ওয়াসার নথিও বলছে, পানির তীব্র সংকট, দুর্গন্ধযুক্ত
রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দা কিছুদিন ধরে পানিসংকটের কথা জানাচ্ছেন। ঢাকা ওয়াসার পানিতে ময়লা ও দুর্গন্ধ, এমন অভিযোগ করছেন গ্রাহকেরা। এবার ঢাকা ওয়াসার নথিতেও পানিসংকট ও দুর্গন্ধের বিষয়টি উঠে এসেছে। ওয়াসার তথ্য অনুযায়ী, রাজস্ব জোন-৪ (মিরপুর-আগারগাঁও) অঞ্চলের বিভিন্ন এলাকায় তীব্র পানিসংকট চলছে। পানি এলেও তা দুর্গন্ধযুক্ত।
ঢাকা ওয়াসার রাজস্ব জোন-৪-এর রাজস্ব কর্মকর্তা মো. সামছুল ইসলাম খান পানির সংকট রয়েছে, এমন এলাকার একটি তালিকা করে চিঠি দিয়েছেন নির্বাহী প্রকৌশলীকে। ১১ এপ্রিল দেওয়া চিঠির কপি অফিসে গ্রহণ করেছে ১৩ এপ্রিল। চিঠির অনুলিপি দেওয়া হয়েছে ওয়াসার বাণিজ্যিক ব্যবস্থাপক, প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা ও তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলীকে।
রমজান মাসে পানির এমন কষ্ট মানা যায় না। ওয়াসা অফিসে জানালেও কোনো সমাধান হচ্ছে না। বাড়ির ভাড়াটেরা বাসা ছেড়ে দিতে চাচ্ছেন।
চিঠিতে বলা হয়, রাজস্ব জোন-৪-এর আওতাধীন বিভিন্ন এলাকায় গ্রাহকেরা তীব্র পানির সংকটে ভুগছেন। দৈনন্দিন কাজকর্ম সারতে তাঁদের বেশ দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। গ্রাহকেরা রাজস্ব পরিদর্শক বা বিলিং সহকারীদের কাছে প্রতিনিয়ত পানিসংকটের অভিযোগ করছেন। চিঠিতে রাজস্ব আদায়ের কাজ গতিশীল রাখার স্বার্থে এলাকাগুলোর পানিসংকট সমাধানে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ করা হয়।
ওয়াসার চিঠির তথ্য অনুযায়ী, মিরপুর-আগারগাঁও অঞ্চলের যেসব এলাকায় পানিসংকট ও দুর্গন্ধ রয়েছে সেগুলো হলো দারুস সালাম, বড় বাড়ি রোড, মসজিদ রোড, কল্যাণপুর প্রাইমারি স্কুল রোড, কমিশনার রোড, উত্তর পীরেরবাগ বালুর মাঠ, মাদ্রাসা গলি, পশ্চিম মণিপুর ১ নম্বর বাসা থেকে ৭০ নম্বর বাসা, গাউছিয়া মসজিদ থেকে ৬০ ফিট সড়ক, পূর্ব মণিপুর, কাঁঠালতলা, পশ্চিম শেওড়াপাড়ার অংশবিশেষ, মিরপুর ১ নম্বরের এইচ ব্লকের ১ নম্বর রোডের ৪ থেকে ৮ নম্বর বাসা, এইচ ব্লকের ২ থেকে ১০ নম্বর রোড ও ১৫ থেকে ১৮ নম্বর রোড এবং মিরপুর ৬ নম্বর সেকশনের ব্লক ট।
উত্তর পীরেরবাগ এলাকার হজরত আবু বকর সিদ্দিকী (রহ.) মাদ্রাসা গলিতে দুই সপ্তাহ ধরে পানির সংকট চলছে। এই গলির ৩৬৩/৭ নম্বর বাসার বাসিন্দা সিরাজ-উদ-দৌলা প্রথম আলোকে বলেন, সারা দিনে একবারও পানি আসছে না। রমজান মাসে পানির এমন কষ্ট মানা যায় না। ওয়াসা অফিসে জানালেও কোনো সমাধান হচ্ছে না। বাড়ির ভাড়াটেরা বাসা ছেড়ে দিতে চাচ্ছেন।
কল্যাণপুর এলাকার বাসিন্দা সাদিয়া শারমিন ওয়াসার লাইনে আসা ময়লা ও দুর্গন্ধযুক্ত পানির ভিডিও ইনবক্সে পাঠান। তিনি বলেন, ময়লা ও দুর্গন্ধযুক্ত পানি থেকে রীতিমতো ফেনা ওঠে। ২০ দিন ধরে একই অবস্থা। ওয়াসার হেল্পলাইনে একাধিকবার ফোন দেওয়া হয়েছে। ধীরে ধীরে ঠিক হয়ে যাবে বলেছে, কিন্তু এখন পর্যন্ত কোনো সমাধান হয়নি।
কিছুদিন ধরে রাজধানীতে ডায়রিয়ার প্রকোপ বেড়ে যাওয়ায় ওয়াসার পানির মান নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) তাকসিম এ খান ৫ এপ্রিল জাতীয় প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে জানান, তাঁর নিজের বাসার পানিতেও দুর্গন্ধ থাকে।
পানিসংকট ও দুর্গন্ধের বিষয়ে ঢাকা ওয়াসার পরিচালক (কারিগরি) এ কে এম শহীদ উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, উত্তর পীরেরবাগ এলাকায় পানির সংকট রয়েছে। ওই এলাকায় ওয়াসার পানির গভীর নলকূপের যে উৎপাদনক্ষমতা, তা দিয়ে ২৫ হাজার মানুষকে পানি সরবরাহ করা সম্ভব। কিন্তু লোকসংখ্যা আছে লাখের বেশি। রেশনিং করে যতটা সম্ভব পানির চাহিদা মেটানোর চেষ্টা করা হচ্ছে।
ঢাকা ওয়াসা পানির গভীর নলকূপ বসানোর জায়গা পাচ্ছে না জানিয়ে এ কে এম শহীদ উদ্দিন বলেন, অনেক এলাকায় গভীর নলকূপ বসানোর জায়গা পাওয়া যাচ্ছে না। অনেক ক্ষেত্রে গভীর নলকূপের উৎপাদনক্ষমতা কমে গেছে। বিদ্যমান জায়গায় একাধিক পাম্প বসানোর ফলে নতুন পাম্প বসানোর সুযোগ নেই। স্থানীয় কাউন্সিলরদের জায়গার বিষয়ে বলা হয়েছে। পাম্পের জায়গার ক্ষেত্রে এলাকাবাসীকে এগিয়ে আসতে হবে।