ঘুরে দাঁড়াও কর্মসূচি
কতটা ‘ঘুরে দাঁড়াতে’ পারল ঢাকা ওয়াসা
গ্রাহকসেবার মান বাড়ানো, ভূগর্ভস্থ পানির ব্যবহার কমানোসহ ২০১০ সালে একগুচ্ছ কর্মসূচি নিয়েছিল ঢাকা ওয়াসা। গত এক যুগে লক্ষ্যের কতটা বাস্তবায়ন করা গেল, তা নিয়ে পর্যালোচনা।
২০১০ সালে ঢাকা ওয়াসার উৎপাদিত পানির ৮০ শতাংশ ছিল ভূগর্ভস্থ উৎসের।
বর্তমানে ওয়াসার সরবরাহ করা পানির ৬৫ ভাগই ভূগর্ভস্থ। এখন ওয়াসার পানি তোলা হয় ঢাকার বিভিন্ন অঞ্চলে বসানো মোট ৯২৩টি গভীর নলকূপের মাধ্যমে।
টিআইবির এক জরিপের তথ্য অনুযায়ী, ওয়াসার গ্রাহকের ৯১ শতাংশ খাওয়ার পানি ফুটিয়ে পান করেন।
হঠাৎ করে রাজধানী ঢাকায় ডায়রিয়ার প্রকোপ বেড়ে যাওয়ায় ওয়াসার পানির মান নিয়ে আবার প্রশ্ন উঠেছে। ঢাকা ওয়াসার সরবরাহ করা পানিতে ময়লা থাকে, দুর্গন্ধ ছড়ায়—এমন অভিযোগ করছেন বিভিন্ন এলাকার গ্রাহকেরা। পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে গেছে যে ঢাকা ওয়াসা কর্তৃপক্ষও এখন আর পানিতে গন্ধ থাকার বিষয়টি অস্বীকার করে না। সংস্থাটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) তাকসিম এ খান ৫ এপ্রিল জাতীয় প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে জানান, তাঁর নিজের বাসার পানিতেও গন্ধ থাকে।
যদিও দায়িত্ব গ্রহণের পর গ্রাহকসেবার মান বাড়াতে ২০১০ সালে ‘ঘুরে দাঁড়াও ঢাকা ওয়াসা’ নামে একটি কর্মসূচি নেন তাকসিম এ খান। এক যুগ পরে এসে দেখা যাচ্ছে, ওয়াসার সেবা প্রত্যাশা অনুযায়ী বাড়েনি। গ্রাহক পর্যায়ে অসন্তোষ আগের মতোই রয়েছে। ২০১০ সালে ঢাকা ওয়াসার উৎপাদিত পানির ৮০ শতাংশ ছিল ভূগর্ভস্থ উৎসের। আর ২০ শতাংশ ছিল ভূ-উপরিভাগের পানি। ঘুরে দাঁড়ানোর অংশ হিসেবে তাকসিম এ খান ভূ-উপরিভাগের পানির উৎপাদন অন্তত ৭০ শতাংশে উন্নীত করার ঘোষণা দিয়েছিলেন। লক্ষ্য অর্জনে তিনি নিজেই ২০২১ সাল পর্যন্ত সময় নির্ধারণ করেছিলেন। তবে বাস্তবতা ভিন্ন।
গত এক যুগে ভূগর্ভস্থ উৎসের পানি সংগ্রহেই বেশি মনোযোগী ছিল ওয়াসা। এ সময়ে নতুন করে ৪০৪টি গভীর নলকূপ বসানো হয়েছে। বর্তমানে ওয়াসার সরবরাহ করা পানির ৬৫ ভাগই ভূগর্ভস্থ। এখন ওয়াসার পানি তোলা হয় ঢাকার বিভিন্ন অঞ্চলে বসানো মোট ৯২৩টি গভীর নলকূপের মাধ্যমে। এর ফল হচ্ছে প্রতিবছর পানির স্তর নিচে নেমে যাচ্ছে, যা প্রকৃতি–পরিবেশের জন্য বড় ঝুঁকি তৈরি করেছে।
ঢাকা ওয়াসার ‘ঘুরে দাঁড়াও’ কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে ভূগর্ভস্থ পানির ব্যবহার কমানো, সিস্টেম লস (কারিগরি অপচয়) কমানো, পানি সরবরাহ ও রাজস্ব আদায় বাড়ানো এবং সুয়ারেজ (পয়োনিষ্কাশন) সেবার আওতা বাড়ানো। ওয়াসার একাধিক কর্মকর্তা বলছেন, সামনে এগোনোর বদলে অনেক ক্ষেত্রে ওয়াসা পিছিয়েছে। গত ১২ বছরে ঢাকায় নতুন কোনো পয়োনিষ্কাশন লাইন তৈরি হয়নি। বরং আগের পয়োনিষ্কাশন ব্যবস্থা পুরো ভেঙে পড়েছে। আইন অনুযায়ী, ঢাকা ওয়াসার মূল দায়িত্ব নিরবচ্ছিন্ন পানি সরবরাহ নিশ্চিত করা এবং পয়োনিষ্কাশনের ব্যবস্থা করা।
ঘুরে দাঁড়াও কর্মসূচির ফল আশানুরূপ হয়নি—ওয়াসার এমডি তাকসিম এ খানও এখন তা স্বীকার করেন। গত বছরের ৪ ডিসেম্বর ওয়াসা ভবনে এক অনুষ্ঠানে ঘুরে দাঁড়াও কর্মসূচি নিয়ে প্রশ্ন করা হয় তাঁকে। তিনি বলেন, ভূ-উপরিস্থ পানির ব্যবহার বাড়াতে নানা কার্যক্রম চলছে। ২০১৬ সাল থেকে ঢাকা ওয়াসা পয়োনিষ্কাশন মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন শুরু করেছে। ঢাকা ওয়াসা তার ঘুরে দাঁড়াও রোডম্যাপ থেকে বিচ্যুত হয়নি, বাস্তবায়নে দেরি হচ্ছে।
গভীর নলকূপ বেড়ে প্রায় দ্বিগুণ
মাটির নিচের পানির ব্যবহার কমিয়ে নদীর পানি শোধনের মাধ্যমে রাজধানীর মানুষের চাহিদা মেটানোর কথা ২০০৯ সাল থেকে বলে আসছে ঢাকা ওয়াসা। ওই বছর তাকসিম এ খান ঢাকা ওয়াসার এমডির দায়িত্ব নেওয়ার পর বলেছিলেন, গভীর নলকূপ কম বসিয়ে নদীর পানির ব্যবহার বাড়ানো হবে। টেকসই, গণমুখী ও পরিবেশবান্ধব পানি উৎপাদনেরও প্রতিশ্রুতি তখন দিয়েছিলেন।
২০০৯ সালে ঢাকা ওয়াসার গভীর নলকূপের সংখ্যা ছিল ৫১৯। প্রতিবছরই নতুন নতুন নলকূপ বসানো হয়েছে। পাশাপাশি রাজধানীতে বেসরকারি ও ব্যক্তিমালিকানাধীন গভীর নলকূপের সংখ্যাও বেড়েছে। এ বিপুলসংখ্যক গভীর নলকূপ দিয়ে মাটির নিচ থেকে দিনরাত অবিরাম পানি তোলা হচ্ছে।
ওয়াসার প্রকৌশল বিভাগ সূত্র বলছে, ঢাকায় পানির স্তর প্রতিবছর গড়ে প্রায় ৫ ফুট করে নেমে যাচ্ছে। এর ফলে পানি তোলার খরচ বেড়ে যাচ্ছে। ১০ বছর আগে একটি গভীর নলকূপ বসাতে খরচ হতো ৪০ থেকে ৫০ লাখ টাকা। এখন খরচ হয় ১ কোটি ২০ লাখের বেশি। মাটির নিচে পানি ক্রমেই আরও দুষ্প্রাপ্য হয়ে উঠছে।
নদীর পানি শোধনে নেওয়া ওয়াসার প্রকল্পগুলোর ধীরগতির কারণে নির্ধারিত সময়ে ভূ-উপরিস্থ পানির লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা যায়নি। মেঘনা নদীর পানি পরিশোধন করে রাজধানীতে সরবরাহ করতে ৯ বছর আগে সোয়া ৫ হাজার কোটি টাকার প্রকল্প নিয়েছিল ওয়াসা। তিন দফায় প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানোর পরও এখন পর্যন্ত কাজের অগ্রগতি মাত্র ৪৫ শতাংশ। এর মধ্যে প্রকল্প ব্যয় বেড়ে হয়েছে ৮ হাজার কোটি টাকা। শোধনাগার ও পানির লাইনের নির্মাণকাজ শেষে কবে নাগাদ মেঘনা নদীর পানি ঢাকাবাসী পাবে সেটি নিয়ে রয়েছে অনিশ্চয়তা।
পদ্মা নদীর পানি রাজধানীতে সরবরাহ করতে ৩ হাজার ৬৭০ কোটি টাকা ব্যয়ে শোধনাগার নির্মাণ করা হয়েছে। কিন্তু শোধনাগার থেকে পানি রাজধানীতে আনার সরবরাহ লাইনই স্থাপন করেনি সংস্থাটি। এ কারণে শোধনাগারের সক্ষমতার প্রায় ৫০ শতাংশই অব্যবহৃত থাকছে দুই বছরের বেশি সময় ধরে। এখন ঢাকা ওয়াসা বলছে, ২০২৩ সালের মধ্যে ৭০ ভাগ ভূ-উপরিস্থ উৎস থেকে পানি উৎপাদন করা হবে।
ভেঙে পড়েছে বিদ্যমান পয়োনিষ্কাশন ব্যবস্থা
ঢাকায় গত ১২ বছরে এক কিলোমিটারও পয়োনালা তৈরি হয়নি। এখন ঢাকায় ৯৩৪ কিলোমিটার পয়োনালা রয়েছে। বিদ্যমান পয়োনালাগুলোর অধিকাংশ অকেজো, পাম্পস্টেশনে বর্জ্য কম যায়। বিভিন্ন এলাকার পয়োবর্জ্য জমা করার লিফটিং স্টেশনও (যেখান থেকে বর্জ্য সরানো হয়) অচল। অন্যদিকে রাজধানীর ৮০ শতাংশের বেশি এলাকায় পয়োবর্জ্য নিষ্কাশনের ব্যবস্থাই নেই। যার ফলে হচ্ছে পয়োবর্জ্য কোনো না কোনো পথে নদীতে যাচ্ছে।
বর্তমানে ঢাকায় প্রতিদিন প্রায় সাড়ে তিন হাজার লিটার পয়োবর্জ্য উৎপন্ন হয়। হাজারীবাগ, লালবাগসহ পুরান ঢাকার বেশির ভাগ এলাকা, ধানমন্ডি, মগবাজার (আংশিক), লালমাটিয়া (আংশিক), বাসাবো, গেন্ডারিয়া ও গুলশান-বনানী (আংশিক) এলাকায় পয়োনালা রয়েছে। ঢাকার যে এলাকায় ওয়াসার পয়োনালা রয়েছে, সে এলাকার গ্রাহকদের পয়োনিষ্কাশনের বিল দিতে হয়। পানির বিলের সমপরিমাণ পয়োনিষ্কাশন বিল দিতে হয় গ্রাহকদের। ধানমন্ডি, লালমাটিয়া, মগবাজার প্রভৃতি এলাকার বেশির ভাগ পয়োনালা অকেজো হলেও সেসব এলাকার বাসাবাড়ি থেকে ওয়াসার পানির বিলের সমপরিমাণ অর্থ আদায় করা হয়। গত ১২ বছরে পয়োনিষ্কাশন বিল বাবদ ২ হাজার কোটি টাকার বেশি আদায় করা হয়েছে। এর মধ্যে ২০২০-২১ অর্থবছরে আদায় করা হয়েছে ৩৯১ কোটি টাকা।
২০১৩ সালে ঢাকা মহানগরীর পয়োনিষ্কাশন মহাপরিকল্পনা তৈরি করে ওয়াসা। সে অনুসারে ঢাকার চারপাশের নদীদূষণ রোধে উত্তরা, মিরপুর, রামপুরা, রায়েরবাজার ও পাগলায় (দ্বিতীয়) পাঁচটি শোধনাগার নির্মাণের সিদ্ধান্ত হয়। গত ৯ বছরে মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের গতি ধীর হলেও ওয়াসা কর্তৃপক্ষ বলছে, ২০৩০ সালের মধ্যে ঢাকার শতভাগ মানুষের বর্জ্য পরিশোধনের আওতায় আসবে।
মহাপরিকল্পনা অনুযায়ী, হাতিরঝিল থেকে পাঁচ কিলোমিটার দূরে আফতাবনগরের কাছে দাশেরকান্দি এলাকায় পয়ঃশোধনাগার নির্মাণ প্রকল্প অনুমোদিত হয় ২০১৫ সালে। প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ের এ প্রকল্পের কাজ এখন প্রায় শেষ পর্যায়ে। কিন্তু নির্ধারিত এলাকা থেকে পয়োবর্জ্য শোধনাগার পর্যন্ত পৌঁছানোর জন্য পাইপলাইন তৈরির (নেটওয়ার্ক) কাজই শুরু হয়নি। ফলে এত টাকা ব্যয়ে নির্মিত পয়ঃশোধনাগারের সুফল সময়মতো পাওয়া যাবে কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
এ পয়ঃশোধনাগারের আওতাভুক্ত এলাকায় নতুন পয়োনেটওয়ার্ক করতে চীনের অর্থায়নে আরেকটি প্রকল্প নেওয়া হবে বলে প্রথম আলোকে জানান ঢাকা ওয়াসা বোর্ডের চেয়ারম্যান গোলাম মোস্তফা। তবে তিনি বলেন, যতক্ষণ পর্যন্ত দাশেরকান্দি পয়ঃশোধনাগারের নেটওয়ার্ক তৈরি করা না যাবে, ততক্ষণ পর্যন্ত এ প্রকল্পের সুফল আসলে আসবে না।
বর্তমানে ঢাকায় পানির দৈনিক চাহিদা কমবেশি ২৫০ কোটি লিটার। এর বিপরীতে ঢাকা ওয়াসা দৈনিক ২৬০ কোটি লিটার পানি উৎপাদন করার দাবি করে। ওয়াসা বলছে, উৎপাদিত পানির ২০ ভাগ গ্রাহক পর্যন্ত পৌঁছায় না। কাগজে-কলমে ওয়াসার এ অপচয় ‘সিস্টেম লস’ হিসেবে পরিচিত।
ওয়াসার নথিপত্রে দেখা যায়, গত ডিসেম্বর মাসেও ঢাকা ওয়াসার সিস্টেম লস হয়েছে ২৬ দশমিক ৫৭ শতাংশ। সিস্টেম লস বাদ দিলে প্রতিদিন ৬৯ কোটি লিটার পানি গ্রাহক পর্যন্ত যায় না। শুধু এ অপচয় কমাতে পারলেই বছর বছর ওয়াসাকে আর পানির দাম বাড়াতে হতো না।
সুপেয় পানি সরবরাহের দাবি নিয়ে প্রশ্ন
২০০৯ সালে প্রথম দফায় নিয়োগ পাওয়ার পর আর পদ ছাড়তে হয়নি তাকসিম এ খানকে। নাগরিক সেবার মান নিয়ে তীব্র সমালোচনা ও নানা বিতর্কের মুখে পড়লেও ষষ্ঠবারের মতো তাঁকে এমডি হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয় ২০২০ সালের ১ অক্টোবরে।
ষষ্ঠবার দায়িত্ব পাওয়ার ক্ষেত্রে ‘রাজধানীবাসীর চাহিদা অনুযায়ী সুপেয় পানি সরবরাহে’ উল্লেখযোগ্য অগ্রগতিকে তাকসিমের সাফল্য হিসেবে দেখানো হয়। ওয়াসার পানি কতটা সুপেয়, সে সম্পর্কে জানতে রাজধানীর মিরপুর, মোহাম্মদপুর, জুরাইন, খিলগাঁও এলাকার আটজন গ্রাহকের সঙ্গে কথা বলে প্রথম আলো। কিন্তু এমন একজনকেও পাওয়া যায়নি, যিনি মনে করেন ওয়াসার পানি সুপেয় বা পরিশোধন না করে পান করা যায়।
ঢাকা ওয়াসার অনিয়ম-দুর্নীতি ও গ্রাহকসেবার বিভিন্ন ঘাটতির দিক নিয়ে ২০১৯ সালে ‘ঢাকা ওয়াসা: সুশাসনের চ্যালেঞ্জ ও উত্তরণের উপায়’ শীর্ষক এক প্রতিবেদন প্রকাশ করে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। তাতে বলা হয়, ঢাকা ওয়াসা পাইপলাইনের মাধ্যমে সুপেয় পানি সরবরাহ করতে ব্যর্থ। ৯১ শতাংশ গ্রাহক খাওয়ার পানি ফুটিয়ে পান করেন। পানি ফুটিয়ে পানের উপযোগী করতে বছরে ৩২২ কোটি টাকার গ্যাস খরচ হয়।
সাফল্যের পেছনে হিসাবের মারপ্যাঁচ
প্রতিবছর ঢাকা ওয়াসার গ্রাহকসংখ্যা যেমন বেড়েছে, পাল্লা দিয়ে বেড়েছে পানির দাম। ঘুরে দাঁড়াও কর্মসূচির প্রসঙ্গে ওয়াসা কর্তৃপক্ষ সংস্থাটির রাজস্ব আয় বৃদ্ধির বিষয়টি সামনে নিয়ে আসে। কিন্তু ওয়াসার কর্মকর্তারা বলছেন, আয় বাড়ার বিষয়টিতে হিসাবের মারপ্যাঁচ রয়েছে।
২০০৮ সালে ওয়াসার বার্ষিক রাজস্ব আয় ছিল ৩০০ কোটি টাকা। ২০২১ সালে তা বেড়ে হয় ১ হাজার ৭৫৩ কোটি টাকা। গত ১২ বছরে আবাসিক খাতে পানির দাম বেড়েছে আড়াই গুণের বেশি। আর বাণিজ্যিক খাতে দ্বিগুণ হয়েছে পানির দাম। আবাসিকে ৬ টাকা দামের (২০০৯ সালে) পানি এখন ১৫ টাকার বেশি আর বাণিজ্যিকে ২০ টাকার পানি এখন ৪২ টাকা।
অন্যদিকে গত ১২ বছরের ওয়াসার সংযোগ বেড়েছে এক লাখের বেশি। গ্রাহক বৃদ্ধি ও পানির বর্ধিত দামের বিষয়টি আমলে নিলে ওয়াসার রাজস্ব আয় খুব বেশি বাড়েনি। ২০০৯ সালে সংস্থাটির লাভ ছিল প্রায় ৪১ কোটি টাকা। ২০২১ সালে লাভ হয়েছে ৪৯ কোটি টাকা।
ঢাকা ওয়াসায় ২০০৮ সালে বিদেশি বিনিয়োগ ছিল না বললেই চলে। তাকসিম এ খান দায়িত্ব নেওয়ার পর বিদেশি বিনিয়োগ বেড়েছে। এ বিনিয়োগ মূলত সুদযুক্ত ঋণ। সুদে-আসলে এ টাকা ওয়াসার গ্রাহকদেরই শোধ করতে হবে। ২০২০ সাল পর্যন্ত ঢাকা ওয়াসার বৈদেশিক বিনিয়োগ ছিল প্রায় ২৬ হাজার কোটি টাকা। তবে প্রকল্প বাস্তবায়নের ধীরগতির কারণে ওয়াসার প্রকল্প ব্যয় বাড়ছে। অন্যদিকে ঋণের টাকায় করা এসব প্রকল্পের সুফল পুরোপুরি পাওয়া যাচ্ছে না।
জবাবদিহির আওতায় আনা জরুরি
এক যুগে ঢাকা ওয়াসা কতটা ঘুরে দাঁড়াতে পেরেছে, তা জানতে সংস্থার জনসংযোগ বিভাগে গত ২৬ ফেব্রুয়ারি ছয়টি লিখিত প্রশ্ন ই–মেইলে ও হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে পাঠায় প্রথম আলো। এরপর ২৮ ফেব্রুয়ারি সংস্থাটির উপপ্রধান জনতথ্য কর্মকর্তা এ এম মোস্তফা তারেক প্রথম আলোকে মুঠোফোনে বলেন, কবে নাগাদ ওয়াসা কর্তৃপক্ষ জবাব পাঠাবে, তা নিশ্চিত নয়। তবে তিনি জানান, গত বছরের ৫ মার্চ একটি রঙিন প্রচারপত্র তৈরি করেছিল ঢাকা ওয়াসা। ওই প্রচারপত্র তিনি পাঠাতে পারেন। শেষ পর্যন্ত প্রচারপত্রটি তাঁর কাছ থেকে সংগ্রহ করা গেলেও ছয়টি প্রশ্নের জবাব ৪২ দিনেও আসেনি।
ভূগর্ভস্থ পানির ব্যবহার কমাতে ও পয়োব্যবস্থাপনা গড়ে তুলতে ঢাকা ওয়াসা পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছে বলে মনে করেন নগরবিদদের সংগঠন বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের সাবেক সভাপতি অধ্যাপক আকতার মাহমুদ। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের এই শিক্ষক প্রথম আলোকে বলেন, ঢাকায় পানি সরবরাহে কোনো টেকসই ব্যবস্থা গড়ে তোলা যায়নি। পয়োবর্জ্য ব্যবস্থাপনা ভেঙে পড়েছে। ওয়াসার নেওয়া প্রকল্পগুলোর সুফল জনগণ পাচ্ছে না। উল্টো সংস্থার কর্মকর্তারা নিজেদের ব্যর্থতার দায় গ্রাহকদের ঘাড়ে চাপাচ্ছেন। এ পরিস্থিতির জন্য দায়ী ব্যক্তিদের জবাবদিহির আওতায় আনা জরুরি।