বই কিনছেন পাঠকেরা

‘ধূলির বসন্ত/ অ-ফোটা ফুলই তো/ ফাল্গুন মূলত’ তরুণ কবি পিয়াস মজিদের ‘ধূলিবিধৌত’ কবিতার কয়েক পঙ্‌ক্তি। লেখাই হয়েছে হয়তো পয়লা ফাল্গুনের পরের দিনটির জন্য।

গতকাল বুধবার মেলায় মানুষ এসেছেন কম। তবে যাঁরা এসেছিলেন, তাঁদের পেয়ে যেন প্রকাশক, লেখকের আসল বসন্ত হলো গতকাল।

মেলায় প্রবেশ করেই ডানে ৬ নম্বর প্যাভিলিয়নের সামনে বসে ছিলেন প্রথমা প্রকাশনের ব্যবস্থাপক জাকির হোসেন। বললেন, এবারের মেলার একটা ব্যাপার হচ্ছে, রাতে জমছে কম। মূল ক্রেতারা আসছেন কর্মদিবসের দিন বিকেলে। আজ (গতকাল) যাঁরা এসেছেন, তাঁরা অধিকাংশই বই কিনেছেন।

তখন রাজধানীর পল্লবী থেকে আসা সাখাওয়াত হোসেন খুঁজছিলেন প্রথমা থেকে প্রকাশিত সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী এবং প্রয়াত আনিসুজ্জামানের প্রবন্ধের বই। একজন বিমর্ষ পাঠক খুঁজে নিলেন আহমেদ হেলালের লেখা কীভাবে নেবেন মনের যত্ন বইটি। হয়তো নিজের জন্যই। বিক্রি হলো বাংলাদেশের স্বাস্থ্য খাতের বিকাশ–এর মতো তথ্যপূর্ণ একটা ঢাউস বইও।

সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের ভেতর দিকের সারিতে বিদ্যাপ্রকাশের সামনে দল বেঁধে আড্ডা দিচ্ছিলেন পলি শাহীনা, শাহেদ কায়েস আর জয়দীপ দে। তিনজনেরই এবারের মেলায় আছে নতুন বই। পলি শাহীনার লেখা হৃদয় এক অমীমাংসিত জলছবি নতুন বই। ২৪ বছর পর মেলায় এসেছেন শাহীনা। বললেন, স্মৃতির সঙ্গে হাঁটছি। এই বইয়ের স্টলের প্রদর্শনী টেবিলে তখন উঁকি দিচ্ছে দীপেন ভট্টাচার্যের লেখা গল্পের বই শ্যাতোয়ান্ত। ভেতরে তখন আলাপ চলছে কথাসাহিত্যিক মোহিত কামাল আর দন্ত্যস রওশনের। মেলা নিয়ে দুজনই আশাবাদী।

তবে ভিন্ন মত দিলেন উৎস প্রকাশনের মোস্তফা সেলিম। বললেন, মূলধারার প্রকাশনা কম হয়েছে এবার। বেশি বই আনতে ভয় পাচ্ছেন প্রকাশকেরা। অগ্রসর পাঠকের জন্য বইয়ের তালিকা সংকীর্ণ হয়ে আসছে।

মেলার মাঠে দেখা কবি শামীম আজাদ এবং অর্থনীতিবিদ সেলিম জাহান দম্পতির সঙ্গে। গতকালই প্রথম এসেছেন এবারের মেলায়। দুজনই দেখেছেন বিশ্বের অনেক দেশের নানা রকম বইমেলা। তাঁদের স্মৃতিতে আছে বাংলা একাডেমির চত্বরে প্রথম দিকের মেলার গল্প। বলছিলেন, অমর একুশে বইমেলার পরিবর্তনের ধারাগুলো অপ্রত্যাশিত নয়। তবে আরও অনেক কিছুর সংযুক্তি প্রয়োজন। শামীম আজাদ বললেন, মেলায় অনেক গুরুত্বপূর্ণ প্রসঙ্গ আলোচনার অবকাশ রয়েছে। পরামর্শ বাক্স থাকা দরকার। সেখানে মানুষ নিজেদের মতামত দিতে পারেন। যেকোনো আয়োজনের জন্য নিজেদের উদ্যোগের পর্যালোচনা প্রয়োজন। যেন তাঁর কথার রেশ টেনেই সেলিম জাহান বললেন, মেলা শুধু বাণিজ্য নয়। এখানে ইতিহাসের তথ্যচিত্র প্রদর্শনী জরুরি। তাতে পরবর্তী প্রজন্ম জানবে বইমেলার শুরুর গল্পগুলো।

পরবর্তী প্রজন্মের জন্য এবারের মেলায় এসেছে অনেকগুলো নতুন বই। এমনকি পুরোনো বইয়ের বর্ধিত সংস্করণও হয়েছে। কথাসাহিত্যিক দন্ত্যস রওশনের নোটুর সেভেনটি ওয়ান বইটির বর্ধিত সংস্করণ প্রকাশিত হয়েছে এবার।

গতকাল ছিল বাংলা সাহিত্যের খ্যাতিমান কবি প্রয়াত আল মাহমুদের মৃত্যুদিন। ঐতিহ্য থেকে এবার প্রকাশিত হয়েছে কবির অগ্রন্থিত গদ্য নিয়ে সংকলন তোমাদের জন্য বই। সূর্যমুখী বা মেঘমল্লার–এর মতো বিভিন্ন সাহিত্য সংকলনে বহুদিন আগে প্রকাশিত গদ্যগুলো শিশু–কিশোরদের জন্য।

গীতিকার কবির বকুলের লেখা কাব্যগ্রন্থ দ্বিতীয় জীবন এসেছে ৩২টি কবিতা নিয়ে। প্রকাশ করেছে ‘স্বপ্ন ’৭১ প্রকাশন’। গানের আদিম উৎপত্তির ক্ষেত্রে মানুষের জীবনের মঙ্গলামঙ্গলের আবেদন–অনুভূতি কাজ করে। আখতারুজ্জামান চিরূর লেখা গান এবং রেকর্ডের গান বইটি প্রকাশ করেছে স্বরবৃত্ত প্রকাশন।

আর পলল প্রকাশনী থেকে এসেছে রাসেল মাহ্‌মুদের লেখা ছোটগল্পের বই কয়েকছত্র কান্নার গল্প। সালাম আজাদের লেখা মুক্তিযুদ্ধে ভারত এসেছে ঐতিহ্য থেকে। ঐতিহ্য থেকে প্রকাশিত পিয়াস মজিদের কবিতার বই ভুলে যাওয়া স্কার্টের সিঁড়ি বইয়ের সপ্তম কবিতাটি ‘ধূলিবিধৌত’।

গতকালের বইমেলায় মানুষ কম বলে ধুলা কিছুটা কম ছিল। তবে শান্ত মেলায় উদ্‌যাপিত হয়েছে বইয়ের ফাল্গুন। লেখক, পাঠকের উপস্থিতিই মূলত বইমেলার বসন্ত।