ডেঙ্গু নিয়ে এ মাসে মুগদা হাসপাতালে ৩ হাজারের বেশি রোগী, ভয়ের কারণ ‘শক সিনড্রোম’
চার বছরের মোবাশ্বিরার এক হাতে চলছে স্যালাইন। কিছু জিজ্ঞেস করলে কথা বলতেও কষ্ট হচ্ছে শিশুটির। উত্তর দিচ্ছে ইশারায়। দুই দিন ধরে হাসপাতালের বিছানায় সে। ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে মোবাশ্বিরার মতো ২৫ শিশু এখন রাজধানীর মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি রয়েছে।
বাসাবোর কদমতলা এলাকায় মোবাশ্বিরাদের বাসা। চার দিন থেকে শিশুটির জ্বর। জ্বর নিয়ে বাসাতেই দুই দিন ছিল। এরপর শরীর বেশি খারাপ করলে চিকিৎসক হাসপাতালে ভর্তি করার পরামর্শ দেন। মোবাশ্বিরার মা জাকিয়া সুলতানা জানান, তাঁরও ডেঙ্গুর মতো লক্ষ্মণ ছিল। পরীক্ষা করাননি। কিছু ওষুধ খেয়ে আগের চেয়ে ভালো আছেন বলে জানান। তাঁর শরীর খারাপের মধ্যেই মেয়ের জ্বর আসে।
গোড়ান থেকে ছয় মাসের আয়াতকে নিয়ে এসেছেন মা রিমি আক্তার। চার দিন ধরে শিশুটি হাসপাতালে ভর্তি। অণুচক্রিকা (প্লাটিলেট) কমে ২০ হাজারে নেমেছে। ছেলেকে নিয়ে চিন্তিত রিমি বলেন, বাচ্চাটার খুব কষ্ট হচ্ছে। আয়াত ছাড়াও ওই পরিবারে আরও দুজন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছিলেন বলে জানালেন তিনি।
মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগী বাড়ছে। আজ সোমবার হাসপাতালটিতে ৯৮ জন ডেঙ্গু রোগী চিকিৎসাধীন ছিলেন। চলতি বছরের সেপ্টেম্বর মাসেই ভর্তি হয়েছেন ৩ হাজার ২৭০ জন। এর মধ্যে শিশু ৮৩৯। মারা গেছেন ৮ জন। তাদের মধ্যে একটি শিশু।
গতকাল রোববার সকাল আটটা থেকে আজ সোমবার সকাল আটটা পর্যন্ত ডেঙ্গু নিয়ে ২৫ শিশু মুগদা হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। চলতি বছর সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৮ হাজার ৮১০ জন ডেঙ্গু নিয়ে ভর্তি হয়েছেন হাসপাতালটিতে। তাঁদের ৩২ জন মারা গেছেন।
ডেঙ্গুতে আক্রান্ত শিশুদের চিকিৎসা চলছে মুগদা হাসপাতালের ৮ম তলায়। এ ছাড়া বড়দের জন্য হাসপাতালের ১১ তলায় চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
হাসপাতালের ১১ তলায় চিকিৎসাধীন আকলিমা আক্তারকে গতকাল ছুটি দেওয়ার কথা ছিল বলে জানান তাঁর মা শম্পা। আট দিন ধরে তাঁরা হাসপাতালে। বাসাবোর এই বাসিন্দা বলেন, আকলিমা প্রায় সুস্থ হলেও রাত থেকে ডায়রিয়া শুরু হয়েছে। মেয়ের পেছনে এখন পর্যন্ত ১৫ হাজার টাকা খরচ হয়েছে বলে জানালেন গৃহকর্মীর কাজ করা শম্পা। বললেন, চিকিৎসার টাকার জন্যও চিন্তা করতে হচ্ছে।
রাজধানীর অন্যান্য হাসপাতালের তুলনায় মুগদা হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগী তুলনামূলক বেশি। আশপাশের এলাকা ছাড়া দূর থেকেও রোগী আসছেন।
গাড়িচালক হাসানের বাড়ি নারায়ণগঞ্জে। ডেঙ্গু নিয়ে এক সপ্তাহ মুগদা হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন তিনি। গতকাল তাঁকে ছুটি দেওয়া হয়েছে। মুগদায় কেন এসেছেন জানতে চাইলে বলেন, তাঁর এলাকার আরও অনেকেই এখানে চিকিৎসা নিয়েছেন। তাই তিনিও এখানে এসেছেন।
মুগদা হাসপাতালে ধারণক্ষমতার চেয়েও গত বছর ডেঙ্গু রোগী বেশি ছিল। হাসপাতালের মেঝেতেও রোগী রাখা হয়েছিল। তবে এ বছর এখন পর্যন্ত সেই পরিস্থিতি তৈরি হয়নি।
হাসপাতালের সহকারী পরিচালক মো. আসাদুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, ১২ তলাও ডেঙ্গু রোগীদের জন্য প্রস্তুত রাখা হয়েছে। তিনি জানান, এবার তাঁরা হাসপাতালের মেঝেতে রোগী রাখতে চান না। সরকারের পক্ষ থেকে মহাখালীর ডিএনসিসি হাসপাতালেও ডেঙ্গু রোগীদের চিকিৎসার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। রোগী বেশি হলে সেখানে যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হবে বলে জানান এই চিকিৎসক।
এবারের ডেঙ্গু পরিস্থিতি নিয়ে মো. আসাদুজ্জামান বলেন, সাধারণ উপসর্গের পাশাপাশি এবার ‘শক সিনড্রোম’ বেশি। গত বছরের চেয়ে এবার রোগী কম। তবে জুলাই থেকে রোগী বেড়েছে বেশি।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হিসাবে, দেশে চলতি বছর সবচেয়ে বেশি ৭ হাজার ১৩৪ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসএসি) বিভিন্ন হাসপাতালে। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৬ হাজার ৬১৮ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছেন চট্টগ্রাম বিভাগের বিভিন্ন হাসপাতালে। এরপর রয়েছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি)। এ বছর ডেঙ্গুতে মৃত্যুও সবচেয়ে বেশি হয়েছে ঢাকা দক্ষিণ সিটিতে।
চলতি বছর ডেঙ্গুতে পুরুষেরা বেশি আক্রান্ত হয়েছেন। তবে মৃত্যু বেশি হয়েছে নারীদের। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, এ বছর ডেঙ্গু নিয়ে ১৬ থেকে ৩৫ বছর বয়সীদের মধ্যে মৃত্যু বেশি।