স্বপ্ননগরের বাসিন্দাদের আনন্দে অবগাহন

স্বপ্ননগর আবাসনে প্রথম আলোর আয়োজনে ‘আনন্দমেলায়’ বিস্কুট দৌড়ে শিশু প্রতিযোগীরা। মিরপুর ৯, ঢাকা, ৪ অক্টোবরছবি: তানভীর আহাম্মেদ

রাজধানীর মিরপুরের স্বপ্ননগর আবাসনে দিনব্যাপী বয়ে গেল আনন্দলহরী। শুক্রবার সাপ্তাহিক ছুটির দিনে সকাল ৮টা থেকে এই সুপরিসর আবাসিক এলাকায় প্রথম আলোর আয়োজনে অনুষ্ঠিত হয়েছে ‘আনন্দমেলা’।

আবাসনের বাসিন্দাদের নিয়ে প্রথম আলোর এই আয়োজনের টাইটেল স্পনসর করেছে এসিআই পিওর।

মিরপুর ৯ নম্বর সেকশনের স্বপ্ননগর আবাসিক এলাকার ১০টি বহুতল ভবনের ১ হাজার ৪০টি ফ্ল্যাটের বাসিন্দাসংখ্যা ছয় হাজারের বেশি। ২০২১ সাল থেকে এই আবাসনে লোকবসতি শুরু হয়। বাসিন্দাদের জন্যই ছুটির দিনে এই আয়োজন।

চারপাশে প্রাচীরঘেরা আবাসনের আয়তন ২১ একর। এটি নির্মাণ করেছে সরকারের জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষ। দুই পাশে ৫টি করে মোট ১০টি আবাসিক ভবনের সারি। মাঝখানে বিশাল সবুজ ঘাসে ঢাকা মাঠ। মাঠের চারপাশ দিয়ে ঢালাই করা সড়ক ও পাশ দিয়ে পায়ে চলার পথ। পথের দুই পাশে লাগানো হরেক রকম গাছ বেড়ে উঠছে রোদ-বৃষ্টিতে। এই সবুজে ঘেরা মাঠেই সম্পন্ন হলো আনন্দমেলার কার্যক্রম।

সকালে আনন্দমেলার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন আবাসন সোসাইটির সভাপতি সাবেক সচিব মো. নুরনবী তালুকদার। তিনি বলেন, এতে আবাসনের শিশু-কিশোরেরা নির্মল আনন্দ উপভোগ করতে পারবে। পাশাপাশি বাসিন্দাদের মধ্যেও পারস্পরিক সাক্ষাতে সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক সৃষ্টি হবে। তিনি প্রথম আলোর এই উদ্যোগের জন্য সাধুবাদ জানান।

এরপর শুরু হয়ে যায় দিনব্যাপী আনন্দমেলার কার্যক্রম। প্রথমেই ছিল শিশু-কিশোরদের চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা। আরও ছিল কুইজ প্রতিযোগিতা, বিস্কুট দৌড়, চকলেট দৌড়সহ নানা রকম ক্রীড়ার আয়োজন।

আনন্দমেলায় বায়োস্কোপ দেখায় মজেছিল শিশু–কিশোরেরা। মিরপুর ৯, ঢাকা, ৪ অক্টোবর
ছবি: তানভীর আহাম্মেদ

আনন্দমেলার আয়োজনটিকে আনন্দময় করে তুলতে মাঠটি সাজানো হয়েছিল উৎসবে সজ্জায়। দক্ষিণ পাশে ছিল ছাউনি দেওয়া বড়সড় মঞ্চ। উত্তর ও পশ্চিম পাশ দিয়ে প্রথমা প্রকাশনের বইয়ের স্টলসহ আনন্দমেলার সহযোগী প্রতিষ্ঠানগুলোর স্টল। সেখানে উৎসবের কুপনে ছিল আইসক্রিম, কফি, স্যান্ডউইচ, নুডলসসহ বিভিন্ন খাবারের ব্যবস্থা। এ ছাড়া বিশেষ ছাড়ে প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের বিভিন্ন পণ্য বিক্রি করে।

আনন্দমেলায় নানা আয়োজনের মধ্যে ছিল অভিভাবকদের জন্য ‘বল পাসিং’ প্রতিযোগিতা। মিরপুর ৯, ঢাকা, ৪ অক্টোবর
ছবি: তানভীর আহাম্মেদ

প্রতিযোগিতা পর্বের পর আনন্দমেলা মঞ্চে শুরু হয় কচিকাঁচাদের জন্য মজার মজার অনুষ্ঠান। এতে ছিল ম্যাজিক শো, পুতুলনাচ। শেষে ছিল প্রথম আলোর ডিজিটাল ট্রান্সফরমেশন ও যুব কার্যক্রমের প্রধান সমন্বয়ক মুনির হাসানের পরিচালনায় রোবট শো। শিশুরা রোবটের সঙ্গে নৃত্য প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে পুরস্কার পেয়েছে সেরা ১০ জন। এরপর মধ্যাহ্নবিরতি।

চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতায় নিজেদের মতো মগ্ন শিশু–কিশোরেরা। মিরপুর ৯, ঢাকা, ৪ অক্টোবর
ছবি: তানভীর আহাম্মেদ

প্রথম আলোর এই আয়োজন সম্পর্কে আবাসনটির পরিষেবা সম্পাদক প্রকৌশলী আনিসুর রহমান বলেন, দীর্ঘদিন করোনা মহামারি ও সাম্প্রতিক রাজনৈতিক অস্থিরতা এখানকার বাসিন্দাদের মনে চাপ সৃষ্টি করেছিল। এই চাপ কাটাতে এমন একটি নির্মল আনন্দ আয়োজনের খুব দরকার ছিল।

এই আয়োজনে সহায়তায় ছিল কিষোয়ান, স্যাভলন, নিউজিল্যান্ড ডেইরি, এয়ার অ্যাস্ট্রা, সান কুইক, বাবুল্যান্ড, নিউট্রি, স্যাভয় আইসক্রিম ও মোজো।

বৃষ্টির জন্য বিকেলের পর্বে খানিকটা বিলম্ব ঘটে। তবে মাঠে আর অনুষ্ঠান করা সম্ভব হয়নি। মঞ্চের সামনের ছাউনির তলায় অনুষ্ঠিত হয়েছে নারী এবং পুরুষ অভিভাবকদের জন্য আলাদা করে বল পাসিং। উভয় প্রতিযোগিতাতেই ছিল আকর্ষণীয় পুরস্কার।

আনন্দমেলার মঞ্চে শিশু–কিশোরদের সঙ্গে প্রথম আলোর ব্যবস্থাপনা সম্পাদক কথাসাহিত্যিক আনিসুল হক। মিরপুর ৯, ঢাকা, ৪ অক্টোবর
ছবি: তানভীর আহাম্মেদ

প্রতিযোগিতার শেষে ছিল সংগীত, র‌্যাফল ড্র, পুরস্কার বিতরণী ও সমাপনী অনুষ্ঠান। ম্যাক আপেল গেয়ে শোনান ‘পুরোনো সেই দিনের কথা’সহ দুটি গান। প্রথম আলোর ব্যবস্থাপনা সম্পাদক আনিসুল হক সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে শিশু-কিশোরদের পাঠ্যবইয়ের পাশাপাশি অন্য বিষয়ের বই পড়তে, দেশকে ভালোবাসতে অনুপ্রেরণা দেন।

র‍্যাফল ড্র! শিশুরা তুলছে বিজয়ীদের নাম। মিরপুর ৯, ঢাকা, ৪ অক্টোবর
ছবি: তানভীর আহাম্মেদ

যুব কার্যক্রমের প্রধান সমন্বয়ক মুনির হাসান ও সার্কুলেশন-সেলস সহকারী মহাব্যবস্থাপক মহিউদ্দিন রওনক বিজয়ীদের মধ্যে পুরস্কার বিতরণ করেন। শিশুদের সমবেত কণ্ঠে ‘আমরা করব জয়’ গানটি দিয়ে মঞ্চের অনুষ্ঠান শেষ হয় সন্ধ্যায়। অনুষ্ঠান সঞ্চালনায় ছিলেন প্রথম আলো বন্ধুসভার বন্ধু মেঘা থেতান ও অনিক সরকার।

রোবট শোতে উচ্ছ্বসিত শিশু–কিশোরেরা। মিরপুর ৯, ঢাকা, ৪ অক্টোবর
ছবি: তানভীর আহাম্মেদ