ছিলেন চালকের সহকারী, এখন তাঁর ঢাকায় বাড়ি-গাড়ি
নিজের পরিচয় দেন মানবাধিকার সংস্থার চেয়ারম্যান। পাশাপাশি হোমল্যান্ড সিকিউরিটি অ্যান্ড গার্ড সার্ভিস লিমিটেডসহ চারটি প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবেও পরিচয় দেন তিনি। গুলশানের শুটিং ক্লাবের আজীবন সদস্য বলেও দাবি তাঁর। ব্যবহার করেন দুটি বিলাসবহুল গাড়ি। নিজের নিরাপত্তার জন্য কোমরে সব সময় একটি বিদেশি পিস্তল রাখেন। ঘরে সাজিয়ে রেখেছেন তিনটি বিদেশি পিস্তল, একটি শটগান, একটি এয়ারগান ও একটি রাইফেল।
প্রভাবশালী ব্যক্তি হিসেবে নিজেকে উপস্থাপন করতেই শাহীরুল ইসলাম সিকদার (৪৮) নামের এই ব্যক্তির এত আয়োজন। নিজেকে এভাবে জাহির করে তিনি চাকরির প্রলোভন, প্লট ও ফ্ল্যাট বিক্রির নাম করে বিভিন্ন ব্যক্তিকে ফাঁদে ফেলে প্রায় ৫০ কোটি টাকার মালিক বনে গেছেন। অথচ তিনি একসময় বাসচালকের সহকারী ছিলেন। পরে তিনি নিরাপত্তাকর্মী সরবরাহ করে, এমন একটি প্রতিষ্ঠানের দালালি করেন। এই দালালি করতে গিয়েই তিনি প্রতারণার কৌশল শেখেন। তারপর ধীরে ধীরে তিনি বড় প্রতারক হয়ে ওঠেন।
শাহীরুল হককে গ্রেপ্তারের পর র্যাব-৪-এর অধিনায়ক অতিরিক্ত উপমহাপরিদর্শক মোজাম্মেল হক এসব তথ্য জানিয়েছেন। গতকাল শুক্রবার রাজধানীর রামপুরার বনশ্রী থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। আজ শনিবার বিকেলে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র্যাবের মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে র্যাব-৪-এর অধিনায়ক অতিরিক্ত উপমহাপরিদর্শক মোজাম্মেল হক বলেন, শাহীরুল প্রতারণাকে শিল্পে রূপ দিয়েছেন। তিনি যেসব প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক, সেগুলোর কোনোটিরই অস্তিত্ব নেই। তবে তাঁর বাসা থেকে উদ্ধার হওয়া তিনটি বিদেশি পিস্তল, একটি শটগান, একটি এয়ারগান ও একটি রাইফেল উদ্ধার করা হয়েছে। এগুলো সবই আসল। তিনি বলেছেন, এগুলো তাঁর বৈধ অস্ত্র। তবে এ-সংক্রান্ত কোনো কাগজপত্র তিনি দেখাতে পারেননি। এ বিষয়ে অনুসন্ধান করা হচ্ছে।
শাহীরুল ইসলামের প্রতারণার কৌশল সম্পর্কে র্যাব কর্মকর্তা মোজাম্মেল বলেন, তিনি কখনো কখনো সরকারি কর্মকর্তা হিসেবেও নিজের পরিচয় দিতেন। সরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি দেওয়ার নাম করে বিভিন্ন ব্যক্তির কাছ থেকে ৫-১০ লাখ টাকা নিতেন। টাকা ফেরত চাইলে হুমকি দেওয়া হতো। এমনকি অস্ত্র দেখিয়েও ভয় দেখানো হতো। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে নিরাপত্তাকর্মী নিয়োগ দিতে চটকদার বিজ্ঞাপন দিতেন তিনি। এই ফাঁদে পা দিলে আবেদনকারীদের কাছ থেকে ১৫-২৫ হাজার টাকা করে জামানত নিতেন। এরপর তিনি আর চাকরি দিতেন না।
নিজেকে প্রভাবশালী হিসেবে উপস্থাপন করতে মানবাধিকার সংস্থার চেয়ারম্যান হিসেবে পরিচয় দেওয়া শুরু করেন শাহীরুল ইসলাম। ক্ষমতা প্রদর্শনের জন্য তিনি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের সঙ্গে ছবি তুলে সেগুলো প্রদর্শন করতেন। এমনকি বিভিন্ন সরকারি কর্মকর্তার নাম ব্যবহার করে প্রতারণা করতেন। দেশের বিভিন্ন এলাকার বেকারদের নিরাপত্তাকর্মী, সরকারি প্রতিষ্ঠানের গাড়িচালক, কম্পিউটার অপারেটর, অফিস সহকারীসহ বিভিন্ন পদে চাকরি দেওয়ার নাম করে অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছিলেন।
শাহীরুল ইসলামের উত্থান সম্পর্কে র্যাব-৪-এর অধিনায়ক মোজাম্মেল হক বলেন, শাহীরুল উচ্চমাধ্যমিক পাস। ১৯৯৬ সাল থেকে ২০০৩ সাল পর্যন্ত তিনি শৌখিন পরিবহনে চালকের সহকারী হিসেবে কাজ করেছেন। ২০০৩ সালে তিনি একটি প্রতিষ্ঠানে নিরাপত্তাকর্মী সরবরাহের কাজ শুরু করেন। তারপর ধীরে ধীরে হোমল্যান্ড সিকিউরিটি সার্ভিস নামে একটি প্রতিষ্ঠান খুলে শুরু করেন প্রতারণা। তিনি হাজার হাজার মানুষের কাছ থেকে অর্থ হাতিয়ে নিয়েছেন। পরে সরকারি চাকরি দেওয়ার কথা বলে অর্থ হাতিয়ে নেন। ঢাকায় তাঁর দুটি বাড়ি, দুটি ফ্ল্যাট রয়েছে। দুটি বিলাসবহুল গাড়িও ব্যবহার করেন তিনি।