এবার ভিসা প্রাপ্তি নিয়ে জটিলতা
টিকিট ও ফ্লাইট সমস্যার কিছুটা সমাধান হলেও সৌদি আরবে যাওয়ার ভিসা ও ইকামার সময় বৃদ্ধি নিয়ে নতুন করে জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে। সৌদিপ্রবাসীদের দাবি, চলতি বছর তিনবার স্বয়ংক্রিয়ভাবে ভিসা ও ইকামার মেয়াদ বেড়েছিল। এবারও যেন সেভাবে মেয়াদ বাড়ে।
এই দাবিতে সৌদিপ্রবাসীরা আজ সোমবার সকাল থেকে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে সৌদি এয়ারলাইনসের টিকিট সেলস সেন্টারের সামনের সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন। আর এ কারণে ওই এলাকাসহ আশপাশের সড়কগুলোতে যানজটের সৃষ্টি হয়। ফলে ভোগান্তিতে পড়ে নগরবাসী। দীর্ঘ সময় যানজটে আটকে থাকতে হয়েছে তাদের।
এর আগে টিকিটের দাবিতে তিন দফা সড়ক অবরোধ করেন সৌদিপ্রবাসীরা। ট্রাফিক বিভাগের (পশ্চিম) অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) মঞ্জুর মোর্শেদ প্রথম আলোকে বলেন, সার্ক ফোয়ারা থেকে মহাখালী এবং অন্যদিকে মানিক মিয়া অ্যাভিনিউ পর্যন্ত যানজট ছড়িয়ে যায়।
পরিস্থিতি সামাল দিতে সেখানে পুলিশ মোতায়েন করা হয়। সেখানে পুলিশ কর্মকর্তাদের কাছে সৌদিপ্রবাসীরা দাবি তুলে ধরেন। পরে বিকেলে সার্ক ফোয়ারার সামনে দাবি নিয়ে আলোচনা হয়। এরপর সৌদিপ্রবাসীরা সড়কের এক পাশে সরে যান।
পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, সৌদিপ্রবাসীদের প্রতিনিধিরা ভিসা, ওয়ার্ক পারমিট ও ছুটির মেয়াদ স্বয়ংক্রিয়ভাবে বৃদ্ধির দাবি লিখিতভাবে তাঁদের দিয়েছেন। এই দাবিগুলো সৌদি এয়ারলাইনসের মাধ্যমে সৌদি দূতাবাসে পাঠানো হয়েছে। সৌদি দূতাবাস এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে পারে বলে জানা গেছে।
পুলিশের সঙ্গে আলোচনা করা শাহাদত হোসেন নামের এক সৌদিপ্রবাসী প্রথম আলোকে বলেন, তিনবার ইকামা ও ভিসার মেয়াদ বাড়ানোর পর এবার এজেন্সির মাধ্যমে ভিসা নবায়ন করার কথা বলা হচ্ছে। তিনি বলেন, বাংলাদেশে আটকে পড়া প্রায় সবার ভিসার মেয়াদ শেষ হবে ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে। ইকামার মেয়াদও শেষ হবে কয়েক দিন পর। এখন ভিসার জন্য এজেন্সি যেসব কাগজ আনতে বলছে, সেগুলো দুই দিনের মধ্যে সৌদি আরব থেকে আনা সম্ভব নয়।
সোমবার সৌদি এয়ারলাইনসের কার্যালয় থেকে ১৯০১ থেকে ২৩০০ নম্বর টোকেনধারীদের টিকিট রি-ইস্যু করা হয়। কিন্তু সকাল থেকে বহু সৌদিপ্রবাসী টিকিট ও ফ্লাইট-সংক্রান্ত বিষয়ে তথ্য জানতে সেখানে জড়ো হন। সেখানে বিক্ষুব্ধ সৌদিপ্রবাসীরা অভিযোগ করেন, সৌদি দূতাবাস নির্দিষ্ট ৩০টি এজেন্সির মাধ্যমে ভিসার আবেদন করতে বলেছে। এজেন্সিরা কফিলের (চাকরিদাতা) বা সৌদি জাওয়াতের (ওয়ার্ক পারমিটের মেয়াদ উল্লেখিত কাগজ) মূল কপি, কফিলের আবেদন-সংবলিত চিঠি, সৌদি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সত্যায়িত কপি, পাসপোর্ট এক্সিট রি-এন্ট্রি ভিসার মূল কপি, সৌদি বিমানবন্দর থেকে বের হওয়ার তারিখসহ কাগজের মূল কপি এবং ইকামার মূল কপি আনতে বলেছে। এর সঙ্গে এজেন্সিগুলো ফি হিসেবে ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা দাবি করছে। আবার সৌদি থেকে ওয়ার্ক পারমিটের মূল কপি ও কফিলের আবেদন-সংবলিত চিঠি আনা আরেক কঠিন কাজ বলে জানিয়েছেন অনেক প্রবাসী। কয়েকজন বলেছেন, এসব আনতে আবার অনেক টাকা খরচের বিষয় আছে।
সৌদিপ্রবাসী মেহেদি হাসান প্রথম আলোকে বলেন, ‘করোনার কারণে আটকে পড়ে আছি। বলা যায় বেকার হয়ে আছি। এখন এক টাকাও হাজার টাকার মতো মনে হয়। এই অবস্থায় আড়াই লাখ টাকা এবং এর সঙ্গে এজেন্সির টাকা কীভাবে দেব?’
সোমবার মতিঝিলে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস কার্যালয় থেকে জেদ্দা ও দাম্মাম রুটে রিটার্ন টিকিট রি-ইস্যু করা হয়। টিকিট পেতে সোমবার বিমান কার্যালয়ে ছিল সৌদিপ্রবাসীদের ভিড়। বিমান সেপ্টেম্বর মাসে সৌদিপ্রবাসীদের জন্য বিশেষ পাঁচটি ফ্লাইট পরিচালনা করেছে। এ ছাড়া আরও ১২টি বিশেষ ফ্লাইটের অনুমতি পেয়েছে বলে জানান বিমানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মো. মোকাব্বির হোসেন। তিনি জানান, ১২টি ফ্লাইটের মধ্যে জেদ্দায় পাঁচটি, রিয়াদে চারটি ও দাম্মামে তিনটি ফ্লাইট রয়েছে।