পাঁচ দিন পর যাত্রাবাড়ী এলাকা সেনাবাহিনী–পুলিশের নিয়ন্ত্রণে

সেনাপ্রধান ও পুলিশপ্রধান গতকাল এই এলাকা পরিদর্শন করেন। সেখানে যে ধ্বংসযজ্ঞ চলেছে, তা অবর্ণনীয় বলে উল্লেখ করেন সেনাপ্রধান।

সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল ওয়াকার–উজ–জামান গতকাল রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে মোতায়েন করা সেনাসদস্যদের কার্যক্রম পরিদর্শন করেন। এ সময় ঊর্ধ্বতন সেনা কর্মকর্তারা তাঁর সঙ্গে ছিলেনছবি: আইএসপিআর

টানা পাঁচ দিন পর ঢাকার যাত্রাবাড়ী থেকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের শিমরাইল-চিটাগং রোড এলাকা সেনাবাহিনী ও পুলিশের নিয়ন্ত্রণে এসেছে। গতকাল সোমবার যাত্রাবাড়ী এলাকা পরিদর্শনে যান সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান, পুলিশের মহাপরিদর্শক চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।

সবাই মিলে কাজ করলে শিগগিরই পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে যাবে।
জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান, সেনাপ্রধান

কোটা সংস্কারের দাবিতে ছাত্র আন্দোলন ঘিরে সবচেয়ে বেশি সংঘাত-সহিংসতা ও হতাহতের ঘটনা ঘটেছে রাজধানীর যাত্রাবাড়ী, উত্তরা, বাড্ডা ও মিরপুর এলাকায়। এর মধ্যে যাত্রাবাড়ী থেকে চিটাগং রোড পর্যন্ত এলাকার বিভিন্ন স্থানে গত বুধবার থেকে মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন আন্দোলনকারীরা। এতে ঢাকার গুরুত্বপূর্ণ এই প্রবেশপথে যান চলাচল পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়। বিক্ষোভকারীদের হটাতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী দফায় দফায় সাউন্ড গ্রেনেড, কাঁদানে গ্যাস ও গুলি ছোড়ে। এমনকি হেলিকপ্টার থেকেও কাঁদানে গ্যাস ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করা হয়।

এই এলাকায় পাঁচ দিন ধরে চলা সংঘর্ষে অন্তত ৩০ জন নিহত হয়েছেন। তাঁদের মধ্যে দুই পুলিশ সদস্যও রয়েছেন। এর বাইরে গুলিবিদ্ধসহ আহত হয়েছেন কয়েক শ মানুষ। সর্বশেষ গত রোববারও শিমরাইল এলাকায় বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সংঘর্ষে পাঁচজন নিহত হন।

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী গতকাল এলাকাটি পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার পর সেখানে পরিদর্শনে যান সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান। এ সময় তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘ক্ষোভ থাকতে পারে, কিন্তু এই যে আমাদের জনগণের সম্পদ, এটা ধ্বংস করে কী লাভ, সেটা আমার কাছে দুর্বোধ্য। এখানে যে পরিমাণ ধ্বংসযজ্ঞ চলেছে, যে পরিমাণ জনগণের সম্পত্তির ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, এটা অবর্ণনীয়।’

সবাই মিলে আবার দেশটাকে সুন্দর-স্বাভাবিক জায়গায় নিয়ে যেতে চান উল্লেখ করে সেনাপ্রধান বলেন, ‘আমরা সবাই যদি এক থাকি, সবাই যদি আমাদের সহযোগিতা করেন, জনগণ সহযোগিতা করেন এবং আমরা একসঙ্গে সুন্দরভাবে কাজ করতে পারলে আমি নিশ্চিত, আমরা আবার সুন্দরভাবে আগের জায়গায় চলে যেতে পারব। স্বাভাবিক জীবনযাত্রায় ফিরে যেতে পারব। সেই লক্ষ্যেই আমরা কাজ করছি। সবাই মিলে আমরা কাজ করলে শিগগিরই পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে যাবে।’

এদিকে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) থেকে জানানো হয়েছে, সেনাবাহিনী প্রধান গতকাল ঢাকা মহানগরের বিভিন্ন স্থানে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে মোতায়েনকৃত সেনাসদস্যদের কার্যক্রম পরিদর্শন করেন। এ সময় সেনাপ্রধান বলেন, জনগণের স্বার্থে এবং রাষ্ট্রের যেকোনো প্রয়োজনে সেনাবাহিনীর সদস্যরা অক্লান্ত পরিশ্রম করে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে দেশব্যাপী কাজ করে যাচ্ছে। এ বিষয়ে সেনাবাহিনীকে সহায়তা করার জন্য সবাইকে বিশেষভাবে অনুরোধ জানান তিনি।

গতকাল যাত্রাবাড়ী এলাকা পরিদর্শন করেন পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন, র‌্যাবের মহাপরিচালক মো. হারুন অর রশিদ ও ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমানও। এ সময় আইজিপি সাংবাদিকদের বলেন, ‘প্রতিটি অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের জন্য পাই পাই করে হিসাব দিতে হবে।’ এ দেশের মানুষের জীবনহানি করে এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটিয়ে তারা কী করতে চেয়েছিল, সে প্রশ্ন করেন তিনি।

ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান বলেন, কিছুদিন আগে থেকেই অপতৎপরতা চালানোর জন্য ঢাকার বাইরের বিভিন্ন এলাকা থেকে সন্ত্রাসীরা এখানে এসে ঘাঁটি গেড়েছে। পুলিশ সদস্যদের হত্যা করার জন্য টাকা দিয়ে মানুষ নিয়োগ করা হয়েছে। তিনি বলেন, ঢাকার অধিকাংশ এলাকা নিয়ন্ত্রণে এসেছে। দুই-এক দিনের মধ্যে পুরো এলাকায় নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে।