বঙ্গবাজারে আছে শুধু ছাই, মানুষের ভিড় কমছে না
আদর্শ, মহানগরী, গুলিস্তান ও বঙ্গ হকার্স—এই চার মার্কেট নিয়ে ছিল বঙ্গবাজার। গতকাল মঙ্গলবারের আগুনে ঢাকার এই জনপ্রিয় কাপড়ের মার্কেট পুরোপুরি পুড়ে মাটিতে মিশে গেছে। সারি সারি দোকানের পরিবর্তে এখন সেখানে পড়ে আছে কয়লা। সঙ্গে আছে পোড়া কাঠ, টিন ও লোহালক্কর।
এই ধ্বংসস্তূপে আধপোড়া পোশাকও আছে। বিক্রয়যোগ্য কোনো কাপড় পাওয়ার সম্ভাবনাই নেই। তবুও যদি কিছু অক্ষত মেলে—এই আশায় আংশিক পোড়া কাপড়চোপড় হাতরে দেখছেন অনেক ব্যবসায়ী। পোড়া টিন, সাটার উল্টেপাল্টেও দেখছিলেন কেউ কেউ।
আজ বুধবার সকালে বঙ্গবাজারের ধ্বংসস্তূপে গিয়ে এমন চিত্র দেখা যায়।
বঙ্গবাজারের পাশের অ্যানেক্স টাওয়ার থেকে ধোঁয়া বের হচ্ছে। ব্যবসায়ীদের সেই ভবন থেকে নিজেদের মালপত্র সরিয়ে নিতে দেখা যায় আজ।
বঙ্গবাজারের পাশের বঙ্গ ইসলামিয়া-২ ও বঙ্গ হোমিও মার্কেটের যেসব দোকানে আগুন লেগেছে, সেসব দোকানের ব্যবসায়ী ও কর্মীরা মিলে আগুনে পোড়া কাপড় সরানোর কাজে নিজেরাই হাত লাগিয়েছেন।
দুই ভাই ইফাত হাসান ও রিফাত হাসান তাঁদের দুটি দোকানের কর্মীদের নিয়ে পোড়া মালামাল অপসারণের কাজ করছিলেন। রিফাত হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ২টি দোকানে প্রায় ৫০ লাখ টাকার শার্ট ছিল। আগুনে সব পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। সরকার সাহায্য না করলে ঘুরে দাঁড়ানো সম্ভব হবে না।
ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের পাশাপাশি অনেক মানুষ ধ্বংসস্তূপে এসেছেন। তাঁরা পুড়ে যাওয়া টিন, লোহা, সাটার ভাঙারি পণ্য হিসেবে বিক্রির জন্য নিয়ে যাচ্ছেন। কেউ কেউ আধপোড়া কাপড়চোপড়ও কুড়াচ্ছেন। বিষয়টি নিয়ে বিরক্ত ব্যবসায়ীরা।
নিজের পোড়া দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে ছিলেন নাবিল হোসেন। তিনি অন্যদের ভাঙারি জিনিসপত্র নিতে মানা করছিলেন। কিন্তু কেউ তাঁর কথায় কান দিচ্ছিলেন না। এক নারীকে বাধা দেওয়ায় উল্টো ওই নারী তাঁর সঙ্গে তর্কে লিপ্ত হন।
বঙ্গবাজারের ব্যবসায়ী সমিতির পক্ষ থেকে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের তালিকা করা হচ্ছে। ব্যবসায়ীরা সারিতে দাঁড়িয়ে তালিকায় নিজের নাম দিচ্ছিলেন দুপুর ১২টার দিকে।
অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত সহায়–সম্বল হারানো, পথে বসা ব্যবসায়ীরা সহযোগিতার জন্য প্রধানমন্ত্রীর কাছে আকুল আবেদন জানিয়ে মানববন্ধন করেছেন। মানববন্ধন হয়েছে বঙ্গবাজার কমপ্লেক্স ব্যবসায়ী সমিতির ব্যানারে।
নাবিল হোসেন বলেন, ‘এখানে আমাদের দোকান ছিল। আমাদেরই সবকিছু। অন্য মানুষ এসে এখন আমাদের দোকানের জিনিসপত্র নিয়ে যাচ্ছে। গতকাল থেকে প্রশাসনের কাছ থেকে সহায়তাই পাচ্ছি না।’