পরিচ্ছন্নতাকর্মীর কর্মচ্যুতি নিয়ে প্রশ্ন

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) ২৯ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর সলিম উল্লাহর অভিযোগের ভিত্তিতে এক পরিচ্ছন্নতাকর্মীকে চাকরিচ্যুত (কর্মচ্যুত) করা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, পশু জবাইখানায় কাউন্সিলরের ভাইয়ের ‘অবৈধ নির্মাণকাজের’ বিষয়টি মাকসুদুল আলম নামের ওই পরিচ্ছন্নতাকর্মী ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানিয়েছিলেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে নির্মাণকাজ বন্ধ হওয়ায় কাউন্সিলর ক্ষুব্ধ হয়ে তাঁর বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ তুলেছেন।

মাকসুদুল আলম ঢাকা উত্তর সিটির অঞ্চল-৫–এ স্বাস্থ্য বিভাগের আওতাধীন কৃষি মার্কেটের পশু জবাইখানায় দৈনিক মজুরিভিত্তিতে (মাস্টাররোলে) পরিচ্ছন্নতাকর্মী ছিলেন। অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে তিনি জবাইখানায় সিলম্যানের দায়িত্ব পালন করতেন।

১৬ নভেম্বর মাকসুদুলকে চাকরিচ্যুত করা সংক্রান্ত একটি অফিস আদেশ জারি করেন উত্তর সিটির সচিব মোহাম্মদ মাসুদ আলম ছিদ্দিক। আদেশে বলা হয়, তাঁর কর্মকাণ্ডে সিটি করপোরেশনের ভাবমূর্তি ও সুনাম ক্ষুণ্ন হওয়ায় তাঁকে কর্মচ্যুত করা হলো।
মাকসুদুলের বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হয়, তিনি মার্কেট ক্যাম্প ও কমিউনিটি সেন্টার রিলিফ ক্যাম্পে মাদক কারবারে জড়িত, কসাইখানায় পশু জবাইয়ের জন্য দোকানদারদের কাছে চাঁদাবাজি করেন। এ ছাড়া, জবাইখানার অফিস কক্ষে রাতে মাদক সেবনসহ বিভিন্ন অনৈতিক কাজ করেন তিনি।

তবে সব অভিযোগ অস্বীকার করে মাকসুদুল আলম প্রথম আলোকে বলেন, ‘কাউন্সিলর নিজের ক্ষমতাবলে এটা করিয়েছেন।’ কাউন্সিলরের নিজের ও তাঁর ভাইয়ের স্বার্থে আঘাত লাগার কারণেই অভিযোগ করেছেন বলেও দাবি করেন তিনি।

মাকসুদুল আলম প্রথম আলোকে বলেন, ‘কাউন্সিলর নিজের ক্ষমতাবলে এটা করিয়েছেন।’ কাউন্সিলরের নিজের ও তাঁর ভাইয়ের স্বার্থে আঘাত লাগার কারণেই অভিযোগ করেছেন বলেও দাবি করেন তিনি।

মাকসুদুলের বিরুদ্ধে কাউন্সিলরের অভিযোগের বিষয়ে স্বাস্থ্য ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের আঞ্চলিক পর্যায়ের একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলেছে প্রথম আলো। তাঁরা কেউই নাম প্রকাশ করে বক্তব্য দিতে চাননি। তাঁরা জানান, কৃষিমার্কেট কাঁচাবাজারের পাশে উত্তর সিটির একটি পশু জবাইখানা রয়েছে। সেখানে চিকিৎসক ও কর্মীদের বসার একটি কক্ষ আছে, যা জবাইখানার কার্যালয় হিসেবে ব্যবহার করা হয়। সম্প্রতি ওই কক্ষটিকে সংস্কার করে এটির ছাদ ঢালাই করা হয়েছে। কক্ষটি ছিল টিনের ছাউনির। সংস্কারকাজের সময় কাউন্সিলরের ছোট ভাই মো. হাবিবুল্লাহ ঠিকাদারকে ছাদে পিলার রাখতে বলেছিলেন। তাঁর পরিকল্পনা ছিল ছাদ আরও কয়েকটি তালা করবেন।

তবে ঠিকাদার হাবিবুল্লাহর ভাইয়ের কথা শোনেননি। এমনকি বাড়তি লোহার রডগুলোও কেটে ফেলা হয়েছিল। পরে কাউন্সিলর ও তাঁর ছোট ভাইয়ের অনুসারীরা অফিস কক্ষের পেছনের দেয়াল ভেঙে কক্ষটি ছোট করেন এবং ওপরে ওঠার একটি সিঁড়ি তৈরি করেন। ঢালাই ভেঙে ছাদে পিলারের রড বের করেন। সেখানে রড যুক্ত করা হয় ও সেগুলো ঝালাই দিয়ে পিলার দাঁড় করানো হয়।

কর্মকর্তারা জানান, কাউন্সিলরের ভাইয়ের এ কাজগুলো দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মী হিসেবে মাকসুদুল তাঁর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানিয়েছিলেন। পরে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ওই জায়গা পরিদর্শনে যান এবং কাজ বন্ধ করার নির্দেশনা দেন। ওই কাজ বাস্তবায়ন না হওয়াতেই কাউন্সিলর ক্ষুব্ধ হয়ে এমন অভিযোগ করে থাকতে পারেন বলে তাঁরা মনে করছেন।

পরিচ্ছন্নতাকর্মীর বিরুদ্ধে অভিযোগ দেওয়ার বিষয়ে বক্তব্য জানতে ২৯ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সলিম উল্লার মুঠোফোনে একাধিকবার কল করা হয়। তবে তিনি সাড়া দেননি। পরে আবার কল করা হলে নম্বরটি ব্যস্ত পাওয়া যায়। এরপর তাঁর হোয়াটসঅ্যাপে অফিস আদেশের কপি পাঠিয়ে তাঁর বক্তব্য জানতে চাওয়া হয়। তিনি বার্তাটি দেখেও উত্তর দেননি।

এ ব্যাপারে জানতে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হয় উত্তর সিটির মেয়র আতিকুল ইসলামের সঙ্গে। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, কাউন্সিলর ওই কর্মীর বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ করেছিলেন, তা খতিয়ে দেখতে কমিটি গঠন করা হয়েছিল। কমিটি অভিযোগগুলোর সত্যতা পেয়ে চাকরিচ্যুতির সুপারিশ করে। সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।