সরকারের তদন্তে বিশ্বাস নেই, জাতিসংঘের অধীন তদন্ত চাই: প্রতিবাদ মঞ্চ

রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে প্রতিবাদ মঞ্চের ব্যানারে নাগরিক সমাজের মানববন্ধনছবি: শুভ্র কান্তি দাশ

কোটা আন্দোলনকে কেন্দ্র করে সরকার যেসব তদন্ত কমিটি গঠন করেছে, তা দেশের মানুষ মানে না বলে মনে করে নাগরিক সমাজ। তারা বলছে, সরকারের তদন্তের প্রতি তাদের বিশ্বাস নেই। কোটা আন্দোলনে নিহত, আহত ও ধ্বংসযজ্ঞের তদন্ত হতে হবে জাতিসংঘের অধীন।

‘হত্যাকারীর বিচার চাই’ শীর্ষক এক মানববন্ধনে নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা এসব কথা বলেন। আজ শুক্রবার সকালে রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে প্রতিবাদ মঞ্চের ব্যানারে নাগরিক সমাজ এই মানববন্ধনে করে।

মানববন্ধন শেষে ‘শিক্ষার্থী-জনতা হত্যা, হামলা ও মামলার’ প্রতিবাদে নাগরিক সমাজ একটি শোক র‍্যালি করে। বৃষ্টির মধ্যে শোক র‍্যালিটি জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে থেকে শুরু হয়ে হাইকোর্ট এলাকা ঘুরে আবার প্রেসক্লাবে এসেছে শেষ হয়।

মানববন্ধন সঞ্চালনা করেন মানবাধিকারকর্মী মো. নূর খান। আন্দোলনকে কেন্দ্র করে হতাহত ও ধ্বংসযজ্ঞের ঘটনায় জাতিসংঘ ও বিভিন্ন দেশের কাছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কারিগরি সহযোগিতা চাওয়া প্রসঙ্গ টেনে মানববন্ধনে নূর খান বলেন, প্রশ্ন হচ্ছে, এই ধরনের হত্যার পর যখন বলা হলো, শিক্ষার্থীরা মারা গেছেন তাঁদের ভেতরে থাকা জঙ্গিদের আক্রমণে, সন্ত্রাসীরা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করে মেরেছে। তদন্তের আগেই এ ধরনের বক্তব্যের ফলে স্বাধীনভাবে তদন্ত করার আর সুযোগ নেই। কোনো অবস্থাতেই এই সরকারের অধীন স্বাধীন তদন্ত হতে পারে না। জাতিসংঘের অধীন এই তদন্ত হতে হবে। গ্রেপ্তার হওয়া শিক্ষার্থী, শ্রমিক, জনতার অবিলম্বে মুক্তিও দাবি করেন তিনি।

একমাত্র জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানেই নিরপেক্ষ তদন্ত সম্ভব বলে মনে করেন মানবাধিকার সংস্থা অধিকারের সম্পাদক আদিলুর রহমান খান। মানববন্ধনে তিনি বলেন, ‘আমাদের শত শত সন্তানকে হত্যা করা হয়েছে। নির্যাতন করা হচ্ছে এখনো। এর অবসান করতেই হবে।’

শিক্ষার্থীদের সঙ্গে তাঁদের অভিভাবক, শিক্ষক ও জনতা রাস্তায় নেমে এসেছে বলে মনে করেন আদিলুর রহমান খান। তিনি বলেন, তাঁরা প্রতিকার চান। অন্যায়ের সমাপ্তি চান। পদত্যাগ চান এই সরকারের। সরকারের পদত্যাগের মধ্য দিয়ে জনগণের কাঙ্ক্ষিত বাংলাদেশ আজকের এই তরুণ-যুবকেরা তৈরি করবে। যে বাংলাদেশে সব বৈষম্য, অন্যায়, নির্যাতন, গুম ও বিচারবহির্ভূত হত্যা বন্ধ করা হবে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস বলেন, দেশে গণ-অভ্যুত্থান হয়ে গেছে। এই গণ-অভ্যুত্থানে ভাষা আন্দোলন ও উনসত্তরের গণ-অভ্যুত্থানের চেয়ে বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে। আওয়ামী লীগ সরকারের হাতে শিক্ষার্থী হত্যার রক্ত। তাই এমন কারও কাছে বিচার চাইতে হবে, যার হাতে রক্তের দাগ নাই।

জনগণ ও ছাত্রসমাজ গণতান্ত্রিক ও বৈষম্যহীন দেশ চায় উল্লেখ করে জাতীয় মুক্তি কাউন্সিলের সম্পাদক ফয়জুল হাকিম বলেন, একাত্তরের মতো জীবন দিয়ে শিক্ষার্থী-তরুণেরা দেখিয়ে দিয়েছে যে মুক্তির জন্য জীবন বিলিয়ে দিতে হয়।

কারা গুলি করেছে, তা ভিডিওতে এখনো দেখা যায় বলে মন্তব্য করেন নাগরিক উদ্যোগের প্রধান নির্বাহী জাকির হোসেন। তিনি বলেন, কারা গুলি করেছে, তা এ দেশের মানুষ জানে। সরকার থেকে যেসব তদন্ত কমিটি করা হয়েছে, সেসব কমিটি এ দেশের মানুষ মানে না। আমাদের এই তদন্তে বিশ্বাস নাই। জাতিসংঘের আওতায় এই তদন্ত হতে হবে। অপরাধ ঢাকার জন্য সরকার জনগণের কাছে নমনীয় ভাব প্রকাশ করছে। তবে তা দিয়ে শেষ রক্ষা হবে না।