২৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আয়োজন দেখতে ক্লিক করুন
মূল সাইট দেখতে ক্লিক করুন

বনানীতে কবর সংরক্ষণে লাগবে দেড় কোটি টাকা

নির্ধারিত মেয়াদে কবর সংরক্ষণের জন্য ফি বাড়িয়ে একটি তালিকা প্রকাশ করেছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) কর্তৃপক্ষ। মেয়াদ ও কবরস্থানভেদে এই ফি বেড়েছে সর্বনিম্ন ৪ লাখ টাকা, সর্বোচ্চ ১ কোটি ৩৫ লাখ টাকা। সংস্থাটির নতুন ফি অনুযায়ী, রাজধানীর বনানী কবরস্থানে ২৫ বছরের জন্য একটি কবর সংরক্ষণে গুনতে হবে সর্বোচ্চ দেড় কোটি টাকা।

১৮ জানুয়ারি ডিএনসিসির প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা (অতিরিক্ত দায়িত্ব) মোহাম্মদ মাহে আলমের সই করা ‘ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের কবরস্থানগুলোর নীতিমালা ২০২২’-এ বর্ধিত এই ফির কথা উল্লেখ করা হয়েছে।

এ বিষয়ে ঢাকা উত্তর সিটির সমাজকল্যাণ বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, কবর সংরক্ষণে মানুষকে নিরুৎসাহিত করার উদ্দেশ্যে এই ফি বাড়ানো হয়েছে। কেননা, ইতিমধ্যে ঢাকা উত্তর সিটির অনেক কবরস্থানে নতুন করে কবর দেওয়ার জন্য পর্যাপ্ত জায়গা নেই। সেখানে পুরোনো কবরের ওপর আবার নতুন কবর দিতে হচ্ছে। তাই ডিএনসিসি কর্তৃপক্ষ মানুষকে কবর সংরক্ষণে নিরুৎসাহিত করতে চাইছে।

ডিএনসিসির নতুন তালিকা অনুযায়ী, সবচেয়ে বেশি ফি বাড়ানো হয়েছে বনানী কবরস্থানে। ২০১৮ সালে হওয়া নীতিমালা অনুযায়ী, এই কবরস্থানে ১৫ বছর মেয়াদে কবর সংরক্ষণের ফি ছিল আট লাখ টাকা। নতুন তালিকায় তা বাড়িয়ে নির্ধারণ করা হয়েছে এক কোটি টাকা। অর্থাৎ বনানীতে ১৫ বছরের জন্য কবর সংরক্ষণের ফি আগের চেয়ে ৯২ লাখ টাকা বাড়ানো হয়েছে। একই কবরস্থানে ২৫ বছরের জন্য কবর সংরক্ষণ করতে চাইলে এখন ফি দিতে হবে দেড় কোটি টাকা, আগে এই ফি ছিল ১৫ লাখ টাকা। এ ক্ষেত্রে ফি বেড়েছে প্রায় ১০ গুণ।

ঢাকা উত্তর সিটির কবরস্থানে সাধারণ কবর দিতে নিবন্ধন ফি আগের মতো ৫০০ টাকা রয়েছে। দুস্থ, অসহায় ও নিম্ন আয়ের মানুষের ক্ষেত্রে এই ফি ১০০ টাকা রাখার ঘোষণা দিয়েছেন ডিএনসিসির মেয়র আতিকুল ইসলাম।

বনানী কবরস্থান বাদে ঢাকা উত্তর সিটিতে আরও পাঁচটি কবরস্থান আছে। কবরস্থানগুলো হলো উত্তরা ৪ নম্বর সেক্টর কবরস্থান, উত্তরা ১২ নম্বর সেক্টর কবরস্থান, উত্তরা ১৪ নম্বর সেক্টর কবরস্থান, মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থান এবং রায়েরবাজার স্মৃতিসৌধসংলগ্ন কবরস্থান। এর মধ্যে উত্তরা ১৪ নম্বর সেক্টরের কবরস্থানটি নতুন। আগে কবরস্থানটি রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) নিয়ন্ত্রণে ছিল।

নতুন তালিকা অনুযায়ী, ১৫ বছরের জন্য উত্তরা ৪ নম্বর সেক্টর কবরস্থানে কোনো কবর সংরক্ষণ করতে চাইলে ৭৫ লাখ টাকা ফি দিতে হবে, আগে এই ফি ছিল ৮ লাখ টাকা। এ ছাড়া উত্তরা ১২ নম্বর সেক্টর কবরস্থানে ১৫ বছরের জন্য কবর সংরক্ষণের ফি ৬ লাখ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৫০ লাখ টাকা করা হয়েছে।

একইভাবে মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে আগে ১৫ বছরের জন্য একেকটি কবর সংরক্ষণে ছয় লাখ টাকা লাগত। এখন এই ফি বাড়িয়ে করা হয়েছে ২০ লাখ টাকা। আর রায়েরবাজারসংলগ্ন কবরস্থানে ১৫ বছরের জন্য একেকটি কবর সংরক্ষণে এখন লাগবে ১০ লাখ টাকা, আগে যা ছিল ৬ লাখ টাকা।

অন্যদিকে উত্তরা ৪ নম্বর সেক্টর কবরস্থানে ২৫ বছরের জন্য একেকটি কবর সংরক্ষণ ফি ১৫ লাখ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১ কোটি টাকা করা হয়েছে। উত্তরা ১২ নম্বর কবরস্থানে এই ফি ৭৫ লাখ টাকা, আগে ছিল ১১ লাখ টাকা। একই মেয়াদে কবর সংরক্ষণের জন্য উত্তরা ১৪ নম্বর সেক্টর কবরস্থানে ফি নির্ধারণ করা হয়েছে ৫০ লাখ টাকা। মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থান ও রায়েরবাজারসংলগ্ন কবরস্থানে ২৫ বছরের জন্য একেকটি কবর সংরক্ষণে গুনতে হবে যথাক্রমে ৩০ লাখ টাকা ও ১৫ লাখ টাকা। আগে এই দুই কবরস্থানে ২৫ বছরের জন্য সংরক্ষণ ফি ছিল ১১ লাখ টাকা।

এর আগে গত বছরের আগস্টে সংরক্ষিত কবরে কাউকে নতুন করে কবর দেওয়ার ফি বাড়িয়েছিল ঢাকা উত্তর সিটি কর্তৃপক্ষ। বনানী কবরস্থানে এই ফি বাড়ানো হয়েছিল ২০ হাজার টাকা ও অন্যান্য কবরস্থানে ১০ হাজার টাকা। এই বিষয়ে ঢাকা উত্তর সিটির সমাজকল্যাণ বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, বনানীতে সংরক্ষিত কবরে আবার কাউকে কবর দিতে হলে এখন ৫০ হাজার টাকা ফি দিতে হবে, আগে এই ফি ছিল ৩০ হাজার টাকা।

আর ডিএনসিসির আওতাধীন বাকি পাঁচটি কবরস্থানের সংরক্ষিত কবরে কাউকে নতুন করে কবর দিতে ফি লাগবে ৩০ হাজার টাকা, আগে এই ফি ছিল ২০ হাজার টাকা। গত বছর ডিএনসিসির ১৪তম করপোরেশন সভায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

তবে নীতিমালা অনুযায়ী, ঢাকা উত্তর সিটির কবরস্থানে সাধারণ কবর দিতে নিবন্ধন ফি আগের মতো ৫০০ টাকা রয়েছে। দুস্থ, অসহায় ও নিম্ন আয়ের মানুষের ক্ষেত্রে এই ফি ১০০ টাকা রাখার ঘোষণা দিয়েছেন ডিএনসিসির মেয়র আতিকুল ইসলাম।

আরও পড়ুন

১৯৯৬ সালে বনানী ও উত্তরা ৪ নম্বর সেক্টর কবরস্থানে স্থায়ীভাবে কবরের জন্য জায়গা কিনতে খরচ হতো ১ লাখ ২০ হাজার টাকা। আর মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে জায়গা কেনা যেত ২৫ হাজার থেকে ৩৫ হাজার টাকায়। ২০০৫ সালের আগপর্যন্ত এর পরিমাণ একই ছিল। ২০০৫ থেকে ২০০৭ সাল পর্যন্ত কবরের জন্য স্থায়ী জায়গা কেনা পুরোপুরি বন্ধ ছিল। ২০০৮ সাল থেকে বিভিন্ন মেয়াদে কবর সংরক্ষণের ব্যবস্থা চালু হয়। এই ব্যবস্থা এখনো চলছে।

ঢাকা উত্তর সিটির সমাজকল্যাণ কর্মকর্তা এবং কবর মেয়াদি সংরক্ষণ ও পাকাকরণসংক্রান্ত কমিটির সদস্যসচিব মুজাহিদ আল সাফিদ মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, নতুন করে ফি বাড়ানোর কারণে সাধারণ মানুষকে কবর সংরক্ষণে নিরুৎসাহিত করা। কারণ, অনেকেই কবর সংরক্ষণ করতে চান। কিন্তু রাজধানীর কবরস্থানে জায়গা নেই।

এই বিষয়ে মুজাহিদ আল সাফিদ আরও বলেন, ১৫ বছর ও ২৫ বছর মেয়াদে কবর সংরক্ষণের জন্য এখন দেড় শতাধিক আবেদন জমা পড়েছে। নীতিমালা সংস্কারের জন্য এত দিন অনুমতি দেওয়া বন্ধ ছিল। এখন নতুন নীতিমালা হয়েছে। তাই বর্ধিত ফি–তে কবর সংরক্ষণের অনুমতি দেওয়া হবে।

আরও পড়ুন