২৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আয়োজন দেখতে ক্লিক করুন
মূল সাইট দেখতে ক্লিক করুন

জন্মদিনেই না–ফেরার দেশে দুর্জয়

বাসচাপায় নিহত শিক্ষার্থী মাইনুদ্দিন ইসলাম দুর্জয়
ছবি: সংগৃহীত

মাইনুদ্দিন ইসলাম দুর্জয়ের জন্মদিন ছিল সোমবার। এ দিনেই সে পাড়ি জমাল না–ফেরার দেশে। রাত সাড়ে ১০টার দিকে রাজধানীর রামপুরা এলাকায় রাস্তা পার হওয়ার সময় দুটি বাসের প্রতিযোগিতায় চাপা পড়ে নিহত হয় সে।

২০০২ সালের ২৯ নভেম্বর জন্ম মাইনুদ্দিন ইসলামের। এ বছর এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছে। বাবা আবদুর রহমান রামপুরায় একটি চায়ের দোকান চালান। দুই ভাই ও এক বোনের মধ্যে মাইনুদ্দিন সবার ছোট। তাঁদের গ্রামের বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়ায়।

পাঁচটি বাসে আগুন দেয় জনতা, একটিতে ভাঙচুর করা হয়।
ছবি: সংগৃহীত

বাসের চাপায় ছেলে মারা যাওয়ার খবর শুনে কান্নায় ভেঙে পড়েন মাইনুদ্দিনের মা রাবেয়া বেগম। কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, ‘জন্মদিনে আমার ছেলে এভাবে চলে যাবে, মানতে পারছি না।’

ছেলের মৃত্যুর খবর কিছুতেই মানতে পারছেন না বাবা আবদুর রহমানও। বারবার জ্ঞান হারাচ্ছেন। জ্ঞান ফিরলেই বড় ছেলে মনির ও পাশে থাকা আত্মীয়স্বজনের উদ্দেশে বলছেন, ‘তোরা আমার পুতরে ফোন দে। ফোন দিলেই আমার পুত বাসায় চলে আসবে। ভিক্ষা করে হলেও আমার পুতরে কলেজে পড়াব।’

পূর্ব রামপুরার তিতাস রোডের মোল্লাবাড়ির ভাড়া বাসায় আহাজারি করতে করতে আবদুর রহমান বলেন, ‘সন্ধ্যা থেকে ছেলে রাত ৯টা পর্যন্ত চায়ের দোকানে ছিল। পরে আমি দোকানে আসার পর বন্ধুর সঙ্গে দেখা করার কথা বলে বের হয় সে। যাওয়ার সময় ছোলা খাওয়ার কথা বলে ১০ টাকা আবদার করলে আমি টাকা দিই। পরে রাত সাড়ে ১০টার দিকে খবর পাই, আমার ছেলে মারা গেছে।’

নিহতের স্বজন বাদশা মিয়া প্রথম আলোকে বলেন, ‘মাইনের মুঠোফোন থেকে কল আসে। আমি ধরতেই অপর প্রান্ত থেকে একজন বলেন, মাইন বাসের ধাক্কায় মারা গেছে। পরে আমি ফোন করে আমার ভাই সাদ্দামকে (মাইনুদ্দিনের দুলাভাই) জানাই। ঘটনাস্থলে গিয়ে মরদেহ দেখে আমার ভাই অসুস্থ হয়ে পড়েন।’

আরও পড়ুন

রিপন মিয়া নামের এক প্রত্যক্ষদর্শী জানান, রাস্তার পশ্চিম পাশ থেকে পূর্ব পাশে আসার সময় দুর্ঘটনাটি ঘটে। অনাবিল ও রাইদা পরিবহনের দুটি বাস প্রতিযোগিতা করছিল। অনাবিল বাসটি মাইনুদ্দিনকে চাপা দেয়। ঘটনাস্থলেই মারা যান তিনি। পরে বিক্ষুব্ধ জনতা বাসে আগুন দেয় এবং ভাঙচুর করে। এ ঘটনার জেরে দিবাগত রাত দেড়টা পর্যন্ত এই রাস্তায় যানবাহন চলাচল বন্ধ ছিল।

আরও পড়ুন

ফায়ার সার্ভিস সূত্র জানিয়েছে, জনতার দেওয়া আগুনে নয়টি বাস পুড়ে গেছে। আরও তিনটি বাসে ভাঙচুর চালানো হয়েছে। খবর পেয়ে রামপুরা ও হাতিরঝিল থানার পুলিশ সদস্যরা ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করেন। রাত একটার দিকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে।

ঘটনাস্থলে উপস্থিত মতিঝিল বিভাগের উপপুলিশ কমিশনার আবদুল আহাদ সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা বাস ও চালককে আটক করেছি। ঘটনার পর বিক্ষুব্ধ জনতা কয়েকটি বাসে আগুন দিয়েছে। জনতার সঙ্গে মিশে কেউ নাশকতা করেছে কি না, সেটাও তদন্ত করে দেখছি।’

আরও পড়ুন