বুয়েট খোলার দিনেই টার্ম ফাইনাল পরীক্ষা বর্জন করলেন এক ব্যাচের শিক্ষার্থীরা
পবিত্র ঈদুল ফিতর ও পয়লা বৈশাখের ছুটি শেষে আজ বুধবার একাডেমিক কার্যক্রম শুরু হয়েছে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বুয়েট)। আজ কোনো ক্লাস না থাকলেও বিশ্ববিদ্যালয়ের ২১তম ব্যাচের টার্ম ফাইনাল পরীক্ষা ছিল। ওই ব্যাচের আট শিক্ষার্থী ছাড়া বাকি সবাই আজকের এই পরীক্ষা বর্জন করেছেন।
ঈদ ও পয়লা বৈশাখ সামনে রেখে ৪ এপ্রিল বুয়েটে ছুটি শুরু হয়। গতকাল মঙ্গলবার এই ছুটি শেষ হয়। ফলে আজ আবার একাডেমিক কার্যক্রম শুরু হয়েছে বুয়েটে।
শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে ফিরছেন। ছুটি শুরুর আগে বুয়েটে আবার ছাত্ররাজনীতি শুরুর উদ্যোগের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে আন্দোলন করেন শিক্ষার্থীরা। তাঁদের দাবি মেনে ক্যাম্পাস খোলার আগে গত পরশু বুয়েটের ছাত্রকল্যাণ পরিদপ্তরের পরিচালক (ডিএসডব্লিউ) মো. মিজানুর রহমানকে পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। এই পদে নতুন দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে পুরকৌশলের অধ্যাপক মোহাম্মদ আল আমিন সিদ্দিককে।
বুয়েটে আন্দোলনের সামনের কাতারে থাকা দুই শিক্ষার্থীর সঙ্গে আজ বিকেলে কথা বলেছে প্রথম আলো। তাঁরা জানান, আজ ২১ ব্যাচের টার্ম ফাইনাল পরীক্ষা ছিল। এতে মাত্র আটজন শিক্ষার্থী অংশ নিয়েছেন। অনুপস্থিত ছিলেন ১ হাজার ২৭১ শিক্ষার্থী। অর্থাৎ ৯৯ শতাংশেরও বেশি শিক্ষার্থী পরীক্ষা বর্জন করেছেন।
ওই দুই শিক্ষার্থীর একজন বলেন, বুয়েটে আপাতত ক্লাস নেই, পরীক্ষা চলছে। আজকে ২১ ব্যাচের পরীক্ষা বর্জনটা অবশ্য আন্দোলনের জন্য করা হয়নি; বরং গ্রামের বাড়ি থেকে ঢাকায় আসার ফিরতি টিকিটের সংকটের কারণে অনেকে এখনো আসতে পারেননি। বিষয়টি বুয়েট কর্তৃপক্ষকে জানিয়েই ২১ ব্যাচের শিক্ষার্থীরা পরীক্ষায় অংশ নেননি।
আন্দোলনের বিষয়ে ভাবনা জানতে চাইলে ওই শিক্ষার্থী বলেন, বুয়েটে আবার ছাত্ররাজনীতি চালুর পক্ষে উচ্চ আদালতের আদেশের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আপিল করবে, সে জন্য অপেক্ষা করছেন তাঁরা।
১ এপ্রিল উচ্চ আদালতের এক আদেশের পর বুয়েটে আবার ছাত্ররাজনীতি চালু হওয়ার প্রেক্ষাপট তৈরি হয়েছে। আদালতের ওই আদেশের বিরুদ্ধে আপিল করার বিষয়টিতে প্রশাসন জরুরি ভিত্তিতে উদ্যোগী হলে এ ক্ষেত্রে তারা সব ধরনের সহযোগিতা করবে বলে ৮ এপ্রিল এক বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে বুয়েট শিক্ষক সমিতি। ৫ এপ্রিল এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বুয়েটের প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের সংগঠন বুয়েট অ্যালামনাই বলেছে, বুয়েট বিশ্বের একটি শীর্ষস্থানীয় প্রতিষ্ঠান হিসেবে আবির্ভূত হতে পারে, যদি এখানে একটি রাজনীতিমুক্ত পরিবেশ বজায় থাকে। বুয়েট অ্যালামনাই সুষ্ঠু রাজনীতির পক্ষে। তবে বর্তমানে ছাত্ররাজনীতির নামে যা চলমান, তা অপরাজনীতির বহিঃপ্রকাশ বা নামান্তর।
ঈদুল ফিতরের আগে গত ২৭ মার্চ মধ্যরাতে বুয়েট ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা প্রবেশ করেন। একে কেন্দ্র করে ২৯ মার্চ থেকে ৩ এপ্রিল পর্যন্ত পাঁচ দফা দাবিতে ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করে আন্দোলন করেন শিক্ষার্থীরা। আন্দোলনের সমর্থনে তখন বুয়েটের ১৮, ২০ ও ২২ ব্যাচের প্রায় শতভাগ শিক্ষার্থী টার্ম ফাইনাল পরীক্ষা বর্জন করেন। তাঁদের দাবির মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নেতা ইমতিয়াজ হোসেনকে বুয়েট থেকে স্থায়ী বহিষ্কার এবং ‘দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ’ ছাত্রকল্যাণ পরিদপ্তরের পরিচালকের পদত্যাগ।