চেয়ার নিয়ে টিকিটের লাইনে এসেছেন তিনি
স্টেশনে টিকিটপ্রত্যাশী ব্যক্তিদের অনেকেই এসেছেন আজ শনিবার সাহ্রির পর। কেউ কেউ এসেছেন গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যার পর। তেমনই একজন ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থী সকাল রায়। তাঁর সঙ্গে একটি প্লাস্টিকের চেয়ার। অন্যরা যখন লাইনে দাঁড়িয়ে, তিনি তখন একটি চেয়ারে বসে আছেন।
সকাল প্রথম আলোকে বলেন, ‘গতকাল সন্ধ্যায় ইফতারের পরপরই চলে এসেছি। নীলসাগর এক্সপ্রেসের চারটি টিকিট পেয়েছি। টিকিট পেয়ে খুব ভালো লাগছে। পান্থপথে বাসা আমাদের। প্রতিবছর আমিই টিকিট কাটি। অনেকক্ষণ বসে থাকা লাগবে, এবার তাই বাসা থেকে চেয়ার নিয়ে এসেছি। বাসে করে এনেছি।’
চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গায় যাবেন মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন। সাহ্রি খেয়ে আজ ভোররাত চারটার দিকে তিনি কমলাপুর রেলস্টেশনে চলে আসেন। জসিম উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, ‘প্রতিবার আমিই টিকিট কাটি। টিকিট কাটতে এমনি কোনো সমস্যা হয়নি। এবার টিকিট কাটতে এনআইডি কার্ড লাগছে।’ তিনি আরও বলেন, প্রথমে বলা হয়েছিল, এনআইডি যাঁর যাঁর, টিকিট তাঁরা কিনতে পারবেন। কিন্তু এটাও তো সমস্যা আছে, পরিবারের সবার এনআইডি তো নাও থাকতে পারে। তারপর পরে বলা হলো, একজনের একটি এনআইডি দিয়ে সর্বোচ্চ চারজনের টিকিট কিনতে পারবেন। এভাবে বিভ্রান্তি তৈরি না করলেও পারত।
জসিম উদ্দিন বলেন, ‘সুন্দরবন এক্সপ্রেসের তিনটা টিকিট কাটলাম। এতক্ষণ পর টিকিট হাতে পেয়ে ভালো লাগছে। এমনিতে কোনো অসুবিধা নেই। কিন্তু অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকা লাগল। অনলাইনে তো দ্রুত শেষ হয়, এ জন্য স্টেশনে কাটতে এসেছি।’
এমনই নানা অভিযোগ আর অপেক্ষার মধ্যে দিয়ে আজ সকাল আটটা থেকে ট্রেনের অগ্রিম টিকিট বিক্রি শুরু হয়েছে। এবার ঢাকার কমলাপুর স্টেশনসহ পাঁচটি স্থানে অগ্রিম টিকিট বিক্রি করা হচ্ছে।
সকাল সোয়া আটটা থেকে কমলাপুর রেলস্টেশনে টিকিট বিক্রি শুরু হয়। তখন কাউন্টার খুলতেই অপেক্ষমাণ টিকিটপ্রত্যাশীরা উল্লাস করে ওঠেন। আজ প্রথম দিন ২৭ এপ্রিল যাত্রার টিকিট বিক্রি হয়। সকাল আটটায় শুরু হয়ে কাউন্টারে বিকেল চারটা পর্যন্ত টিকিট পাওয়া যাবে।
উপচে পড়া ভিড়ে দীর্ঘ অপেক্ষার পর টিকিট পেয়ে অধিকাংশের মুখে ছিল হাসি। তবে কয়েকটি পথে চাহিদা অনুযায়ী ট্রেনের শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত (এসি) কোচের টিকিট পাননি বলে অভিযোগ করেন টিকিটপ্রত্যাশীরা। টিকিট বিক্রিতে ধীরগতির জন্য কিছুক্ষণ পরপর টিকিটের সারিতে হইচই ও হর্ষধ্বনি শোনা যাচ্ছিল। যেমন বেলা সাড়ে ১১টার দিকে কুড়িগ্রাম এক্সপ্রেসের টিকিট শেষ হয়ে যায়। তখন সারিতে থাকা অপেক্ষমাণ লোকজন টিকিটের জন্য চিৎকার শুরু করেন।
ঈদযাত্রা শেষে ট্রেনের ফিরতি টিকিট বিক্রি শুরু হবে আগামী ১ মে থেকে। রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, আজ কমলাপুর থেকে ২৭ হাজার ৮৫৩টি টিকিট বিক্রি হবে। এর মধ্যে অনলাইনে বিক্রি হবে ১২ হাজার ১৫৭টি এবং কাউন্টারে বিক্রি হবে ১৫ হাজার ৬৯৬টি। কমলাপুর স্টেশনের ২৩টি কাউন্টারে টিকিট বিক্রি হচ্ছে।