গুলশান-২ নম্বরে অবস্থিত যে বাড়িটি আব্দুস সালাম মুর্শেদী দখলে রেখেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে, সেই এলাকাসংক্রান্ত লে–আউট ম্যাপ বা মাস্টারপ্ল্যান সাত দিনের মধ্যে আদালতে দাখিল করতে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষকে (রাজউক) নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।
একই সঙ্গে আদালতের কার্যক্রম ও আদেশ ছাড়া মামলার বিষয়বস্তুকে স্পর্শ করে এমন কোনো বিষয়ে কোনো ধরনের প্রচার-প্রচারণা না চালাতে পক্ষগুলোকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পৃথক আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আজ বুধবার বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি খিজির হায়াতের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন। এ–সংক্রান্ত রুল শুনানির জন্য ২৩ ফেব্রুয়ারি দিন রেখেছেন আদালত।
রাজধানীর গুলশান-২ অবস্থিত পরিত্যক্ত সম্পত্তির ‘খ’ তালিকাভুক্ত বাড়িটি দখলে রাখার অভিযোগ তুলে অনুসন্ধানের নির্দেশনা চেয়ে গত বছরের ৩০ অক্টোবর রিট করেন সৈয়দ সায়েদুল হক। এর প্রাথমিক শুনানি নিয়ে গত ১ নভেম্বর হাইকোর্ট রুল দিয়ে বাড়িসংক্রান্ত প্রয়োজনীয় নথিপত্র হলফনামা আকারে দাখিল করতে নির্দেশ দেন। এর ধারাবাহিকতায় ওই বাড়িসংক্রান্ত নথি আদালতে দাখিল করে রাজউক।
বাড়ি নিয়ে গৃহায়ণ ও গণপূর্তের তদন্ত প্রতিবেদন ৩০ জানুয়ারি আদালতে তুলে ধরে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) আইনজীবী জানান, বাড়িটি দখলের যে অভিযোগ, তা অনুসন্ধানের জন্য দুদক দুই সদস্যবিশিষ্ট অনুসন্ধান কমিটি গঠন করেছে। সেদিন শুনানিতে রিট আবেদনকারী সৈয়দ সায়েদুল হকের ফেসবুকে পেজে আপলোড করা দুটি লাইভ ভিডিও নিয়ে আপত্তি তুলে বিচারাধীন অবস্থায় মামলার মূল বিষয়বস্তুকে স্পর্শ করে, এমন ভিডিও প্রচার করা থেকে রিট আবেদনকারীকে বিরত রাখতে নির্দেশনা চেয়ে সালাম মুর্শেদী আবেদন দেন। এর শুনানি নিয়ে ৩০ জানুয়ারি হাইকোর্ট সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম থেকে অবিলম্বে ভিডিও দুটি সরাতে (অফলোড) রিট আবেদনকারীকে নির্দেশ দেন। পাশাপাশি রুল শুনানির জন্য ৮ ফেব্রুয়ারি দিন রাখেন।
আগের ধারাবাহিকতায় আজ বিষয়টি শুনানির জন্য ওঠে। রিট আবেদনকারী ওই প্লট নিয়ে রাজউকের মাস্টারপ্ল্যান দাখিল করতে রাজউক চেয়ারম্যানের প্রতি নির্দেশনা দেওয়ার আরজি জানান। অন্যদিকে বিষয়বস্তুকে স্পর্শ করে এমন ভিডিও বা বক্তব্য রিট আবেদনকারীকে প্রচার না করতে ৩০ জানুয়ারি হাইকোর্ট যে আদেশ দিয়েছিলেন, তা বাস্তবায়নের নির্দেশনা চেয়ে সালাম মুর্শেদী একটি আবেদন দেন। এসবের ওপর শুনানি হয়।
আব্দুস সালাম মুর্শেদী সংসদ সদস্য, ব্যবসায়ী ও সাবেক ফুটবলার। আদালতে সালাম মুর্শেদীর পক্ষে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মোহাম্মদ সাঈদ আহমেদ শুনানি করেন। দুদকের পক্ষে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী খুরশীদ আলম খান, রাষ্ট্রপক্ষে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ কে এম আমিন উদ্দিন এবং রাজউকের পক্ষে আইনজীবী জাকির হোসেন মাসুদ শুনানিতে ছিলেন। রিট আবেদনকারীর পক্ষে ছিলেন আইনজীবী লিটন আহমেদ।
পরে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী খুরশীদ আলম খান প্রথম আলোকে বলেন, ওই বাড়ির বিষয়ে দুদক অনুসন্ধান কমিটি গঠন করেছে। আদালত অনুসন্ধান শেষে করে তিন সপ্তাহের মধ্যে দুদককে প্রতিবেদন দিতে বলেছেন।
সাত দিনের মধ্যে ওই বাড়িসংক্রান্ত এলাকার মাস্টারপ্ল্যান রাজউককে দাখিল করতে হাইকোর্ট নির্দেশ দিয়েছেন বলে জানান ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ কে এম আমিন উদ্দিন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, রুল শুনানির জন্য ২৩ ফেব্রুয়ারি দিন রেখেছেন আদালত।