উত্তরার সংঘর্ষেই ১১ জনের মৃত্যু, আহত অনেকে

উত্তরায় পুলিশ ও র‍্যাবের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের দিনভর সংঘর্ষ হয়েছে। তিন হাসপাতাল থেকে ১১ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে।

পুলিশের কাঁদানে গ্যাসের শেল থেকে বাঁচতে টায়ারে আগুন দেন আন্দোলনকারীরা। গতকাল দুপুরে উত্তরায়ছবি: সংগৃহীত

রাজধানীর উত্তরায় পুলিশ ও র‍্যাবের সঙ্গে দিনভর সংঘর্ষে অন্তত ১১ জন নিহত হয়েছেন। হাসপাতাল সূত্র বলছে, আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নেওয়া ব্যক্তির সংখ্যা ৫০০ ছাড়িয়ে যাবে। গতকাল বৃহস্পতিবার বেলা ১১টার পর সংঘর্ষ শুরু হয়। রাত ১২টায় এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা বিক্ষিপ্তভাবে সড়কে অবস্থান করছিলেন।

উত্তরার হাউস বিল্ডিং থেকে জসীমউদ্‌দীন পর্যন্ত পুরো এলাকায় সংঘর্ষ হয়। সংঘর্ষ চলাকালে বিজিবির একটি, পুলিশের চারটি, কয়েকটি মোটরসাইকেলসহ বিভিন্ন যানবাহন ভাঙচুর এবং কয়েকটিতে আগুন দেওয়া হয়। ট্রাফিকের দুটি পুলিশ বক্সেও আগুন দেওয়া হয়েছে। হাউস বিল্ডিং এলাকায় বাস র‍্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) উড়ালসড়কের ওপর একটি বিআরটিসি বাসেও আগুন দেওয়া হয়।

কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের ঢাকা ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ বা সর্বাত্মক অবরোধ কর্মসূচির অংশ হিসেবে গতকাল সকাল সাড়ে ১০টার দিকে উত্তরার সাইদগ্রান্ড সেন্টারের সামনে জড়ো হন স্থানীয় বিভিন্ন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজের শিক্ষার্থীরা। এ সময় তাঁরা বিমানবন্দর সড়কে উঠতে চাইলে পুলিশ ও র‍্যাব সদস্যরা বাধা দেন। কিন্তু শিক্ষার্থীরা বাধা উপেক্ষা করে সড়কে ওঠার চেষ্টা করেন। এতে সংঘর্ষ বাধে।

আন্দোলনকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ ও র‍্যাব কাঁদানে গ্যাসের শেল ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে। এ সময় আন্দোলনকারীরাও ইটপাটকেল মারতে থাকেন। ফলে পুরো এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। সংঘর্ষের ব্যাপ্তি ছিল প্রায় তিন কিলোমিটার এলাকা।

সরেজমিনে দেখা যায়, দুপুরের দিকে আন্দোলনকারীরা ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের দুই দিকে অবস্থান নেন। র‍্যাব ও পুলিশ সদস্যরা ছিলেন মাঝখানে। পাল্টাপাল্টি ধাওয়া, ইটপাটকেল, কাঁদানে গ্যাসের শেল ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ চলতে থাকে। একপর্যায়ে রাজলক্ষ্মী এলাকায় ট্রাফিক পুলিশ বক্সে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। পাশাপাশি সড়কে থাকা বেশ কয়েকটি গাড়ি ভাঙচুর করা হয়।

পুলিশ ও র‍্যাব বিপুল পরিমাণ রাবার বুলেট ও ছররা গুলি করে। এতে দিনভর বহু আন্দোলনকারী আহত হন। আহতদের আন্দোলনকারীরাই উদ্ধার করে স্থানীয় বিভিন্ন হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানকার হাসপাতালগুলো আহতদের সামলাতে হিমশিম খেতে থাকে।

উত্তরা আধুনিক মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের অধ্যক্ষ সাব্বির আহমেদ খান গতকাল রাতে প্রথম আলোকে বলেন, তাঁর হাসপাতালে মৃতের সংখ্যা ৬। দুপুর সোয়া ১২টার দিকে প্রথমে আনা হয় নর্দান ইউনিভার্সিটির এক ছাত্রকে, তাঁর বাড়ি সাতক্ষীরা। তাঁর নাম আসিফ। তিনি ইংরেজি বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র। তাঁকে মৃত অবস্থায় আনা হয়েছিল। ৫টার দিকে আরেকজনকে আনা হয়। তিনি হাসপাতালে আসার পর মার যান। তাঁর বুকে গুলির ক্ষতচিহ্ন ছিল। নাম সাকিল।

অধ্যক্ষ আরও বলেন, সাড়ে পাঁচটার দিকে মাথায় ও বুকে গুলির ক্ষতচিহ্ন নিয়ে আরও তিনজন আসেন। তাঁদের আনা হয় মৃত অবস্থায়। সন্ধ্যায় আরেকজনকে আনা হয় মৃত অবস্থায়।

বিকেলের দিকে উত্তরার বাংলাদেশ-কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সেখানে চারজন মারা গেছেন। হাসপাতালটির পরিচালক মিজানুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, চারজনের মধ্যে দুজন শিক্ষার্থী। দুজনের সম্পর্কে বিস্তারিত কিছু জানা যায়নি। হাসপাতালটিতে বহু আহত আন্দোলনকারী চিকিৎসা নিয়েছেন বলে জানান তিনি।

এদিকে উত্তরার ক্রিসেন্ট হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, সেখানে মারা গেছেন আরেকজন। তাঁর বিস্তারিত পরিচয় জানা যায়নি।

বিকেলে উত্তরা পূর্ব থানা ঘিরে বিক্ষোভ করেন আন্দোলনকারীরা। পুলিশ তখন থানার ভেতরে এবং বাইরে ছিল। রাতে আন্দোলনকারীরা আবার মহাসড়কে এসে বিক্ষোভ করেন। তখন স্থানীয় অনেকেই তাঁদের সঙ্গে যোগ দেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন আন্দোলনকারী বলেন, আহতের সংখ্যা বহু। সব হাসপাতালে খোঁজ নিলে পূর্ণাঙ্গ চিত্র পাওয়া যাবে। মৃতের সংখ্যাও বাড়তে পারে। কারণ, কেউ সঠিক হিসাব দিতে পারছিলেন না।