চা বিক্রেতা আরমানের একার লড়াই
রাজধানীর পুরানা পল্টনের চা বিক্রেতা আরমান হোসেন দুদিন ধরে চা বিক্রি করছেন না। গতকাল বুধবার সকাল থেকে তিনি জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনের ফুটপাতে অনশন করছেন। ২৬ বছর বয়সী আরমানের পেছনে টাঙানো একটি ব্যানার। ব্যানারে বড় বড় অক্ষরে লেখা ‘প্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ বাণিজ্যমন্ত্রীর অপসারণের দাবিতে অনশন’।
দুই সন্তানের বাবা আরমান হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘প্রতিদিনের ভোগান্তি সহ্য করতে না পেরেই এখানে অনশনে বসেছি।’ দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে জীবনযাপনে যে ভারসাম্যহীনতা তৈরি হচ্ছে, তা অমানবিক বলে জানান তিনি।
চা বিক্রেতা এই যুবক আরও বলেন, ‘শুধু পেঁয়াজের দাম বাড়েনি; অব্যবস্থাপনার কারণে অন্যান্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের দামও ঊর্ধ্বগতি। ভোগ্যপণ্য এখন গণভোগান্তিতে পরিণত হয়েছে। মানুষের ক্রয়ক্ষমতা নাকি বৃদ্ধি পেয়েছে, কিন্তু যারা আসলে ভুক্তভোগী, তারাই জানে আসলে তা হয়েছে কি না।’
স্ত্রী, সন্তান ও পরিবারের অন্যদের নিয়ে গাজীপুরের চৌরাস্তা এলাকায় একটি ভাড়া বাসায় থাকেন আরমান। তাঁর ভাষ্যমতে, তিনি গাজীপুর থেকে প্রতিদিন পুরানা পল্টনে আসেন। যাতায়াত ভাড়াসহ প্রতিদিন তাঁর খরচ ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা। কিন্তু তাঁর দৈনিক আয় ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা। তাঁর প্রশ্ন, ‘এই আয় দিয়ে আমি ও আমার পরিবার কীভাবে বাঁচাব?’
আরমানের জন্ম খুলনায়। সাত ভাইবোনের মধ্যে তিনি তৃতীয়। ২০০৮ সালে গাজীপুর পাবলিক স্কুল থেকে এসএসসি পাস করেছেন তিনি। আর্থিক অসচ্ছলতার কারণে আর পড়াশোনা চালাতে পারেননি। চার বছর আগে পুরানা পল্টনের সড়কের পাশে একটি চায়ের দোকান দেন। তিনি বলেন, ‘সংসারের মৌলিক চাহিদা পূরণে হিমশিম খেতে হচ্ছে। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি আমাকে নিঃস্ব করে দিচ্ছে।’
আরমান বলেন, ‘পেঁয়াজের দাম কবে কমবে, সে বিষয়ে নাকি বাণিজ্যমন্ত্রীর ধারণা নেই, তিনি জানেন না। একজন দায়িত্বপ্রাপ্ত লোক যদি এ রকম বক্তব্য দিতে পারেন, তাহলে আমরা তাঁর পদত্যাগ দাবি করতেই পারি। আমরা দেশের নাগরিক, কথা বলার সাংবিধানিক অধিকার আমাদের রয়েছে।’
গতকাল রাতে পুলিশের কয়েকজন সদস্য তাঁকে সেখানে থেকে উঠে যেতে বলেছেন। আজ বৃহস্পতিবারও তাঁকে চলে যেতে বলা হয়েছে, না গেলে চায়ের দোকান বন্ধ করে দেওয়ার হুমকি দেওয়া হয়েছে বলে দাবি করেন আরমান হোসেন।