ছোটাছুটিতে ব্যস্ত সুমন্ত, শ্রাবণী, দোলন আর ঝিলিক
আনন্দের যেন সীমা নেই ওদের। কারণ, কোলজুড়ে এসেছে বেশ কটি ফুটফুটে সন্তান। ওদের নামও বৈচিত্র্যময়—সুমন্ত, শ্রাবণী, দোলন আর ঝিলিক। সদ্য জন্ম নেওয়া ওরা। তাই বলে সুমন্ত, শ্রাবণী, দোলন আর ঝিলিকেরা চুপটি করে বসে নেই। মায়ের আদরে-আহ্লাদে খুশিতে আটখানা। মায়েরা যেখানে যাচ্ছে, সেখানেই ছুটে চলছে ওরা। আবার সন্তানেরা যেখানে যাচ্ছে, মায়েরাও ওদের আগলে রাখছে।
মায়ের সঙ্গে নবজাতকদের ছোটাছুটির অপূর্ব দৃশ্য দেখা যাচ্ছে মিরপুরে বাংলাদেশ জাতীয় চিড়িয়াখানায়। চিড়িয়াখানার প্রাণিকুলে তাই আনন্দের ছড়াছড়ি। কারণ, একটি বা দুটি নয়, গেল ছয় দিনে চিড়িয়াখানায় জলহস্তী, জিরাফ, অ্যারাবিয়ান হর্স আর জেব্রার পরিবারে এসেছে সুমন্ত, শ্রাবণী, দোলন আর ঝিলিক। এদের মধ্যে আজ বৃহস্পতিবার সকাল আটটায় জলহস্তী আগন্তুর কোলজুড়ে এসেছে ফুটফুটে বাচ্চা। জন্মের পরপরই শাবকের নাম দেওয়া হয়েছে সুমন্ত।
অন্যদিকে ২০ আগস্ট সকালে অ্যারাবিয়ান হর্স দুলকির কোলে আসে দোলন। আগের দিন ১৯ আগস্ট রাতে চাঁদনী নামে জেব্রার ঘরে জন্ম নেয় একটি মেয়ে। নাম তার ঝিলিক। এর দুদিন আগে ১৭ আগস্ট প্রিয়া নামে জিরাফটি জন্ম দেয় একটি মেয়েসন্তান। চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ জিরাফ শাবকের নাম দিয়েছে শ্রাবণী। ১৫ মাস গর্ভে ধারণ করার পর প্রিয়া জন্ম দিয়েছে শ্রাবণীকে।
এই চার প্রজাতির প্রাণীর মধ্যে সংখ্যা বেশি এখন জলহস্তী পরিবারে। সুমন্তকে নিয়ে মিরপুর চিড়িয়াখানায় জলহস্তীর সংখ্যা এখন ১৪টি। এদের মধ্যে পুরুষ ৯টি এবং মেয়ে জলহস্তী ৫টি।
সুমন্ত সবার ছোট হলেও ভীষণ চঞ্চল স্বভাবের। জলহস্তীর খাঁচার ভেতর জলাধারে খেলা করছেই তো করছে। একটুও বিশ্রাম নেই। তাই সন্তানকে রেখে সুমন্তের মা আগন্তু পানি থেকে উঠতে পারছে না। আর মায়ের ছায়ায় থেকে সুমন্তও দুধ পান করছে।
জলহস্তীদের তত্ত্বাবধায়ক নূরে আলম প্রথম আলোকে বলেন, জলহস্তীর বিশাল পরিবার মিরপুর চিড়িয়াখানা। ডায়ানা আর টিটু ৩০ বছর আগে আফ্রিকা থেকে বাংলাদেশে আসে। ডায়ানা-টিটুর মেয়ে আগন্তু। আগন্তুর বাবা টিটুর বর্তমান ঠিকানা গাজীপুর বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কে। অন্যদিকে আগন্তুর দুরন্ত নামে আরেকটি ছেলে রয়েছে। আর কদিন পর ডায়ানার কোলে আসতে পারে আরেকটি সন্তান।
নূরে আলম বলেন, সুমন্ত ছেলে না মেয়ে, সেটি এখনই বোঝা যাচ্ছে না। আরেকটু বড় হলে সন্তানকে নিয়ে আগন্তু ডাঙায় উঠে আসবে। তখনই জানা যাবে সুমন্তর সম্পূর্ণ পরিচয়। এখন সুমন্ত মায়ের দুধ পান করবে। টানা ছয় মাস মায়ের দুধ ওর একমাত্র খাবার। ছয় মাস পর অল্পস্বল্প করে ঘাস খেতে দেওয়া হবে। তবে এক বছর বয়স পর্যন্ত জলহস্তীর বাচ্চারা মায়ের দুধ পান করে থাকে।
অন্য প্রাণীদের বাচ্চাদের এখন একমাত্র খাদ্য মায়ের দুধ। মায়ের দুধ ছাড়া অন্য কোনো খাবারও দেওয়া হবে না বলে জানান বাংলাদেশ জাতীয় চিড়িয়াখানার কিউরেটর এস এম নজরুল ইসলাম। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, প্রাণীরা সহজে ওদের বাচ্চাদের একা ছাড়ে না। আবার একাকী থাকলেও ওদের সঙ্গীরা নবজাতকের ওপর চড়াও হয়। তবে মা এবং নবজাতককে আলাদা করে রাখা হবে। এ ছাড়া জলহস্তী, জিরাফ, জেব্রা ও অ্যারাবিয়ান হর্সের পরিবারের যে চারটি বাচ্চা জন্ম হয়েছে, ওদের একমাত্র খাবার এখন মায়ের দুধ।
নতুন বাচ্চা জন্ম নেওয়ায় মিরপুরে চিড়িয়াখানায় জিরাফের সংখ্যা আটটি। এর মধ্যে ছয়টি পুরুষ ও দুটি মেয়ে। পাঁচটি জেব্রার মধ্যে চারটি মেয়ে এবং সাতটি অ্যারাবিয়ান হর্সের মধ্যে দুটি পুরুষ রয়েছে।