মামলায় তাঁদের কারও ফাঁসি হবে। তাই মামলার স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত করতে প্রথমে মামলার বাদী আবুল কালামকে হত্যার পরিকল্পনা করা হয়। পরে আসামিরা ভেবে দেখলেন, বাদীর পরিবর্তে টিপুকে হত্যা করলে মামলার কার্যক্রম ব্যাহত করা যাবে।

আরও পড়ুন

খন্দকার আল মঈন বলেন, তিন থেকে চার মাস আগে টিপু হত্যার পরিকল্পনা করা হয়। এই পরিকল্পনার অংশ হিসেবে বিকাশ প্রকাশ গ্রুপের অন্যতম কিলার সুমন শিকদার মুসার সঙ্গে ১৫ লাখ টাকার চুক্তি করেন ওমর ফারুক। এর মধ্যে প্রথমে মুসাকে ৯ লাখ টাকা দেন ওমর ফারুক। মার্চের ১২ তারিখে টাকা নিয়ে দুবাই চলে যান মুসা।