‘গণরুমকে জাদুঘরে পাঠানোর মতো’ হল নেতৃত্ব চায় ঢাবি ছাত্রলীগ

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৮টি হল শাখা ছাত্রলীগের সমন্বিত সম্মেলন উপলক্ষে বিশেষ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। মধুর ক্যানটিন, ঢাবি, ২৯ জানুয়ারি
ছবি: প্রথম আলো

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৮টি হল শাখা ছাত্রলীগের সমন্বিত সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে আগামীকাল রোববার। এ সম্মেলন সামনে রেখে এক বিশেষ সংবাদ সম্মেলনে ছাত্রলীগের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি সনজিত চন্দ্র দাস বলেছেন, হলগুলোতে গণরুমকে জাদুঘরে পাঠানোর মতো নেতৃত্ব চান তাঁরা। একই সঙ্গে সেই নেতৃত্বকে হতে হবে ‘দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সব ধরনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় প্রস্তুত’।

আজ শনিবার সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যানটিনে ১৮টি হল শাখা ছাত্রলীগের সমন্বিত সম্মেলনে এই বিশেষ সংবাদ সম্মেলন হয়৷ আগামীকাল বেলা ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রের (টিএসসি) মাঠে হল সম্মেলনের মূল আনুষ্ঠানিকতা শুরু হবে। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে যোগ দেবেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পড়ে শোনান বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি সনজিত চন্দ্র দাস। তিনি বলেন, ‘সমন্বিত হল সম্মেলনের আয়োজনকে সফল করার লক্ষ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগ ইতিমধ্যে ১৮টি হলের উদ্যোগে আয়োজিত কর্মী সমাবেশে উপস্থিত হয়ে নেতা-কর্মীদের বিভিন্ন বক্তব্য, দাবিদাওয়া ও পরামর্শ শুনেছি। সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে চেষ্টাও চালিয়ে যাচ্ছি। হল সম্মেলন উপলক্ষে ১৮টি হলের বর্তমান নেতৃত্বকে যুক্ত করে একটি আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়েছে। ইতিমধ্যে একটি বিশেষ বর্ধিত সভা ও একটি প্রস্তুতি সভার আয়োজনও করা হয়েছে। সম্মেলন সফল করতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের নেতাদের সমন্বয়ে বিভিন্ন উপকমিটি গঠন করা হয়েছে।

লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, ‘এবারের হল শাখা ছাত্রলীগের সম্মেলনটি এমন একটি সময়ে হচ্ছে, যখন একদিকে বৈশ্বিক মহামারি করোনার তৃতীয় ঢেউ শুরু হতে যাচ্ছে আর অন্যদিকে সব প্রতিকূলতার মধ্যেও দেশরত্ন শেখ হাসিনা তাঁর উন্নয়নের অপ্রতিরোধ্য অগ্রযাত্রাকে আগের চেয়ে আরও বেশি বেগে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগ দেশরত্নের নেতৃত্বে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের বাংলাদেশ বিনির্মাণের অবিরত সংগ্রামে দুঃসাহসী যোদ্ধা হিসেবে সব সময়ের মতোই পাশে থাকার জন্য উল্লিখিত দুই বাস্তবতাকে বিবেচনায় রেখেই এই হল সম্মেলন সফল করার চেষ্টা করছে। হল সম্মেলন আয়োজনের জন্য শুরু থেকেই আমাদের আন্তরিকতা ও সদিচ্ছা থাকা সত্ত্বেও বৈশ্বিক মহামারি করোনার পরিপ্রেক্ষিতে উদ্ভূত নানাবিধ বাস্তবতায় সম্মেলন আয়োজনে কিছুটা বিলম্ব হয়েছে।’

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে সনজিত চন্দ্র দাস বলেন, ‘হলগুলোতে থাকা গণরুমকে জাদুঘরে পাঠানো ও শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়ে দায়বদ্ধ কর্মীবান্ধব নেতৃত্ব আমরা হলগুলোতে নিয়ে আসতে চাই। যাঁদের বিরুদ্ধে কোনো ধরনের অভিযোগ বা মামলা রয়েছে, যাঁরা কোনো ধরনের অনৈতিক কার্যক্রমের সঙ্গে যুক্ত, যাঁরা সংগঠনের শৃঙ্খলাবিরোধী কর্মকাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত, তাঁরা হল নেতৃত্বে আসতে পারবেন না। সৎ, মেধাবী, দেশ ও দেশরত্ন শেখ হাসিনার প্রশ্নে আপসহীন, আগামীর জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সব ধরনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় যাঁরা প্রস্তুত, হলগুলোতে সেই ধরনের নেতৃত্বে আসবে। হল সম্মেলনের পর সর্বোচ্চ সাত দিনের মধ্যে হল কমিটি ঘোষণা করা হবে।’

নেতৃত্ব নির্বাচনের প্রক্রিয়া কী হবে—এমন প্রশ্নের জবাবে সাদ্দাম হোসেন বলেন, ‘ইতিমধ্যে আমরা ১৮টি হলে কর্মী সমাবেশ করেছি। সেখানে সাধারণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে শীর্ষ পদপ্রত্যাশীদের সাংগঠনিক অবস্থান নিয়ে আমরা জরিপ করেছি। পদপ্রত্যাশীদের জীবনবৃত্তান্ত আগেই সংগ্রহ করা হয়েছে, অনেকবার তা যাচাই-বাছাইও করা হয়েছে। হল সম্মেলনের দ্বিতীয় অধিবেশনে সাংগঠনিক ফোরামে নেতৃত্ব নির্বাচনের প্রক্রিয়া নিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। হলগুলোতে আমরা দক্ষ ছাত্রনেতা চাই। এমন নেতৃত্ব চাই, যাঁরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী শিক্ষার্থীদের নেতৃত্ব দিতে সক্ষম, যাঁরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে একটি গবেষণা বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিণত করার ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখবেন এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক পরিবেশ সমুন্নত রাখতে ভূমিকা রাখবেন।

রাজনৈতিক ক্যারিয়ারের চেয়ে একাডেমিক ক্যারিয়ারকে বেশি গুরুত্ব দিয়ে যাঁরা রাজনীতি বিনির্মাণ করতে পারবেন, তাঁদের আমরা হল নেতৃত্বে নিয়ে আসতে চাই।’
২০১৮ সালের ৩১ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পান সনজিত ও সাদ্দাম। তাঁদের এক বছরের গঠনতান্ত্রিক মেয়াদ ২০১৯ সালের জুলাইয়ে শেষ হয়। দায়িত্বে আসার শুরু থেকেই ‘দ্রুততম সময়ের মধ্যে’ হল সম্মেলন আয়োজনের প্রতিশ্রুতি দিয়ে এলেও সেই কথা রাখতে সফল হননি সনজিত-সাদ্দাম। এর মধ্যে করোনা পরিস্থিতির কারণে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বছরখানেক বন্ধ ছিল ছাত্রলীগের স্বাভাবিক সাংগঠনিক কার্যক্রম।

তবে হল কমিটি বিলম্বিত হওয়ার ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগেরও দায় রয়েছে। কারণ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হল কমিটিতে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের দুই শীর্ষ নেতার কিছু অনুসারী বিভিন্ন হলের শীর্ষ নেতৃত্বে আসেন। এ ছাড়া কেন্দ্রীয় দুই শীর্ষ নেতার অনুমোদন নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হল কমিটি ঘোষণার অলিখিত রীতি রয়েছে। এ কারণে হল কমিটি হবে কি না, তা কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের শীর্ষ নেতাদের ইচ্ছা-অনিচ্ছার ওপরও নির্ভর করে।