অযৌক্তিক দাবি করা ব্যক্তি–প্রতিষ্ঠানকে প্রতিহতের মনোবল ধারণ করতে হবে: সারজিস আলম

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় ও জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশন আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক সারজিস আলমছবি: জান্নাতুল নাঈম

অযৌক্তিক বিভিন্ন দাবি, চাওয়া নিয়ে বাধা হয়ে দাঁড়ানো ব্যক্তি, গোষ্ঠী ও প্রতিষ্ঠানকে প্রতিহত করার মনোবল ধারণ করতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন সারজিস আলম।

জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক সারজিস বলেছেন, ‘এখনো আগের মতো ফ্যাসিস্টদের বাধার মুখোমুখি হতে আমরা যদি ভয় পাই, বিব্রত হই; তাহলে যেই বাংলাদেশের স্বপ্ন আমরা দেখছি, সেই বাংলাদেশ আমরা প্রত্যাশা করতে পারি না।’

আজ সকালে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় ও জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশন আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে সারজিস আলম এসব কথা বলেন।

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত কলেজ বা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পড়া শিক্ষার্থীদের মধ্যে যাঁরা ২০২৪–এর জুলাই-আগস্টের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে মৃত্যুবরণ করেছেন, তাঁদের প্রত্যেকের পরিবারকে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব তহবিল থেকে আর্থিক অনুদান দিতেই মূলত এই আয়োজন। এদিন ২৫টি পরিবার তিন লাখ টাকা করে অনুদান পায়।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সিনিয়র সচিব সিদ্দিক জোবায়ের। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের প্রধান নির্বাহী মীর মাহবুবুর রহমান (স্নিগ্ধ) এবং সারজিস আলম। সভাপতিত্ব করেন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এ এস এম আমানুল্লাহ।

অনুষ্ঠানের শুরুতে স্বাগত বক্তব্যে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-উপাচার্য মো. লুৎফর রহমান শহীদদের পরিবারের প্রতি শ্রদ্ধা জানান।

সারজিস আলম বলেন, ‘এই রাষ্ট্র কাঠামো পরিচালনায় এখনো বিভিন্ন জায়গায় আমরা বিভিন্ন ব্যত্যয় দেখি। এর কারণটি হচ্ছে, যারা বিগত ১৬ বছরে সুবিধাভোগী ছিল, তারা এখনো বিভিন্ন চেহারায় হয় ঘাপটি মেরে আছে, না হয় গিরগিটির মতো নিজের রূপ পাল্টিয়েছে। সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে, আমরা যখন বিভিন্ন সিস্টেমে রাষ্ট্র কাঠামোর যৌক্তিক দাবি নিয়ে যাই, এখনো তারা তাদের জায়গা থেকে বিভিন্ন ওজর ও অবহেলা দেখায়।’

শিক্ষা খাতে যে অস্থিরতা তৈরি হয়েছে, সেটা গ্রহণযোগ্য নয় উল্লেখ করে প্রধান অতিথির বক্তব্যে সিদ্দিক জোবায়ের বলেন, ‘যে ভুল আমরা ৭১–এ করেছি, সেটা যেন আবারও না করি। গতকালের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা নিয়ে আমরা কাজ করছি। সরকার ও আমি মনে করি, এর পেছনে ইন্ধন রয়েছে। এটা একটা বড় পরিকল্পনার অংশ। যে উদ্দেশ্যে আন্দোলন করেছি, সেটা সুফল করতে ক্লাসে ফেরাসহ অন্যান্য কাজে ফিরতে হবে।’

শহীদ পরিবারগুলোর কষ্টের বর্ণনা দিয়ে মাহবুবুর রহমান (স্নিগ্ধ) বলেন, জুলাইয়ের ৩৬টা দিন কেমন ছিল, শুধু উপস্থিত শহীদ পরিবারই তা জানে। যে মা শিশুকে জন্ম দিয়েছে, বড় করেছে, সেই সন্তানের মরা মুখ দেখার কষ্ট শুধু ওই মা বোঝেন। অন্য সবাই স্বাভাবিক জীবনে ফিরলেও শহীদ ও আহত পরিবারগুলো স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারেনি। তাই রক্তের বিনিময়ে যাঁরা সুন্দর বাংলাদেশ এনে দিয়েছে, নিজেদের জায়গা থেকে সেসব পরিবারের পাশে থাকুন।

অনুষ্ঠানের সভাপতি ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এ এস এম আমানুল্লাহ বলেন, এই আন্দোলন বিশ্বের অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ্যসূচিতে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। আন্দোলন নিয়ে কাজ করা গবেষকেরাও এ বিষয়ে অবগত। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ্যসূচিতে বাংলাদেশ ও তার অভ্যুদয়ের ইতিহাসকে জুলাই আগস্ট পর্যন্ত টানা হয়েছে।

অনুষ্ঠান শেষে জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে ১৬টি শহীদ পরিবারের প্রত্যেকের হাতে ৫ লাখ টাকার চেক তুলে দেন মীর মাহবুবুর রহমান স্নিগ্ধ এবং সারজিস আলম। ২৫ জনের মধ্যে ৮টি পরিবার এই অনুদান আগেই পেয়েছে।