ছাদে তালা থাকায় ইউনুস পরিবার নিয়ে বারান্দায় ঠাঁই নিয়েছিলেন

পুরান ঢাকার নাজিমুদ্দিন রোডে এই ভবনে আগুন লাগে। ৭ এপ্রিলছবি: ফায়ার সার্ভিসের সৌজন্যে

রাজধানীর পুরান ঢাকার নাজিমুদ্দিন রোডে গতকাল সোমবার ভোরে যে ভবনে আগুন লেগেছিল, সেটির পঞ্চম তলায় ইউনুস মিয়া তাঁর পরিবার নিয়ে থাকেন। এখন তিনিসহ তাঁর পরিবারের ছয় সদস্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন। জানান, তেমন কোনো জটিলতা নেই তাঁদের।

হাসপাতালে বার্ন ইউনিটের পঞ্চম তলায় আজ মঙ্গলবার প্রথম আলোর সঙ্গে কথা বলেন ইউনুস মিয়া। সেদিনের আগুনের বিবরণ দিতে গিয়ে তিনি বলেন, গভীর রাতে আগুন লাগার বিষয়টি বুঝতে পারলেও ধোঁয়ার কারণে ভবন থেকে বের হতে পারেননি তাঁরা। তখন ভবনের ছাদে তালা লাগানো ছিল। তিনিসহ পরিবারের সদস্যরা বারান্দায় গিয়ে আশ্রয় নেন। সেখানেও অনেক ধোঁয়া ছিল। ভীষণ ভয় পেয়েছিলেন। বাঁচবেন সেই আশা তাঁরা ছেড়ে দিয়েছিলেন। প্রায় এক ঘণ্টা পর ফায়ার সার্ভিসের লোকজন তাঁদের উদ্ধার করেন। এরপর হাসপাতালে পাঠান। গতকাল একটু অসুস্থতা অনুভব করলেও এখন সবাই ঠিক আছেন।

রাজধানীর পুরান ঢাকার নাজিমুদ্দিন রোডের একটি ভবনে আগুন লেগে ধোঁয়ায় অসুস্থ হয়ে ১৩ জন এখনো ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসা নিচ্ছেন। তাঁদের কারও কারও শ্বাসনালি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে ধারণা করছেন চিকিৎসকেরা। এর মধ্যে দুজন নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন। তবে তাঁরা এই ধোঁয়ার কারণ নয়, তাঁদের স্বাস্থ্যগত অন্য জটিলতা ছিল।

বার্ন ইউনিটের আবাসিক চিকিৎসক হারুন অর রশিদ আজ মঙ্গলবার দুপুরে প্রথম আলোকে বলেন, ‘চিকিৎসাধীন ১৩ জনের শ্বাসনালি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে ধারণা করছি। এখনই কাউকে শঙ্কামুক্ত বলা যাচ্ছে না। তাঁদের মধ্যে ১১ জন সাধারণ ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন। মুশফিকা ও মমতাজকে আইসিইউতে রাখা হয়েছে।’

বার্ন ইউনিটের আরেক চিকিৎসক প্রথম আলোকে বলেন, যে ১৩ জন হাসপাতালে ভর্তি তাঁদের শরীরে আগুন লাগেনি। ধোঁয়ার কারণে তাঁরা অসুস্থ হয়েছেন। তাঁদের মধ্যে এখন পর্যন্ত কোনো জটিলতা তৈরি হয়নি। সতর্কতামূলক তাঁদের হাসপাতালে রাখা হয়েছে।

গত সোমবার ভোর ৪টা ১০ মিনিটে নাজিমুদ্দিন রোডের পাঁচতলা ভবনটির নিচতলায় আগুন লাগার খবর পায় ফায়ার সার্ভিস। ফায়ার সার্ভিসের নিয়ন্ত্রণকক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ফায়ার সার্ভিসের সাতটি ইউনিট প্রায় এক ঘণ্টার চেষ্টায় ভোর সোয়া পাঁচটার দিকে আগুন নেভায়। ওই ভবন থেকে একজনের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়। ভবনটির দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ তলার বাসাগুলো থেকে মোট ১৮ জনকে উদ্ধার করা হয়।

আরও পড়ুন

তাঁদের মধ্যে ১৩ জন হাসপাতালে ভর্তি আছেন। চিকিৎসাধীন ব্যক্তিরা হলেন ইকবাল (৪০), তাঁর মা মমতাজ বেগম (৭৫), স্ত্রী ইসরাত জাহান (৩৬), দুই মেয়ে ইসয়াত (৫) ও ইসতিমাম (১১) এবং ভাগনি মুশফিকা (২০)। আরও চিকিৎসা নিচ্ছেন মো. ইউনুস মিয়া (৭৪), তাঁর স্ত্রী রাহেলা খাতুন (৬০), ছেলে বুলবুল (৩৭) ও মো. আমিন (২৩), মেয়ে মোছা. শিল্পী (৪২) ও নাতি তালহা (৪) এবং আসবাবের দোকানের কর্মচারী শাকিব হোসেন (২২)।