২২ জুন। মোবাইলে মেসেজ এল, আমাদের তিনজনের মধ্যে একজনের করোনা পজিটিভ আর দুজনার নেগেটিভ। অথচ আমাদের নেগেটিভ দুজনারই কষ্ট বেশি। এই রিপোর্টে আমরা বিস্মিত হলাম।
আপনাদের বলে রাখা দরকার, আমরা দুই জায়গায় করোনার টেস্ট দিয়েছিলাম। ব্যবধান আধা ঘণ্টা। দুই জায়গায় দেওয়ার কারণ রিপোর্ট নিয়ে সমালোচনা ও ভুল রিপোর্ট।
এক জায়গার রিপোর্টে এল তিনজনের মধ্যে একজনের করোনা পজিটিভ। আরেক জায়গায় এল দুজনার করোনা পজিটিভ এবং একজনের নেগেটিভ। যার এক জায়গায় পজিটিভ ছিল, তার এখানে নেগেটিভ। আর যে দুজনার ওখানে নেগেটিভ ছিল, তাদের এখানে করোনা পজিটিভ। কতটা দুঃখজনক সত্য নিয়ে আমরা বাঁচি প্রতিদিন। বাঁচি চিকিৎসাব্যবস্থার ভুল সমীকরণে!
আমরা দুই জায়গায় টেস্ট করাতে পেরেছি আল্লাহর রহমতে। কিন্তু অনেকে তো একবার টেস্ট করাতেই পারে না। কত কষ্ট করে টাকা জোগাড় করে টেস্ট করায়। তাদের এ রকম উল্টাপাল্টা রিপোর্টে কী নিদারুণ অবস্থা হয় ভাবুন!
আমার জ্বর ও কষ্ট, চিকিৎসা শুরু
১০ জুন ভোরবেলায় ঘুম ভাঙল খুব জ্বরের কষ্ট ও শরীরব্যথা নিয়ে। প্রথমে কিছু বুঝতে পারছিলাম না। আমি খুব পজিটিভ ও শক্ত মানসিকতার মানুষ। তবু বেশি খারাপ লাগছিল। তাই জ্বর মেপে দেখি ১০১ মাত্রার কিছু বেশি জ্বর। নাপা এক্সটেইন খেলাম কিন্তু জ্বর পুরোপুরি নামছিল না। ওই নিয়েই রান্নাঘরের কাজ, বাড়ির কাজ করছি। দুপুরে আবার ওই পেইন কিলার খেলাম। এভাবে দুদিন চলার পর জ্বর কমে গেল। কিন্তু শরীর খারাপ লাগছিল। মাথায় কেমন একধরনের কষ্ট হচ্ছিল। শরীর ভীষণ দুর্বল লাগছিল। আমি ১০ জুন থেকেই ঘরে বানানো টোটকা নিয়মিত খেয়ে যাচ্ছিলাম। চার দিন পরে ভীষণ গলাব্যথা। গারগল শুরু করলাম গরম পানি ও লবণ দিয়ে। সঙ্গে মেডিসিন খাই পেইন কিলার।
আলহামদুলিল্লাহ দুদিনে গলাব্যথা কমে গেল। ভাবলাম ঠান্ডা জ্বর। এভাবে ১৭ জুন দুপুরের পর হঠাৎ আমার বুকের মাঝখান থেকে শ্বাস নিতে গিয়ে শ্বাস কেমন ভেঙে যাচ্ছিল। শ্বাস নিতে কিছুটা কষ্ট হচ্ছিল। কাশি হতে শুরু করল। কিছুটা ভয়ও পেলাম। সঙ্গে সঙ্গে পানি ফুটিয়ে মেনথল দিয়ে ভাপ নিলাম। নাক দিয়ে এবং মুখ দিয়ে বারবার ভাপ নিলাম।
একবার মনে হচ্ছিল আমার করোনা হলো কি না। কিন্তু সাহসে ভর করে বেশ কয়েকবার ভাপ নিয়ে কিছুটা আরামে রাত পার করলাম। পরের দিন ১৮ জুন আবারও দুপুরের পরে ওই কষ্টটাই হতে লাগল। আবারও ভাপ নিয়ে সুস্থ বোধ করে রাত পার করলাম। পরের দিন ১৯ জুন আমি কিছুটা ভালো বোধ করলাম। অনেক রান্নাবান্না ও ঘরের কাজ করলাম।
১৯ জুন রাতেই আমাদের বাসার তৃতীয়জনের জ্বর, গলাব্যথা ও মাথাব্যথা শুরু হলো। ওকেও পেইন কিলার ও ভাপ নেওয়া, গারগল শুরু করিয়ে দিলাম।
আমাদের বাসায় প্রথম সদস্যর জ্বর এসেছিল আমার জ্বরের প্রায় সাত দিন আগে। ও এক দিনের জ্বরেই সুস্থ হয়ে যায় এবং ওর কাশি ছিল নিয়মিত। আর তেমন কোনো কষ্ট শরীরে ছিল না।
এ অবস্থায় আমরা তিনজন করোনা টেস্ট করানোর সিদ্ধান্ত নিই ২০ জুন। এবং রিপোর্ট পাই ২২ জুন। আমাদের তিনজনের করোনা পজিটিভ।
২২ জুন থেকে আমরা চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী মেডিসিন খাওয়া শুরু করি এবং নিয়মিত গারগল, ভাপ নেওয়া, টোটকা খাওয়া চালিয়ে যেতে থাকি। শুরু হয় আমাদের করোনাযুদ্ধের ভয়াবহতম জার্নি। কারণ, এরপর আমার সিটিস্ক্যান রিপোর্ট খারাপ আসে। আমার ফুসফুসে কোভিড–১৯–এর ভয়াবহ আক্রমণ। অর্থাৎ ফুসফুসে ইনফেকশন পাওয়া যায়।
শুরু হয় আরও ভয়াবহতম করোনাযুদ্ধ। চলবে...।
আরও পড়ুন:
করোনা জয়ের গল্প: ১
১১২ দিন কোয়ারেন্টিন শেষে করোনা টেস্ট
*আগামীকাল পড়ুন: পর্ব-৩: ভয়াবহ কিছু সময়