‘এভাবে চললে বেতনের একটা অংশ তো যাতায়াতেই চলে যাবে’
মিরপুর ৬–এর বাসা থেকে গুলশানে রওনা দেন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা মাহমুদুর রহমান। এই পথটুকু যেতে তাঁর সাধারণত ২৫ টাকা লাগে। কিছু দূর হেঁটে, কিছু দূর রিকশায় করে যেতে আজ মঙ্গলবার তাঁর ১৫০ টাকা খরচ হয়েছে। মাহমুদ বলেন, ‘গতকালও একইভাবে কষ্ট করে অফিসে গিয়েছি, ফিরেছি। গতকাল খরচ হয়েছে ২৬০ টাকা। অফিস যাতায়াতের কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। দৈনিক এভাবে আসা কঠিন। এভাবে চললে বেতনের একটা অংশ তো যাতায়াতেই চলে যাবে।’
করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে দেশজুড়ে গতকাল সোমবার থেকে সরকারিভাবে নানা বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে। আজ দ্বিতীয় দিনের শুরুটাও হয় গতকালের মতো অফিসগামীদের ভোগান্তি দিয়ে। সরকারি কিছু প্রতিষ্ঠানসহ বেসরকারি প্রতিষ্ঠান খোলা আছে। এদিকে গণপরিবহনও বন্ধ। এতে রাজধানীর বিভিন্ন মোড়ে অফিসগামী মানুষকে ভোগান্তিতে পড়তে হয়।
সকালে খিলগাঁও থেকে নতুনবাজারের কর্মস্থলে যান বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা আবু সালেহ আহমেদ। বাসে তাঁর খরচ হতো ১০ টাকা। আজ সকালে তিনি ৮০ টাকা রিকশাভাড়া দিয়ে অফিসে যান। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘প্রতিদিন এভাবে বাড়তি ভাড়া দেওয়া আমাদের মতো মধ্যবিত্তের পক্ষে সম্ভব না। আবার অফিসও খোলা, যেতেই হবে। আমরা অনেক বিপাকে আছি।’
শহরজুড়ে বাস চলাচল বন্ধ। তবে চালু আছে রিকশা, সিএনজিচালিত অটোরিকশা। ব্যক্তিগত গাড়ির উপস্থিতিও চোখে পড়ার মতো। রাজধানীর মূল সড়কগুলোয় এসব বাহনের চাপ সকাল থেকেই দেখা গেছে। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তা আরও বেড়েছে।
বেলা ১১টার দিকে আরামবাগ মোড়ে কথা হয় রিকশাচালক আবদুল গণির সঙ্গে। তাঁর মুখে মাস্ক ছিল। তিনি সকাল সাতটা থেকে রিকশা চালাচ্ছেন। তিনি বলেন, ‘সকাল থেকে চার ঘণ্টায় ১১ জন যাত্রী পাইছি। জমা ও দৈনিক খরচ সকালেই উঠে গেছে।’
রাজধানীর অন্যতম ব্যস্ত মোড় মতিঝিল। বেলা বাড়তেই এই এলাকায় মানুষের আনাগোনা বেড়েছে। প্রচুর জনসমাগম হচ্ছে, মানুষের মধ্যে স্বাস্থ্যবিধি না মানার প্রবণতাও দেখা যাচ্ছে। স্বাস্থ্যবিধি মানা ও চলাচলে নিয়ন্ত্রণ ঠেকাতে মতিঝিলের শাপলা চত্বরে অভিযান চালাচ্ছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব-৩)। ভ্রাম্যমাণ আদালতকে দেখেই মাস্ক পরে নিতে দেখা যায় অনেককে। কেউ কেউ তো মাস্ক ছাড়াই ঘুরছিলেন।
কলেজ শিক্ষার্থী ইউসুফ খান মাস্ক না পরেই ফকিরাপুলে ভাইয়ের দোকানে যাচ্ছিলেন। ভ্রাম্যমাণ আদালত এ সময় তাঁকে দাঁড় করান। মাস্ক কেন আনেনি জিজ্ঞেস করতেই তিনি বলেন, ‘তাড়াহুড়ো করে বের হতে গিয়ে মাস্ক পরতে ভুলে গেছি।’
যাঁরা বাসার বাইরে যাচ্ছেন, তাঁরা যদি স্বাস্থ্যবিধি না মানেন, তাহলে সরকারের বিধিনিষেধ আরোপ করে সংক্রমণ কমানোর চেষ্টা ভেস্তে যাবে।নজরুল ইসলাম, জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির অন্যতম সদস্য
মুখের মাস্ক নামিয়ে ধলপুরের বাসায় ফিরছিলেন মো. সোহেল। আরামবাগে বাইক মেরামত করতে গিয়েছিলেন। তাঁকেও ভ্রাম্যমাণ আদালত জরিমানা করেন। জানতে চাইলে সোহেল বলেন, ‘মুখেই মাস্ক ছিল। কিন্তু থুতনিতে নামিয়ে রেখেছিলাম।’
র্যাব-৩–এর পক্ষ থেকে এই ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান নেতৃত্ব দিচ্ছেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট পলাশ কুমার বসু। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, জরিমানা মূল উদ্দেশ্য নয়। মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে সচেতনতা বাড়ানো। মানুষ মাস্কের বিষয়ে ঠুনকো অজুহাত দিচ্ছেন। অনেকেই কম গুরুত্বপূর্ণ কাজের জন্যও বের হচ্ছেন। স্বাস্থ্যবিধি না মানায় জরিমানার পাশাপাশি সতর্ক করা, অসচ্ছল মানুষের মধ্যে বিনা মূল্যে মাস্ক বিতরণ করা হচ্ছে।
বাইরে বের হলে মাস্ক পরা, স্বাস্থ্যবিধি মানা জরুরি বলে পরামর্শ দিয়েছেন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের করোনাবিষয়ক জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির অন্যতম সদস্য অধ্যাপক নজরুল ইসলাম। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, মাস্ক পরা, স্বাস্থ্যবিধি মানা এবং সামাজিক দূরত্ব মেনে চলা—এই তিন হচ্ছে স্বাস্থ্য সুরক্ষার মূল। এগুলো ছাড়া কোনো কিছুতেই উপকার হবে না। বাসার বাইরে বের হলেই এগুলো মানা বাধ্যতামূলক। তিনি বলেন, ‘যাঁরা বাসার বাইরে যাচ্ছেন, তাঁরা যদি স্বাস্থ্যবিধি না মানেন, তাহলে সরকারের বিধিনিষেধ আরোপ করে সংক্রমণ কমানোর চেষ্টা ভেস্তে যাবে।’