শিশুরা বাবুল্যান্ডে খেলাধুলায় মত্ত। মা-বাবার একাংশ তখন উপভোগ করছিলেন ‘মিউজিক্যাল চেয়ার’। তরুণ-তরুণীদের কেউ কেউ ভিড় জমিয়েছিলেন বইয়ের দোকানে। কেউ আবার প্রিয়জনের সঙ্গে ছবি তুলে বিনা পয়সায় প্রিন্ট করে নিচ্ছিলেন। অনেকেই ব্যস্ত ছিলেন রণপার সঙ্গে ছবি তুলতে।
রাজধানীর উত্তরার ১২ নম্বর সেক্টর পার্কে প্রথম আলো আনন্দমেলায় শুক্রবার বিকেলের চিত্র ছিল এমনই। শুধু বিকেল নয়, পুরো দিনটিই ছিল ছোট-বড় সবার জন্য আনন্দঘন। সকাল আটটায় শুরু হয় এ মেলা। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে শিশু-কিশোর ও অভিভাবকসহ এলাকাবাসীর আগমনে তা জমজমাট হয়ে ওঠে।
মেলায় সকাল সোয়া আটটার দিকে তিন শতাধিক শিশু চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়। এক ঘণ্টার এই প্রতিযোগিতার সময় শিশুদের পাশে দাঁড়িয়ে দেখছিলেন তাদের অভিভাবকেরা। এমনই একজন ১২ বছর বয়সী ওমরাজ দাশের মা রিনি দাশ। তিনি বলেন, প্রথম আলো আনন্দমেলায় যে চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা হবে, তা ছেলেই তাঁকে জানিয়েছিল। তাই প্রতিযোগিতায় ছেলেকে নিয়ে এসেছেন তিনি।
চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা ছাড়াও আনন্দমেলায় বিস্কুট দৌড়, মার্বেল দৌড়, পুতুলনাচ, রোবট শো, মিউজিক্যাল চেয়ার প্রতিযোগিতা, বায়োস্কোপ, র্যাফেল ড্রসহ নানা ধরনের আয়োজন ছিল। ছিল শিশুদের জন্য গান, গজল ও কবিতা আবৃত্তির আসর।
আনন্দমেলায় রোবট শো ও পুতুলনাচ কাছাকাছি সময় অনুষ্ঠিত হয়। যখন উপস্থাপক শিশুদের কাছে জানতে চান, আগে কোনটা দেখানো হবে? শিশুরা সমস্বরে বলে ওঠে, ‘রোবট শো।’ এরপর শুরু হয় রোবটের মারামারি, পুশআপ ও নাচ। রোবটের নাচের তালে তালে নাচতে শুরু করে শিশুরাও। পুতুলনাচেও ছিল উপচে পড়া ভিড়।
আপনজনের সঙ্গে স্মৃতি ধরে রাখার ব্যবস্থাও ছিল মেলায়। একটি কর্নারে ছবি তুলে তা প্রিন্ট করে নেওয়ার ব্যবস্থা ছিল। সাত বছরের আয়াফ আহসানের সঙ্গে মামা সাইফুর রহমান ছবি তোলেন। সেই ছবি বিনা মূল্যে প্রিন্ট করে নেন তাঁরা। সাইফুর রহমান বলেন, ‘মামা-ভাগনে ছবি তুলেছি। পরে সেটি প্রিন্ট করে ফ্রেমে নিয়ে যাচ্ছি। বিষয়টি খুবই ভালো লেগেছে। প্রত্যাশার চেয়েও বেশি।’
উত্তরা-৫ নম্বর সেক্টর থেকে আসা মালিহা জান্নাত অংশ নেয় মার্বেল দৌড়ে। তবে কোনো পুরস্কার পায়নি। এ নিয়ে কোনো খেদ নেই মালিহার মনে। সে জানায়, অংশ নিতে পেরেই তার ভালো লেগেছে। এর আগে কখনো এমন খেলার সুযোগ হয়নি।
মেলায় মোজো কর্নারে ছিল লুডু ও ফুটবল খেলার আয়োজন। ৫০০ মিলিগ্রাম মোজো কিনলে দেওয়া হচ্ছিল একটি টোকেন। সেই টোকেন দিয়ে লুডু খেলে লটারিতে পুরস্কার জেতার সুযোগ ছিল। একইভাবে টোকেন দিয়ে ফুটবল খেলায় গোল দিতে পারলে পাওয়া যাচ্ছিল নিশ্চিত কোনো না কোনো পুরস্কার। এসব খেলায় বহু মানুষ অংশ নেন। যেমন স্ত্রী-সন্তানকে নিয়ে উত্তরা ৪ নম্বর সেক্টর থেকে আসা মো. আতিকুজ্জামান। তিনি বলেন, এখানে বাচ্চারা খুবই আনন্দ করতে পারছে।
প্রথমা ডটকমের একটি বইয়ের দোকানও ছিল মেলায়। সেখানে কথাসাহিত্যিক আনিসুল হকের ‘ব্যাংক ডাকাত আর গুড্ডুবুড়া’, আখতার হুসেনের ‘ইশপের ১০০ গল্প’, পলাশ মাহবুবের ‘তিন দুরন্তর শিক্ষাসফর’সহ নানা বই ছিল। বইয়ের দোকানে থাকা আল মাসুদ বলেন, দোকানে বাচ্চাদের বইয়ের বেশি রাখা হয়েছে। প্রথমাসহ অন্য প্রকাশনীর বইও রয়েছে। ২৫ শতাংশ ছাড়ে এসব বই বিক্রি করা হচ্ছে।
মেলায় এসে কেউ অসুস্থ হয়ে পড়লে তার প্রাথমিক চিকিৎসার ব্যবস্থা ছিল। সেই সঙ্গে বিনা মূল্যে রক্তচাপ মাপা, ডায়াবেটিক পরীক্ষা, দাঁতের চিকিৎসা ও ওজন মাপাসহ নানা ধরনের চিকিৎসাসেবা দেওয়া হয়। আইসক্রিম, পিঠা, ফুচকা, বার্গারসহ নানা ধরনের মুখরোচক খাবারের আয়োজনও ছিল এখানে। অংশগ্রহণকারীরা বলেন, এ ধরনের আয়োজন একদিকে যেমন বাংলার সংস্কৃতিকে ধারণ করে, একই সঙ্গে এলাকাবাসীর মধ্যে বন্ধনও দৃঢ় করে।
দিনব্যাপী এই আয়োজনের শেষ দিকে ছিল র্যাফেল ড্র। আর বিকেলে ছিল মিউজিক্যাল চেয়ার খেলা। সেখানে অংশ নিয়ে শুরুতেই বাদ পড়ে যান উত্তরা ১৪ নম্বর সেক্টর থেকে স্ত্রী ও দুই সন্তানকে নিয়ে আসা সাদনিম মাহমুদ। তিনি বলেন, ঢাকা শহরে এমন আয়োজন খুব কম হয়। যেখানে এলাকাবাসী যেমন এসে একসঙ্গে হতে পারে, আবার বাংলার চিরাচরিত সংস্কৃতি সম্পর্কেও জানতে পারে। যেমন বায়োস্কোপ, পুতুলনাচ ও বিস্কুট দৌড়ের মতো অনেক খেলাই তাঁর বাচ্চারা আগে দেখেনি। তাই এ রকম আয়োজন আরও হওয়া দরকার বলে মনে করেন তিনি।
আনন্দমেলায় উপস্থিত হওয়ার জন্য এলাকাবাসীর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন প্রথম আলোর সহযোগী সম্পাদক সুমনা শারমীন। সংবাদপত্র পড়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, প্রথম আলো পড়লেই প্রথম আলোর সঙ্গে থাকা হবে। এ সময় উপস্থিত ছিলেন প্রবীণ অভিনেত্রী দিলারা জামান।
প্রথম আলো আনন্দমেলার টাইটেল স্পন্সর হিসেবে ছিল এসিআই পিওর। সহযোগিতায় ছিল ডি-এক্স নিউ এনার্জি এবং বেভারেজ পার্টনার হিসেবে ছিল মোজো। এ ছাড়া আনন্দমেলায় ব্যবস্থাপনা সহযোগিতায় ছিল উত্তরা সেক্টর-১২ ওয়েলফেয়ার সোসাইটি, স্যাভলন, নিউজিল্যান্ড ডেইরি, নভোএয়ার, সান কুইক, বাবুল্যান্ড, নিউট্রিপ্লাস, কাজী ফার্মস কিচেন, ঢাকা স্পেশালাইজড হসপিটাল, বেলামে ও জাএনজি আইসক্রিম।