আলু, পেঁয়াজ নিয়ে আছিয়াদের সংগ্রাম
আছিয়া বেগম! করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব কিছুটা কমলে রাজধানীর একটি বাড়িতে ছোটা বুয়া বা গৃহকর্মীর কাজ আবার ফেরত পেয়েছেন। স্বামী রাজমিস্ত্রি। তিন সন্তান নিয়ে সংসার চালানোই দায়। মাছ-মাংস তো খাবারের তালিকা থেকে বলতে গেলে বিদায় করা হয়েছে বহু আগে। নিত্যখাবার আলু, তেল, ডাল ও পেঁয়াজের দামও আকাশছোঁয়া। তেল-ডাল তো বাদ দাওয়ার উপায় নেই। বাঁচতে তো হবে।
আছিয়ার ছোট বাচ্চাটি রোদ আর গরমে কোলেই ঘুমিয়ে পড়েছে। রাজধানীর ফার্মগেটের খামারবাড়িতে সরকারের ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) ভ্রাম্যমাণ ট্রাকসেল কার্যক্রমের ট্রাকের কাছে দাঁড়িয়ে আজ দুপুরে কথা হয় আছিয়ার সঙ্গে। জানালেন, একটু আগে তিনি পণ্য হাতে পেয়েছেন। সকাল নয়টা থেকে লাইনে দাঁড়িয়ে ছিলেন। যে বাসায় কাজ করেন, সেখান থেকে বলে এসেছেন তাঁর কাজে যেতে দেরি হবে। তবে এত দেরি হবে তিনি বুঝতে পারেননি।
আছিয়া অবশেষে হাতে পেয়েছেন ৩ কেজি পেঁয়াজ, ২ কেজি আলু, তেল ৪ লিটার, আর ডাল ১ কেজি। দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকলেও সব হাতে পাওয়ার পর আছিয়ার মুখে হাসি। কারণ, বাজার থেকে পেঁয়াজ কিনতে হতো ৯০ টাকা কেজিতে, এখানে পেয়েছেন ৩০ টাকায়। আলু কিনতে হতো ৪০ থেকে ৫০ টাকা কেজি, এখানে পেয়েছেন ২৫ টাকা কেজিতে।
কত দিনের বাজার করলেন—এ প্রশ্নে আছিয়া বললেন, স্বামী-স্ত্রী আর তিন বাচ্চা—তিন বেলা খাবার। তাই বলা যাচ্ছে না আসলে তিনি কত দিনের বাজার করলেন।
খামারবাড়িতে শুধু আছিয়া নন, দুটি লাইনে পুরুষ আর তিনটি লাইনে দাঁড়িয়ে ছিলেন নারীরা। চাকরিজীবী, গৃহিণীসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ লাইনে দাঁড়ানো। একজন নারী জানালেন, তিনি বাচ্চাকে বাসার কাছে এক শিক্ষকের কাছে প্রাইভেট পড়াতে দিয়ে এসেছেন। পড়া শেষ, সেখান থেকে দুবার ফোন দিয়েছে। অথচ লাইনের শেষ মাথায় যেতে আরও অপেক্ষা করতে হবে। নারীদের অনেকের সঙ্গেই ছোট বাচ্চা। আর লাইন ভেঙে কেউ কেউ বাড়তি সুবিধা নিচ্ছেন বলেও লাইনে দাঁড়ানো মানুষদের অভিযোগ।
জানা গেল, নির্ধারিত সময়ের চেয়ে ট্রাকটি আজ কিছুটা দেরিতে এসেছে। এ কারণে লাইনের সংখ্যা সমানে লম্বা হচ্ছে। ট্রাকের ওপর মাত্র চারজন কর্মী। ডাল, পেঁয়াজ মেপে দিয়ে টাকা নিতে নিতে তাঁদের অবস্থাও কাহিল।