জন্ম-মৃত্যুনিবন্ধন সংশোধন বন্ধ
ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনসহ সারা দেশে জন্ম ও মৃত্যুনিবন্ধন সংশোধন কার্যক্রম দেড় মাসের বেশি সময় ধরে বন্ধ। এতে পাসপোর্ট ও ড্রাইভিং লাইসেন্স পেতে এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তিসহ অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাজ করতে পারছেন না নাগরিকেরা।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, গত ১৩ ফেব্রুয়ারি থেকে নতুন পদ্ধতিতে (নতুন সার্ভার) জন্ম ও মৃত্যুনিবন্ধন কার্যক্রম পরিচালনার জন্য কাজ করছে স্থানীয় সরকার বিভাগ। তাই এই সংশোধন কার্যক্রম সাময়িকভাবে বন্ধ রাখা হয়েছে।
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) ২০টি অঞ্চল থেকে এই সেবা দেওয়া হয়। কেন্দ্রীয়ভাবে এ সেবা কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ করে স্থানীয় সরকার বিভাগের জন্ম ও মৃত্যুনিবন্ধন রেজিস্ট্রার জেনারেলের কার্যালয়।
জন্ম ও মৃত্যুনিবন্ধন রেজিস্ট্রার জেনারেলের কার্যালয় সূত্র জানায়, জন্ম ও মৃত্যুনিবন্ধন আইন অনুযায়ী দেশে ১৬টি সেবা পেতে জন্মসনদের দরকার হয়। এর মধ্যে পাসপোর্ট পেতে, বিয়ে নিবন্ধনে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তিতে, সরকারি-বেসরকারি বা স্বায়ত্তশাসিত সংস্থায় নিয়োগ পেতে, ব্যাংক হিসাব খুলতে, ভোটার হতে, মোটর যানের নিবন্ধন ও ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য এ সনদ বেশি দরকার হয়। আগে রেজিস্ট্রার জেনারেল কার্যালয়ের একটি সার্ভার থেকে সারা দেশে জন্মনিবন্ধন দেওয়া হতো। কিন্তু এটিতে কিছু দুর্বলতা ছিল। এতে একজন ব্যক্তি একাধিক জায়গা থেকে জন্মনিবন্ধন সনদ নিতে পারতেন। এখন নতুন সার্ভারে বাবা-মায়ের জাতীয় পরিচয়পত্রের নম্বরসহ সব ধরনের তথ্য থাকছে। এতে চাইলেই কেউ একাধিক সনদ নেওয়ার সুযোগ পাবে না। এগুলো নতুন সার্ভারে যুক্ত করতেই সময় বেশি লাগছে।
গতকাল বুধবার ছেলের জন্মসনদ সংশোধন করতে ডিএসসিসির নগর ভবনে অঞ্চল-১–এর কার্যালয়ের জন্ম ও মৃত্যুনিবন্ধন শাখায় এসেছিলেন সিদ্ধেশ্বরী রোডের বাসিন্দা আশরাফ হাওলাদার। কিন্তু তাঁর আবেদন জমা রাখেননি শাখার কর্মচারীরা।
আশরাফ হাওলাদার বলেন, গত ২০ ফেব্রুয়ারি এই শাখা থেকে তাঁর চার বছরের ছেলে নাঈম হাওলাদারের জন্মনিবন্ধন করা হয়েছিল। কিন্তু জন্মসনদে ভুলে নাঈম হালাদার লেখা হয়েছে। এই সনদ সংশোধন করতে এই দিনই আবার আবেদন করেছেন। কিন্তু সার্ভার নষ্ট বলে তা জমা রাখা হয়নি। এখনো জমা নেওয়া হচ্ছে না।
ডিএসসিসির জন্ম-মৃত্যু রেজিস্ট্রার কর্মকর্তা ফখরুদ্দীন মোবারক প্রথম আলোকে বলেন, অনেক সময় অনিচ্ছাকৃতভাবে জন্মনিবন্ধনে ভুল হয়। তাই সংশোধনের দরকার হয়। তবে সংশোধনপ্রক্রিয়ার জন্য যে নতুন সার্ভার হওয়ার কথা, তা শেষ পর্যায়ে রয়েছে। এ নিয়ে আগামী রোববার রেজিস্ট্রার জেনারেলের কার্যালয়ে একটি সভা হওয়ার কথা আছে।
নবম শ্রেণিতে পড়ুয়া ছেলের জন্মনিবন্ধনে জন্মতারিখ সংশোধন করতে ডিএনসিসির অঞ্চল-৫–এর কার্যালয়ের জন্ম-মৃত্যু শাখায় এক মাস ধরে ঘোরাঘুরি করছেন শফিকুর রহমান। কিন্তু এর প্রতিকার মিলছে না। শফিকুর রহমান বলেন, বছরখানেক আগে এই শাখা থেকেই তিনি জন্মনিবন্ধন করিয়েছিলেন। কিন্তু ছেলের প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষার সনদের জন্মতারিখের সঙ্গে জন্মনিবন্ধনের তারিখ মিলছে না। তিনি বলেন, এই সেবা কার্যক্রম বন্ধের আগে কোনো ধরনের ঘোষণা দেয়নি কর্তৃপক্ষ। আর নতুন পদ্ধতিতে জন্ম-মৃত্যু সংশোধন করার জন্য পুরো সেবা কার্যক্রম বন্ধ করার কোনো মানে হয় না। নাগরিক ভোগান্তি কমাতে অবিলম্বে এই সেবা চালু করতে হবে।
অঞ্চল-৫–এর জন্ম-মৃত্যুনিবন্ধন সহকারী আবদুল মান্নান বলেন, জন্মনিবন্ধন সংশোধনের ৫০ থেকে ৬০টি আবেদন জমা পড়ে আছে। কিন্তু সার্ভার সমস্যা থাকায় তা সংশোধন করা যাচ্ছে না। তাই নতুন আবেদন জমা নেওয়া হচ্ছে না।
এ বিষয়ে জানতে গতকাল রেজিস্ট্রার জেনারেল মানিক লাল বণিকের মুঠোফোনে একাধিকবার কল দিলেও তিনি ধরেননি। তবে গত ১৩ ফেব্রুয়ারি রেজিস্ট্রার জেনারেল কার্যালয়ের ওয়েবসাইটে দেওয়া বিজ্ঞপ্তিতে সারা দেশে জন্ম ও মৃত্যুসনদ সংশোধন সাময়িকভাবে বন্ধ রাখায় দুঃখ প্রকাশ করা হয়েছে। কিন্তু কবে নাগাদ এ সেবা চালু করা হবে, তা বলা হয়নি।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘নতুন সিস্টেমে জন্ম ও মৃত্যুনিবন্ধনের তথ্যাদি স্থানান্তরের জন্য সব ধরনের তথ্য সংশোধন সাময়িকভাবে বন্ধ থাকবে। জনগণের সাময়িক অসুবিধার জন্য আমরা আন্তরিকভাবে দুঃখিত। নতুন জন্ম ও মৃত্যুনিবন্ধনের কার্যক্রম আগের মতোই চলমান থাকবে।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জন্ম ও মৃত্যুনিবন্ধন রেজিস্ট্রার জেনারেল কার্যালয়ের একজন কর্মকর্তা বলেন, আগের সার্ভার থেকে নতুন এই সার্ভারে প্রায় ১৭ কোটি (সারা দেশ) তথ্য স্থানান্তর করা হচ্ছে। এ স্থানান্তরে কিছু কারিগরি জটিলতাও তৈরি হয়েছে। এতে স্থানান্তর কার্যক্রম দেরি হচ্ছে। তবে স্থানান্তরপ্রক্রিয়া এখন শেষ পর্যায়ে। শিগগির এই সেবা কার্যক্রম শুরু করা হবে।