‘আধখানা ফাঁকিবাজি আধা সংগ্রাম’

পুরান ঢাকার ইসলামপুরের অনেক মার্কেটের সামনে নোটিশ ঝুলিয়ে প্রয়োজনে যোগাযোগ করার জন্য মুঠোফোন নম্বর দিয়ে রেখেছেন ব্যবসায়ীরা।
ছবি: প্রথম আলো

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে চলছে কঠোর বিধিনিষেধ। দোকানপাট, বাজার বন্ধ। পুরান ঢাকার ইসলামপুরে একটি মার্কেটের বিক্রেতা আবদুর রহমানের হাতে কোনো কাজ নেই। মন্দের ভালো, বিধিনিষেধে তিনি পেয়েছেন ভবন পাহারার কাজ। কিন্তু তাতে তো পেট চলে না। তাই দিনে ভবনের এক জায়গায় কিছু পোশাক বিক্রির কাজ করেন। আর বিকেলের পরই বসে পড়েন পাহারায়। পেট চালাতে এভাবেই চলে তাঁর লুকোচুরি। জীবন বাঁচাতে তাঁর এই লুকোচুরি মনে করিয়ে দেয় অর্ণবের গান ‘আধখানা ফাঁকিবাজি আধা সংগ্রাম’।

পুরান ঢাকার ইসলামপুর সড়কে ওই মার্কেটের সিঁড়িতে ওঠার করিডরে পাটি পেতে বসেন আবদুর রহমান। দুপুরের দিকে গিয়েই পাওয়া যায় তাঁকে। ১০ থেকে ১৫টি সালোয়ার কামিজ রাখা পাটিতে। এর মধ্যে কয়েকটি ঝুলিয়ে রেখেছেন। সড়কের বিপরীত পাশ থেকেই তাঁর কর্মকাণ্ড দেখা যায়। কাছে গিয়ে দেখা যায়, জায়গাটা কিছুটা অন্ধকার।

আবদুর রহমান নামের ওই বিক্রেতা জানান, ‘দিনে আমার পেট চালাইতেও কিছু খরচ লাগে। একটা-দুইটাও যদি বেচতে পারি, খাওনের টাকা জোগাড় হয়।’

আবদুর রহমান ডেকে নিয়ে সিড়ির পাশে রাখা একটি স্টোভ দেখালেন। পাশেই একটি ঝুড়িতে ঢেকে রাখা ভাত, তরকারি। জানালেন, লকডাউনের কারণে তিনিসহ আরেকজন ভবনটির পাহারার দায়িত্বে আছেন। ওই করিডরেই একটি বিছানা পাতা। সেখানেই দুজনে ঘুমান।

সরকারি বিধিনিষেধের মধ্যে পণ্য বিক্রি করছেন, পুলিশ বা ভ্রাম্যমাণ আদালত কেউ আসে কি না, জানতে চাইলে আবদুর রহমান জানান, আওয়াজ পেলেই সব ঢেকে ফেলেন। এ সময় ক্রেতা পাওয়ার বিষয়ে বলেন, অনেকেই বাজার করতে বা নানা প্রয়োজনে বের হন। তখন কেউ কেউ কেনেন। জানালেন, আজও ৩৫০ টাকায় একটি থ্রি–পিস বিক্রি করেছেন। বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত এভাবে পণ্য নিয়ে বসে থাকেন। তারপর মালামাল সরিয়ে রেখে একটি টুল নিয়ে মার্কেটের সামনে পাহারার কাজ করেন।

আবদুর রহমান বলছিলেন, আজ মঙ্গলবার অন্যান্য দিনের চেয়ে লোকজনের চলাচল বেশি। ইসলামপুরে দেখা গেলও তা-ই। এ সড়কে বেশির ভাগই পোশাকের পাইকারি মার্কেট। সব কটিরই শাটার নামানো। তবে প্রতিটি মার্কেটের সামনে বেশ কিছু লোক দাঁড়িয়ে আছেন। তাঁদের একজন মো. সোলায়মান। তিনি একটি দোকানের কর্মচারী। দাঁড়িয়ে থাকা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে জানান, একজনের জন্য অপেক্ষা করছেন।

ইসলামপুরের মার্কেটগুলোর বেশির ভাগ দোকানের সামনে লেমিনেটিং করা একটি নোটিশ ঝুলানো। সেখানে দোকানের নাম ও জরুরি প্রয়োজনে যোগাযোগের জন্য মুঠোফোন নম্বর দেওয়া আছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একটি দোকানের মালিক সেখানে প্রথম আলোকে বলেন, ‘দেড় বছরে ব্যবসা আর কয় দিন করতে পারছি। প্রতিবার ঈদের আগেই এ অবস্থা তৈরি হয়। আমাদের পাইকারি মার্কেটে বেচাই হয় ঈদের সময়। এখন দোকান বন্ধ। কিন্তু কিছু দেনাপাওনা থাকে। কোথাও মালও পাঠাইতে হয়।’

এই দোকানির কথার সত্যতা পাওয়া গেল। একটি মার্কেটের ভেতর থেকে একজন বড় দুটি থান কাপড়ের প্যাকেট নিয়ে বের হন। কোনো কোনো মার্কেটের গেটও খোলা এবং কোথাও কোথাও বাতিও জ্বলছে। তবে পুলিশ বা ভ্রাম্যমাণ আদালতের আগমন নিয়ে সবাই সতর্ক থাকেন।