বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির টাকা জোগাড় করতে নিরাপত্তা প্রহরীর চাকরি নেন নাঈম, মারা গেলেন আগুনে
নাঈম আহমেদ (১৮) এবার উচ্চমাধ্যমিক (এইচএসসি) পাস করেছেন। দিনমজুর বাবার সংসার চালাতে অনেক কষ্ট। তাই কয়েক মাস চাকরি করে টাকা জমিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হবেন, স্বপ্ন ছিল নাঈমের। সে জন্য বরগুনা থেকে ঢাকায় এসে নিরাপত্তা প্রহরীর চাকরিও নেন।
নাঈম আহমেদের চেষ্টা সফল হয়নি, স্বপ্নও পূরণ হয়নি। গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে রাজধানীর বেইলি রোডের বহুতল ভবনে লাগা আগুনে তিনি মারা গেছেন।
আজ শুক্রবার সকালে রাজধানীর শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে বাবা নান্টু ছেলে নাঈমের লাশের জন্য অপেক্ষা করছিলেন। তাঁর একমাত্র ছেলেসন্তান ছিলেন নাঈম। এখন এক মেয়েসন্তান রইল তাঁর। তাঁদের গ্রামের বাড়ি বরগুনা সদরের বড় গৌরিচন্না এলাকায়।
ছেলের লাশের অপেক্ষায় থাকা দিশাহারা এই বাবা প্রথম আলোকে বলছিলেন, ‘ছেলেকে বারবার নিষেধ করেছি, ঢাকা আসা লাগবে না। ছেলে বলেছিল, ‘‘বাবা তুমি তো দিনমজুরের কাজ কর। খরচ চালাতে কষ্ট হয়। আমি ঢাকা গিয়ে কয়েক মাস কাজ করি, সেই টাকা দিয়ে অনার্সে ভর্তি হমু। তোমার ভর্তির টাকা কষ্ট করে দিতে হইবো না।’’’
‘রাতে ছেলেই আমাকে ফোন করেছিল। ও বলেছে, ‘‘আমি যে ভবনে কাজ করি, সেখানে আগুন লেগেছে। আমি সবার সঙ্গে ছাদে এসেছি।’’ আমি বলেছি, বাবা তুমি ছাদেই থাকো। আল্লাহ একটা ফয়সালা করে দেবেন। ছেলের সঙ্গে কয়েক সেকেন্ড কথা হইছে। তারপর ফোন কেটে গেছে।’
শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে সকালে এলেও ছেলের লাশ দেখার সুযোগ হয়নি নান্টুর। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কথায় তিনি লাশ বুঝে নেওয়ার অপেক্ষায় ছিলেন। হাসপাতালের জরুরি বিভাগের সামনে ছেলেটার লাশের জন্য বসে থাকা নান্টুর কান্না থামছিল না।
গতকাল রাত সাড়ে ৯টায় ছেলের সঙ্গে সর্বশেষ কথা হয়েছিল নান্টুর। তিনি বলেন, ‘রাতে ছেলেই আমাকে ফোন করেছিল। ও বলেছে, ‘‘আমি যে ভবনে কাজ করি, সেখানে আগুন লেগেছে। আমি সবার সঙ্গে ছাদে এসেছি।’’ আমি বলেছি, বাবা তুমি ছাদেই থাকো। আল্লাহ একটা ফয়সালা করে দেবেন। ছেলের সঙ্গে কয়েক সেকেন্ড কথা হইছে। তারপর ফোন কেটে গেছে। এরপরে আমি অনেকবার কল দিয়েছি। ফোন ধরে নাই।’
ফোন কেটে যাওয়ার পর আত্মীয়-স্বজনের মাধ্যমে ছেলের খবর পান নান্টু। জানতে পারেন, ছেলে মারা গেছেন। একমাত্র ছেলেকে হারিয়ে এখন তিনি দিশাহারা।
নাঈমের চাচাতো ভাই মো. আরিফ প্রথম আলোকে বলেন, নাঈম গত ২৭ জানুয়ারি ঢাকায় আসেন। পরে নিরাপত্তা প্রহরীর চাকরি নেন। সেই চাকরি ছেড়ে ২৭ ফেব্রুয়ারি বেইলি রোডের এই ভবনে চাকরি নেন নাঈম। চাকরি পাওয়ার তিন দিনের মাথায় তিনি মারা গেলেন।
আরিফের অভিযোগ, যে নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে নাঈম চাকরিতে যোগ দিয়েছিলেন, তারা পরিবারের কোনো খোঁজখবর নেয়নি।
বেইলি রোডে বহুতল ওই ভবনে অগ্নিকাণ্ডে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৪৫–এ পৌঁছেছে। গুরুতর আহত হয়েছেন অন্তত ২২ জন। নিহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।