ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা এক-তৃতীয়াংশ কমেছে: দাবি মেয়র আতিকের

ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের পেছনে রান্নাঘরের মতো একটি জায়গায় খোলা নালা ও চৌবাচ্চায় পানি জমে থাকতে দেখা যায়। তবে সেখানে এডিস মশার লার্ভা পাওয়া যায়নি
ছবি: প্রথম আলো

ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা গত বছরের তুলনায় এক-তৃতীয়াংশ কমিয়ে আনা গেছে। সঠিক পদক্ষেপ নিয়ে ডেঙ্গুবিরোধী ব্যাপক সচেতনতামূলক প্রচারের মাধ্যমে নগরবাসীকে বোঝাতে পারার কারণেই এটি সম্ভব হয়েছে।

আজ শনিবার ডেঙ্গুবিরোধী সচেতনতামূলক প্রচারাভিযানে এমন দাবি করেন উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র আতিকুল ইসলাম। এ সময় রাজধানীর মোহাম্মদপুরের লালমাটিয়ে এলাকায় সচেতনতামূলক প্রচার অভিযান ও মশকনিধন কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়।

মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেন, গত বছরের জুলাই মাসের এই সময়ে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ২ হাজার ৩০০ জন। এ বছরের জুলাই মাসে এখন পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছে ৮০০ জন। অর্থাৎ আক্রান্তের সংখ্যা এক-তৃতীয়াংশ কমিয়ে আনা গেছে।

নিজেদের আওতাধীন ৫৪টি ওয়ার্ডে মানুষের বাড়ি বাড়ি গিয়ে ডেঙ্গুবিরোধী প্রচার চালানো হয়েছে জানিয়ে মেয়র বলেন, ‘খালে কিংবা নালার পানিতে ডেঙ্গু রোগের বাহক এডিস মশার জন্ম হয় না। এ মশার জন্ম হয় স্বচ্ছ ও পরিষ্কার পানিতে। এটা নগরবাসীকে বোঝাতে চেষ্টা করেছি।’ তিনি এ সময় বলেন, মানুষ আগে চিন্তাও করেনি যে তারা নিজের ঘরে এডিস মশার জন্ম দিচ্ছে। এটাও কোনো দিন চিন্তা করতে পারেনি যে সরকারি প্রতিষ্ঠান ও কার্যালয়গুলোর বিরুদ্ধেও মামলা হতে পারে। কিন্তু মামলা করে দেখানো হয়েছে।

জরিমানার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘জনগণকে বলতে চাই আপনারা সাহায্য করুন, লার্ভা কোথায় আছে, সেই তথ্য দিন। আপনারা তথ্য দিলে কোনো জরিমানা করা হবে না। কিন্তু যদি অভিযান চালিয়ে লার্ভা পাওয়া যায়, তাহলে জরিমানা করা হবে।’

ড্রোনের মাধ্যমে বাড়ির ছাদে মশার উৎস খোঁজা হচ্ছে জানিয়ে মেয়র বলেন, প্রতিটি অঞ্চলে বাড়ির ছাদ পরিদর্শন করা হচ্ছে। এখন পর্যন্ত ২২ হাজারের বেশি বাড়ির ছাদে ড্রোন দিয়ে দেখা হয়েছে। ড্রোনের মাধ্যমে মশার উৎস খুঁজে বের করা হচ্ছে।

সচেতনতামূলক কার্যক্রমে মশকনিধনেও অভিযান চালানো হয়। এ সময় মেয়রসহ ঢাকা উত্তর সিটির স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তা ও মশকনিধনকর্মীরা লালমাটিয়া এলাকায় ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স স্টেশন, ঢাকা পাওয়ার সাপ্লাই কোম্পানিসহ (ডিপিডিসি) একাধিক আবাসিক ভবনে যান। ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের পেছনে রান্নাঘরের মতো একটি জায়গায় খোলা নালা ও চৌবাচ্চায় পানি জমে থাকতে দেখা যায়। তবে সেখানে এডিস মশার লার্ভা পাওয়া যায়নি। পরে মেয়র চৌবাচ্চার পানি সেচে ফেলে দেওয়ার নির্দেশ দেন। আর নালায় লার্ভিসাইড ওষুধ ছিটানো হয়।

বাসাবাড়ি ও নির্মাণাধীন ভবনের যেসব জায়গায় জমে থাকা পানিতে এডিস মশার জন্ম হতে পারে, এমন জায়গায় মশকনিধনকর্মীরা লার্ভা নিধনের লার্ভিসাইড ওষুধ ছিটানোর কাজ করেন। পাশাপাশি ডেঙ্গুবিরোধী বিভিন্ন প্রচারপত্র বিতরণ ও স্টিকার লাগানো হয়।
ঢাকা উত্তর সিটির স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, তাদের নগর স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলোতে ডেঙ্গু শনাক্তের কিট দেওয়া রয়েছে। যে কেউ স্বাস্থ্যকেন্দ্রে গিয়ে ডেঙ্গুর পরীক্ষা করাতে পারবেন। এই পরীক্ষা সম্পূর্ণ বিনা মূল্যে করানো হচ্ছে।

সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে নগরবাসীর প্রতি অনুরোধ জানিয়ে বলা হয়, ‘১০টায় ১০ মিনিট প্রতি শনিবার, নিজ নিজ বাসাবাড়ি, অফিস করি পরিষ্কার, এই হোক আমাদের অঙ্গীকার।’

অভিযানে ঢাকা উত্তর প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল জোবায়দুর রহমান, অঞ্চল-৫–এর আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা মোতাকাব্বির আহমেদসহ করপোরেশনের অন্য কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।