ঢাকার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দিলকুশা, ফকিরেরপুল এবং পান্থপথে একযোগে খোঁড়াখুঁড়ির কাজ চলছে। সড়কজুড়ে রাখা হয়েছে সাড়ে পাঁচ ও তিন ফুট ব্যাসের পাইপ। খুঁড়ে তোলা মাটি ও পিচ–পাথরের বড় বড় খণ্ড সড়কেই স্তূপ করে রাখা। বৃষ্টির মৌসুম এবং পবিত্র রমজান মাসে এই খোঁড়াখুঁড়ির কারণে সৃষ্টি হয়েছে চরম জনদুর্ভোগ। এ নিয়ে ঢাকার এসব এলাকার বিভিন্ন অফিসের লোকজন, দোকানি, যানবাহনের আরোহী ও পথচারীদের বিরক্তির শেষ নেই।
নিয়ম অনুযায়ী বছরের মে থেকে সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত ঢাকার রাস্তা খনন করা যায় না। সিটি করপোরেশন থেকে এই নিয়ম করা হয়। অথচ খোদ ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) অসময়ে এই রাস্তাটি খননের কাজ করছে। বলা হচ্ছে, জলাবদ্ধতা কমাতে পাইপ বসানোর জন্য এই খোঁড়াখুঁড়ি।
গত বৃহস্পতিবার দুপুরে দিলকুশায় গিয়ে দেখা যায়, পিপলস ইনস্যুরেন্স ভবনের কাছে বড় বড় গর্ত করা হয়েছে। খোঁড়ার পর মাটি এবং পিচ–পাথরের বড় বড় খণ্ড এলোপাতাড়িভাবে রাস্তার ওপরই রাখা হয়েছে। পিপলস ইনস্যুরেন্স ভবন থেকে বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশন (বিসিআইসি) ভবন হয়ে প্রায় ২০০ মিটার পশ্চিমে সুন্দরবন কুরিয়ার কার্যালয় পর্যন্ত সাড়ে পাঁচ ফুট ব্যাসের অনেকগুলো পাইপ রাখা।
বেলা সাড়ে তিনটার দিকে দেখা যায়, এভাবে খোঁড়াখুঁড়ি করা এবং পাইপ রাখার কারণে পুরো এলাকায় তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। সাধারণত অফিস ছুটি হলে বিসিআইসি ভবনের সামনে সরকারি বিভিন্ন সংস্থার বাসের কারণে যানজট থাকে। বর্তমানে তা আরও তীব্র হয়েছে। গর্ত আর বড় বড় পাইপ রাখায় গতকাল সেখানে পাশাপাশি দুটির বেশি বাসও রাখা যাচ্ছিল না। সেসব বাসের কয়েকটি দাঁড়ায় বঙ্গভবনের সীমানাদেয়ালের পার্শ্ববর্তী রাস্তায়। এর ফলে আমেরিকান এক্সপ্রেস ব্যাংকের পাশে মতিঝিল এলাকায়, ইসলামী ব্যাংক ভবনের কাছে দিলকুশা এলাকায়, এমনকি রাজউক ভবনের দক্ষিণ দিকের রাস্তায়ও যানবাহন প্রায় স্থবির হয়ে ছিল।
বিসিআইসি ভবনের কাছে ফলমূল আর সবজির বাজার বসে। কিন্তু এখন তা বসছে বিচ্ছিন্নভাবে। অনেকে পাইপের ভেতরে পণ্যসামগ্রী রেখেছেন। সেখানে ছোট ছোট ছেলেদের পাহারায় বসানো হয়েছে।
ছুটির পর যানজট আর পথচারীর সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় হাঁটার জায়গাও থাকে না। অফিস শেষে বিসিআইসির কর্মকর্তা রওনক হোসেন রাস্তায় নেমেই বিরক্তি প্রকাশ করে বলেন, ‘কথা নেই, বার্তা নেই বৃষ্টির সময় রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি শুরু করেছে। সিটি করপোরেশনের কি কোনো কাণ্ডজ্ঞান নেই?’
একটি বেসরকারি ব্যাংকের কর্মকর্তা লাইলী হাসনাত নারিন্দা যাবেন। রিকশা খুব কম। একটি রিকশা যেতে রাজি হলে দরদাম না করেই উঠে পড়েন। পরে দেখা গেল, রিকশা সামনে এগোতেই পারছিল না। বিরক্ত হয়ে নেমে তিনি হাঁটা শুরু করলেন। তিনি একটু জোরের সঙ্গেই খেদোক্তি করেন, ‘রোজা রেখে এই কষ্ট সহ্য হয় না।’
ফকিরাপুলে পানির ট্যাংকের বিপরীত দিকে প্রায় দেড় শ মিটার রাস্তা খোঁড়া হয়েছে। একটু পর পর বিশাল গর্ত। সেখানেও গর্তের মাটি আর রাস্তার ভাঙা অংশ যথেচ্ছভাবে রাখা হয়েছে। এতে ওই সড়কে যানজট বেড়ে গেছে। জের পড়েছে একদিকে দৈনিক বাংলার মোড় এলাকায়, অন্যদিকে নয়াপল্টন ও পুরানা পল্টন কালভার্ট রোডে। যে অংশে খোঁড়া হয়েছে তার কাছেই বাসাবোসহ ঢাকার পূর্বাঞ্চলীয় কয়েকটি এলাকার টেম্পো চলাচল করে। এখন চলাচলে অসুবিধা হচ্ছে।
স্থানীয় পদ্মা গ্লাসের কর্মচারী রফিকুল ইসলাম ক্ষোভ জানিয়ে বলেন, দুই বছর আগেও এই সড়কে সিটি করপোরেশন খোঁড়াখুঁড়ি করেছে। পাইপ বসানোর ছয় মাস পর সড়ক মেরামত করা হয়। বর্তমানে যেখানে খোঁড়া হচ্ছে, সে সময় তা বাদ রাখা হয়েছিল। এখন এই অংশ খুঁড়ে নতুন করে দুর্ভোগের সৃষ্টি করা হয়েছে।
ডিএসসিসির সংশ্লিষ্ট ২ নম্বর অঞ্চলের নির্বাহী প্রকৌশলী হারুনুর রশিদ প্রথম আলোকে বলেন, দিলকুশা ছাড়াও মতিঝিল, ফকিরেরপুল, নয়াপল্টনসহ আশপাশের এলাকার জলাবদ্ধতা কমাতে পাইপ বসাতে হচ্ছে। খোঁড়াখুঁড়ির কাজ আগেই শুরু করার কথা থাকলেও কার্যাদেশ পেতে দেরি হয়ে যায়। কত দিনের মধ্যে খনন ও পাইপ বসানোর কাজ শেষ করা হবে, তা তিনি নির্দিষ্ট করে বলতে পারেননি।
এদিকে খোঁড়াখুঁড়ি চলছে পান্থপথে স্কয়ার হাসপাতালের কাছ থেকে পশ্চিমে গ্রিন রোড মোড়েও। গত বুধবার বিকেল সাড়ে পাঁচটার সেখানে গিয়ে দেখা যায়, পুরো সড়কে যানজট। গর্ত খোঁড়ায় স্কয়ার হাসপাতাল, শমরিতা হাসপাতালসহ স্থানীয় সব হাসপাতালে রোগী এবং তাঁদের নিকটজনদের যাতায়াতে সমস্যা হচ্ছে। শমরিতা হাসপাতালের সামনের সড়ক সবচেয়ে বেশি খোঁড়া হয়েছে। রাখা হয়েছে তিন ফুট ব্যাসের পাইপ। এমনিতেই এলাকার সড়কে ব্যক্তিগত গাড়ি ও মোটরসাইকেল রাখা নিষেধ। এখন গর্ত থাকায় গাড়ি থামানোও যাচ্ছে না। যেসব ব্যক্তি হাসপাতালে আসছেন, তাঁদের অনেক দূরে নামতে হচ্ছে।