আপত্তিকর কনটেন্ট সরানোর ক্ষমতা বিটিআরসির নেই

রাজধানীর বিটিআরসি ভবনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত হয়ে বক্তব্য দেন ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার। বিটিআরসির সক্ষমতা নিয়ে কথা বলেন সংস্থাটির চেয়ারম্যান শ্যামসুন্দর সিকদার। ৬ সেপ্টেম্বর
ছবি: প্রথম আলো

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আপত্তিকর আধেয় (কনটেন্ট) সরানোর ক্ষমতা বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) নেই বলে জানিয়েছেন ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার। তিনি বলেন,‘ আমরা তাদের (সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম কর্তৃপক্ষ) কৃপার ওপর নির্ভরশীল। তারা তাদের মতো করে কমিউনিটি স্ট্যান্ডার্ড বানায়। সেটা আমাদের মেনে নিতে হবে।’

আজ সোমবার বিকেলে রাজধানীর বিটিআরসি ভবনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত হয়ে মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, ‘বিটিআরসির যদি সক্ষমতা থাকে, কিন্তু সেটি ব্যবহার করতে না পারে, তখন তাকে দায় দেওয়া যেতে পারে। কিন্তু আমার যে জায়গায় সক্ষমতাই নেই, যেটি করার ক্ষমতাই রাখি না, সেটির জন্য আমাকে দায়ী করা অবিচার করা হবে।’

আরও পড়ুন

গতকাল রোববার ব্যক্তিগত গোপনীয়তার অধিকার ক্ষুণ্ন করে, এমন সব ছবি, ভিডিও ও প্রতিবেদন বিভিন্ন অনলাইন প্ল্যাটফর্ম থেকে সরানোর নির্দেশনা চেয়ে এক রিটের শুনানিতে বিটিআরসির ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন হাইকোর্ট।

বিটিআরসির ভূমিকা নিয়ে হাইকোর্টের বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে এ সংবাদ সম্মেলন কি না, জানতে চাইলে মোস্তাফা জব্বার বলেন, ‘আদালত গতকাল যা বক্তব্য দিয়েছেন, তা মিডিয়ার মাধ্যমে জেনেছি। আদালতের বক্তব্যে পক্ষাবলম্বন, বিরোধিতা করা কোনোটাতেই আমরা নেই। আমাদের আদালতের কোনো বিষয় থাকলে আদালতে জবাবদিহি করব। আদালতের রায় হলে দেশের নাগরিক হিসেবে মেনে চলব, এর কোনো ব্যত্যয় করার অধিকার নেই।’

টেলিযোগাযোগমন্ত্রী বলেন, ‘ফেসবুকে কেউ একটি পোস্ট করেছেন, আমরা ইচ্ছা করলেই ফেসবুক বন্ধ করে দিতে পারি না। অথবা ইউটিউবে কেউ একটি ভিডিও ছেড়েছেন, পুরা ইউটিউব আমরা বন্ধ করে দিতে পারি না। এটি পৃথিবীর কোনো দেশই পারে না।’

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম নিয়ন্ত্রণ বিটিআরসির হাতে নেই

আপত্তিকর কনটেন্ট সরানোতে সক্ষমতার সীমাবদ্ধতা আছে উল্লেখ করে সংবাদ সম্মেলনে বিটিআরসি চেয়ারম্যান শ্যামসুন্দর সিকদার বলেন, ‘সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের নিয়ন্ত্রণ বিটিআরসির হাতে নেই। জায়গাটা বুঝতে হবে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে ফেসবুক ও ইউটিউবের সহযোগিতা ছাড়া আমরা কিছু করতে পারি না।’ তিনি বলেন, ‘আপত্তিকর কনটেন্ট অপসারণ করতে আমরা সক্ষম হয়েছি তাদের অনুরোধ করে। কিন্তু এর বাইরেও অনেক পরিমাণে কনটেন্ট আছে, তারা সরায়নি। এর কারণ, তারা তাদের দেশের আইনে চলে। তারা বলে, তাদের দেশের ও আমাদের কমিউনিটি স্ট্যান্ডার্ড এক না। আমরা অনুরোধ করলেই ফেসবুক সরায় না, ইউটিউবও সরায় না। তারা সেখানে কমিউনিটি স্ট্যান্ডার্ডের কথা বলে। এতই সীমাবদ্ধতা, সে ক্ষেত্রে কিছু করার থাকে না।’

আদালতের বক্তব্যের পরই এই সংবাদ সম্মেলন কেন, সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে সংবাদ সম্মেলনে বিটিআরসির চেয়ারম্যান শ্যামসুন্দর শিকদার বলেন, ‘আদালতের মন্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে আমাদের কোনো মন্তব্য নেই এবং কোনোভাবেই সেটা সমীচীন হবে না। আমি বিটিআরসির পক্ষ থেকে অবস্থান স্পষ্ট করতেই আপনাদের (সাংবাদিকদের) ডেকেছি।’

পরীমনির বিষয়ে ৮৫টি লিংক অপসারণের আবেদন

চিত্রনায়িকা পরিমনির ব্যক্তিগত ভিডিও প্রসঙ্গে জানতে চাইলে শ্যামসুন্দর শিকদার বলেন, ‘এটা অপসারণের ক্ষেত্রেও কোনো অনুরোধ আমাদের কাছে আসেনি। আমাদের কাছে আদালতের কোনো নির্দেশনা বা নায়িকার পক্ষ থেকে কোনো আবেদন আসেনি। কিন্তু গতকাল আদালতের যে পর্যবেক্ষণ এসেছে, তখন থেকেই আমরা অ্যাকশনে গিয়েছি।’ সংবাদ সম্মেলন থেকে জানানো হয়, পরীমনির ব্যক্তিগত ভিডিও–সংক্রান্ত ফেসবুকের কাছে ৫০টি লিংক ও ইউটিউবের ৩৫টি লিংক অপসারণের জন্য আবেদন জানানো হয়েছে।

ফ্রি ফায়ার ও পাবজি গেম বন্ধের পর এগুলোর ব্যবহার কী পর্যায়ে আছে, এমন প্রশ্নে বিটিআরসি জানিয়েছে, ‘পাবজি বন্ধ করা হয়েছে। কোনো কম্প্রোমাইজ করিনি।’
সংবাদ সম্মেলন থেকে বলা হয়, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের কর্তৃপক্ষগুলো তাদের নিজস্ব কমিউনিটি স্ট্যান্ডার্ড গাইডলাইন অনুযায়ী বিটিআরসি থেকে প্রাপ্ত অভিযোগগুলো বিশ্লেষণ করে কনটেন্ট ব্লক, অপসারণ, অ্যাকাউন্ট স্থগিত করে। এগুলো যেহেতু যুক্তরাষ্ট্র সরকারের রেজিস্টার্ড প্রযুক্তি কোম্পানি, সে অনুযায়ী অন্য কোনো দেশের অনুরোধ প্রতিপালন করার ব্যাপারে তাদের বাধ্যবাধকতা নেই।
সংবাদ সম্মেলনে বিটিআরসির ভাইস চেয়ারম্যান সুব্রত রায় মৈত্র, সিস্টেম অ্যান্ড সার্ভিস বিভাগের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নাসিম পারভেজ প্রমুখ সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন।