পাঁচ দফা দাবিতে ইউল্যাবের দুই শিক্ষার্থীর অনশন অব্যাহত
ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস বাংলাদেশের (ইউল্যাব) উপাচার্য ইমরান রহমান, ট্রাস্টি বোর্ডদের সদস্যদের পদত্যাগসহ পাঁচ দফা দাবিতে অনশন অব্যাহত রেখেছেন বিশ্ববিদ্যালয়টির দুই শিক্ষার্থী।
আজ বৃহস্পতিবার বেলা একটার পর রাজধানীর বছিলার ইউল্যাবের মূল ফটকের সামনে তাঁরা আমরণ অনশন শুরু করেন। রাত পৌনে ১০টার সময় এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত তাঁরা অনশন অব্যাহত রেখেছেন। অনশনকারী দুই শিক্ষার্থী হলেন ইউল্যাবের মিডিয়া স্টাডিজ অ্যান্ড জার্নালিজম বিভাগের শিবলী সাদিক ও ইবতেশাম চৌধুরী।
এই দুই শিক্ষার্থী অনশন শুরু করলে দুপুর থেকেই আরও বেশ কিছু শিক্ষার্থী উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে বিভিন্ন ধরনের স্লোগান দিতে থাকেন। উপাচার্যের পদত্যাগ চেয়ে বিভিন্ন ধরনের লেখাসংবলিত পোস্টারও তাঁদের হাতে রয়েছে।
এ অবস্থায় সন্ধ্যার দিকে বছিলার ইউল্যাব ক্যাম্পাসে গেছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখ্য সংগঠক আবদুল হান্নান মাসউদ ও মুখপাত্র উমামা ফাতেমা। এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের এই দুই নেতা, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ও আন্দোলনকারীদের মধ্যে আলোচনা চলছিল। এর মধ্যে উমামা ফাতেমা রাত আটটার দিকে সেখান থেকে চলে যান। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখ্য সংগঠক আবদুল হান্নান মাসউদ রাত পৌনে ১০টা পর্যন্ত ঘটনাস্থলে ছিলেন।
ইউল্যাব উপাচার্যের বিরুদ্ধে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের চেতনাকে অসম্মান এবং আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের হয়রানি করার অভিযোগ এনেছেন এই শিক্ষার্থীরা। আর ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্যদের বিরুদ্ধে ‘ফ্যাসিবাদের দোসর এবং দুর্নীতি’র অভিযোগ এনেছেন তাঁরা।
এ ছাড়া শিক্ষার্থীদের পাঁচ দফা দাবির মধ্যে রয়েছে ডিসিপ্লিনারি কমিটি ও প্রক্টরিয়াল বডির সবাইকে ছাত্রবিরোধী সিদ্ধান্তের দায় নিয়ে পদত্যাগ করা, শিক্ষার্থীসহ সব অংশীজনের মতামতের ভিত্তিতে ইউল্যাবের ‘কোড অব কন্ডাক্ট’-এর যৌক্তিক সংস্কার করা এবং মুক্তচিন্তা, মতপ্রকাশ ও ব্যক্তিস্বাধীনতা হরণ করে, এমন সব কালাকানুন ইউল্যাবের আইনকাঠামো থেকে বিলোপ করা।
গণ–অভ্যুত্থানের পক্ষে ইউল্যাব ক্যাম্পাসে গ্রাফিতি আঁকায় গত রোববার দুই শিক্ষার্থীকে শাস্তি দেওয়ার উদ্যোগ নিয়ে ই-মেইল করে কর্তৃপক্ষ। এর প্রতিবাদে পাঁচ দফা দাবিতে আজ শিক্ষার্থীরা দ্বিতীয় দিনের মতো আন্দোলন করছেন।
অনশনে থাকা শিক্ষার্থী শিবলী সাদিক প্রথম আলোকে বলেন, গণ-অভ্যুত্থানের পক্ষে ক্যাম্পাসে গ্রাফিতি আঁকায় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ দুই শিক্ষার্থীকে সাসপেন্ড (বহিষ্কার) করার উদ্যোগ নিলে এর প্রতিবাদে পাঁচ দফা দাবিতে বুধবার দুপুরে ক্যাম্পাসে তাঁরা আন্দোলন শুরু করেন। ওই দিন বেলা তিনটার পর উপাচার্যের একটি প্রতিনিধিদল এসে দাবি না মেনে আন্দোলনকারীদের ‘সন্ত্রাসী’ বলে অ্যাখ্যা দেয়। পরে তখন থেকে তাঁরা ব্লকেড কর্মসূচি শুরু করেন। বুধবার দিবাগত রাত ১২টায় তাঁরা সংবাদ সম্মেলন করে উপাচার্য, সহ-উপাচার্য ও ট্রাস্টি বোর্ডের দুই সদস্যকে বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টার মধ্যে পদত্যাগ করার আলটিমেটাম দেন এবং সেদিনের মতো কর্মসূচি শেষ করেন। আজ দুপুর ১২টার মধ্যে দাবি না মানায় সেই ৫ দফা দাবিতে আমরণ অনশন শুরু করেন তাঁরা।
অভিযোগ উঠেছে, নানা অজুহাতে গত প্রায় দুই মাসে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে থাকা বেশ কিছু শিক্ষার্থীকে বিভিন্ন মেয়াদে বহিষ্কার করেছে ইউল্যাব কর্তৃপক্ষ। সেসব শিক্ষার্থীও উপাচার্যের পদত্যাগের দাবির আন্দোলনে অংশ নিয়েছেন।
এমন একজন শিক্ষার্থী মো. মাহির ইসলাম। ইউল্যাব ক্যাম্পাস প্রাঙ্গণে ধূমপান করায় তাঁকে দুই সেমিস্টারের জন্য সাসপেন্ড (বহিষ্কার) করা হয়েছে। মাহির ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, নিয়ম ভঙ্গ করে সতর্ক করা ছাড়াই এমন একটা ছোট অপরাধে তাঁদের বহিষ্কার করা হয়েছে।
মাহির ইসলাম বলেন, গণ-অভ্যুত্থানের সময় ১৭ জুলাই ক্যাম্পাসের সামনে ইউল্যাবের শিক্ষার্থীরা মার খাচ্ছিলেন। তখন শিক্ষার্থীরা বাঁচতে ক্যাম্পাসে ঢুকতে চাইলে ইউল্যাবের ফটক বন্ধ করে দেওয়া হয়। ফটক থেকে নিরাপত্তাকর্মী বলেন, ‘বড় সাহেবের অর্ডার আছে, ফটক খোলা যাবে না।’ পরে সরকার পতন হলে ইউল্যাব কর্তৃপক্ষের কাছে শিক্ষার্থীরা জানতে চান, সেই বড় সাহেব কে? এ ঘটনায় একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে ইউল্যাব কর্তৃপক্ষ। যেসব শিক্ষার্থী জানতে চেয়েছেন সেই বড় সাহেব কে, তাঁদের মধ্যে ইতিমধ্যে ১০ জনের বেশি শিক্ষার্থীকে নানা অজুহাতে বিভিন্ন মেয়াদে শাস্তি দেওয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে ইউল্যাব উপাচার্য ইমরান রহমানের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি পরে কথা বলবেন বলে জানান। পরে তাঁর সঙ্গে আবার যোগাযোগ করলে তিনি সাড়া দেননি।