এ বর্ষাতেও ঢাকায় জলাবদ্ধতার শঙ্কা
কয়েক বছর ধরেই বর্ষা মৌসুম রাজধানীবাসীর জন্য আসে আতঙ্ক হয়ে। সামান্য বৃষ্টিতেই ঘণ্টার পর ঘণ্টা জলাবদ্ধ থাকে রাজধানীর অনেক সড়ক। আসন্ন বর্ষা মৌসুমেও জলাবদ্ধতার এই ভোগান্তির শঙ্কা আছে। ঢাকার জলাবদ্ধতা নিরসনের দায়িত্বে থাকা সংস্থার কর্মকর্তারাই এই আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন।
ঢাকা ও চট্টগ্রামের জলাবদ্ধতা নিরসনে প্রয়োজনীয় কর্মপন্থা নির্ধারণ করতে গতকাল মঙ্গলবার সচিবালয়ে স্থানীয় সরকার বিভাগে সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন, ঢাকা ওয়াসার কর্মকর্তারা আসন্ন বর্ষা মৌসুমে জলাবদ্ধতা নিরসনে তাঁদের প্রস্তুতি তুলে ধরেন।
সভায় স্থানীয় সরকারমন্ত্রী তাজুল ইসলাম বলেন, ‘একটা দেশ স্বাধীন হওয়ার এত বছর পরেও জলাবদ্ধতার দায় এড়াতে পারি না। জনগণ অজুহাত শুনতে চায় না। অজুহাত শুনতে না চাওয়ার যৌক্তিক কারণও রয়েছে। বক্স কালভার্টের ভেতর হাজার হাজার টন বর্জ্য জমে আছে। খালগুলোতে প্রবাহ নেই, নদীগুলো দখল হয়ে গেছে।’
সভায় ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তারা বলেন, ১১টি এলাকায় জলাবদ্ধতার আশঙ্কা আছে। এগুলো সমাধানের করণীয় তুলে ধরেন সংস্থাটির অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী শরীফ উদ্দীন। তিনি বলেন, বিমানবন্দর সড়কের আর্মি স্টেডিয়াম থেকে বনানী ২৭ নম্বর পর্যন্ত সড়কের পশ্চিম পাশে প্রাকৃতিক জলাশয় ছিল। এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে কর্তৃপক্ষ এই জলাশয় মাটি ফেলে ভরাট করে ফেলেছে।
গত বর্ষায় সামান্য বৃষ্টিতে সচিবালয়ে হাঁটুপানি জমেছে বলে মন্তব্য করেন সভার সঞ্চালক স্থানীয় সরকার বিভাগের জ্যেষ্ঠ সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ। তিনি বলেন, গত বছর কাজীপাড়া, শেওড়াপাড়া, রোকেয়া সরণি, মিরপুরে সাংবাদিক কলোনি, মতিঝিল, নিকুঞ্জ ১ ও ২ এলাকায় জলাবদ্ধতা বেশি হয়েছিল। এবার এসব এলাকায় যেন জলাবদ্ধতা না হয়, সেটি নিশ্চিত করতে হবে।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শাহ মো. ইমদাদুল হক বলেন, সচিবালয়ের জলাবদ্ধতা নিরসনে নতুন পানিনিষ্কাশনের পাইপ বসানোর কাজ শুরু হয়েছে। সচিবালয় এলাকায় পানিনিষ্কাশনের সংযোগ দেওয়া হবে সেগুনবাগিচার বক্স কালভার্টে। শান্তিনগর, ধানমন্ডি ২৭, বেইলি রোড এলাকায় এবার জলাবদ্ধতা হবে না।
সচিবালয়ের পানিনিষ্কাশনের সংযোগ সেগুনবাগিচা বক্স কালভার্টে দেওয়ার বিষয়ে আপত্তি জানান ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক তাকসিম এ খান। তিনি বলেন, একটি বক্স কালভার্টের নির্দিষ্ট ধারণক্ষমতা আছে। এর বেশি পানি দেওয়া হলে তা উপচে পড়বেই। তিনি বলেন, মিরপুর এলাকায় জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষ খালকে প্লট বানিয়ে ফেলেছে। খালের জায়গায় বহুতল ভবন বানিয়েছে।
ঢাকা ওয়াসার পরিচালক (কারিগরি) এ কে এম সহীদ উদ্দিন একটা উপস্থাপনা দেন। তাতে দেখা যায়, ঢাকার খালগুলো দখলে-দূষণে বিপর্যস্ত। কোনো খালের জায়গায় সিটি করপোরেশন সড়ক তৈরি করেছে। কোনো খালের জায়গায় ফুটপাত নির্মাণ করা হয়েছে।
গতকালের সভায় জানানো হয়, ২০১৯-২০ অর্থবছরে ঢাকা দক্ষিণে ১৮০ কিলোমিটার নর্দমা নির্মাণ এবং ৫৫ কিলোমিটার নর্দমা সংস্কারের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।
স্থানীয় সরকারমন্ত্রী বলেন, ‘এবারের বর্ষা মৌসুমে যেন জলাবদ্ধতার কারণে অস্বস্তিকর অবস্থায় পড়তে না হয়। গতবার বলেছিলাম, নতুন দায়িত্ব নিয়েছি। এবার আর যেন একই কথা বলতে না হয়।’ তিনি ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের খাল দখলমুক্ত করাসহ স্থায়ীভাবে জলাবদ্ধতা নিরসনে উদ্যোগ নিতে দুটি মেগা প্রকল্প নেওয়ার নির্দেশ দেন।