বাজেটের ৭০ ভাগই সরকার থেকে পাওয়ার আশা দক্ষিণ সিটির
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন ২০২২–২৩ অর্থবছরের জন্য ৬ হাজার ৭৪১ কোটি ২৮ লাখ টাকার বাজেট ঘোষণা করেছে। ঘোষিত বাজেটের ৭০ ভাগ টাকা তথা ৪ হাজার ৭১৮ কোটি টাকা সরকারের কাছ থেকে পাওয়ার লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করা হয়েছে। যদিও আগের অর্থবছরে সরকারের কাছে সংস্থাটি যে পরিমাণ (৪ হাজার ৮২৯ কোটি) অনুদান চেয়েছে, তার মাত্র ১০ শতাংশ তথা ৫২৭ কোটি টাকা পেয়েছে।
আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে নগর ভবনের মেয়র মোহাম্মদ হানিফ মিলনায়তনে এ বাজেট ঘোষণা করেন মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস। এ সময় সরকারের কাছে বেশি পরিমাণ সহায়তার লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করার বিষয়ে তিনি বলেছেন, জাতীয় বাজেটে বরাদ্দ বেশি থাকলে তাঁরা বেশি বাস্তবায়ন করবেন, আর কম থাকলে কম পাবেন। তবে সরকারের অনুদানের দিকে তাঁরা এখন আর তাকিয়ে থাকেন না। নিজস্ব অর্থায়নে উন্নয়নকর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছেন।
এ প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে মেয়র বলেন, এখন পর্যন্ত নাগরিকদের যতটুকু সুফল দিতে পেরেছেন, তা করেছেন নিজস্ব অর্থায়নে। সরকার থেকে প্রকল্পের অনুমোদন না পেলেও ১৫০ কোটি টাকা খরচ করে নর্দমা ও অবকাঠামো উন্নয়নে কাজ করেছেন। জলাবদ্ধতা নিরসনে খাল সংস্কারের জন্য সরকারের কাছে প্রকল্প পাঠানো হলেও তারা ইতিমধ্যে নিজস্ব তহবিল থেকে খালের রক্ষণাবেক্ষণে কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন।
এর আগে গত ২৬ জুলাই অনুষ্ঠিত করপোরেশনের দ্বিতীয় পরিষদের পঞ্চদশ করপোরেশন বোর্ড সভায় নতুন অর্থবছরের বাজেট অনুমোদন করা হয়েছে। সংস্থার সাধারণ ও সংরক্ষিত ওয়ার্ডের কাউন্সিলররা বোর্ড সভার সদস্য।
বাজেট ঘোষণার সময় মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস বলেন, সিটি করপোরেশনের ইতিহাসে এবারই প্রথম তাঁরা রেকর্ডসংখ্যক রাজস্ব আদায় করেছেন। যেমন গত অর্থবছরে নাগরিকদের সেবার বিপরীতে বিভিন্ন খাত থেকে ৮৩৩ কোটি ৪৯ লাখ টাকা রাজস্ব আদায় করেছেন। এর আগের বছর রাজস্ব আদায় হয়েছে ৭০৩ কোটি ৩১ লাখ টাকা। প্রতিবছর রাজস্ব আদায় বাড়ছে। চলতি অর্থবছরে দক্ষিণ সিটির মেয়র হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আদায়ের আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন।
দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নেওয়ার কারণে রাজস্ব আদায় বেড়েছে জানিয়ে দক্ষিণ সিটির মেয়র বলেন, তিনি ঢাকাবাসীকে শক্তিশালী প্রশাসনিক ব্যবস্থা দিতে সক্ষম হয়েছেন। অপচয় কমিয়েছেন। নানা উদ্যোগের কারণে দক্ষিণ সিটিতে সুশাসন প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
২০১৭ সাল থেকে শাহবাগে শিশুপার্ক বন্ধ রয়েছে, এটি চালুর বিষয়ে জানতে চাইলে মেয়র তাপস সাংবাদিকদের বলেন, প্রকল্প অনুমোদনসংক্রান্ত জটিলতার কারণে শিশুপার্ক চালু হয়নি। আগামী দুই বছরের মধ্যে এটি চালু করার উদ্যোগ নিয়েছেন বলে জানান তিনি।
আর নগর ভবনের পাশেই ওসমানী উদ্যানের উন্নয়নকাজ এখন পর্যন্ত শেষ না হওয়ার বিষয়ে তিনি বলেছেন, ঠিকাদারের গাফিলতি ও অবহেলার কারণে এত দিনেও কাজ শেষ হয়নি। তবে তাঁরা বাকি কাজ শেষ করতে উদ্যোগ নিয়েছেন। চলতি বছরের মধ্যে বাকি কাজ শেষ হবে বলে জানান তিনি। উল্লেখ্য, ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে ওসমানী উদ্যানের উন্নয়নকাজ শুরুর হয়েছিল। ২০২০ সালের ডিসেম্বর ওই কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল।
সাংবাদিকদের আরেক প্রশ্নের জবাবে শেখ ফজলে নূর তাপস বলেন, সচল ঢাকা গড়তে তিনি নানামুখী উদ্যোগ নিয়েছেন। এর মধ্যে বাস রুট রেশনাইজেশন বাস্তবায়ন শুরু হয়েছে। দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এলাকায় ৪০ ভাগ মানুষ হেঁটে চলাচল করছে। ৫০ ভাগ মানুষ যাতে হেঁটে চলাচল করতে পারে, সেই লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে কাজ করছেন। আগামী তিন বছরের মধ্যে বুড়িগঙ্গা আদি চ্যানেল দৃষ্টিনন্দন করে জনগণের জন্য উন্মুক্ত করা হবে বলেও জানান তিনি।
বাজেট ঘোষণার সময় মেয়রের পাশে দক্ষিণ সিটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ফরিদ আহাম্মদ, প্যানেল মেয়র শহিদ উল্লাহ মিনু ও অর্থ ও সংস্থাপনবিষয়ক স্থায়ী কমিটির সভাপতি মোহাম্মদ সেলিম উপস্থিত ছিলেন। এ ছাড়া দর্শকসারিতে সংস্থার বিভিন্ন বিভাগের কর্মকর্তা ও কাউন্সিলরা উপস্থিত ছিলেন।