শিক্ষার্থীদের বিনা মূল্যের বই বিতরণে উৎসবের রং

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে বিনা মূল্যের বই বিতরণ উৎসবের আয়োজন করা হয়
ছবি:  দীপু মালাকার

নামিরা আলম পড়ে পুরোনো ঢাকার গেন্ডারিয়া মহিলা সমিতি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। তৃতীয় শ্রেণি শেষ করে এবার সে চতুর্থ শ্রেণিতে উঠেছে। নতুন বছরের প্রথম দিনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে আয়োজিত বিনা মূল্যের বই বিতরণ উৎসবে যোগ দিতে এসেছিল সে। করোনার পর এমন বই উৎসবে যোগ দিতে পেরে দারুণ খুশি নামিরা। প্রথম আলোকে বলল, সকাল নয়টায় সে এখানে এসেছে। এসে অনেক ভালো লাগছে।

নামিরার মতো  ঢাকা মহানগর এলাকার বিভিন্ন বিদ্যালয়ের প্রায় ৩ হাজার ছোট্ট শিক্ষার্থী এই বই বিতরণ উৎসবে যোগ দিতে এসেছিল। নতুন বই হাতে পেয়ে শিশুরা উচ্ছ্বাস প্রকাশ করছিল। প্রাথমিক স্তরের শিক্ষার্থীদের জন্য এই বই বিতরণ উৎসবের আয়োজন করে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়।

সাফ নারী ফুটবল চ্যাম্পিয়ন দলের খেলোয়াড় স্বপ্না রানী, সাথী বিশ্বাস, সাজেদা খাতুন এবং সোহাগী কিসকুর উপস্থিতি এই বই উৎসবকে ভিন্ন মাত্রা দিয়েছে। এ চার খেলোয়াড় ছোট্ট শিশুদের অনুপ্রেরণা দিতে গিয়ে বলেন, পড়াশোনার পাশাপাশি খেলাধুলাও করতে হবে। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের নিয়ে আয়োজিত বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন নেসা গোল্ডকাপ প্রাথমিক বিদ্যালয় ফুটবল টুর্নামেন্টে অংশ নিয়ে এই পর্যায়ে আসতে পেরেছেন বলেও উল্লেখ করেন তাঁরা।

আরও পড়ুন
প্রাথমিক স্তরের শিক্ষার্থীদের জন্য বই বিতরণ উৎসবের আয়োজন করে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়
ছবি:  দীপু মালাকার

বই উৎসবে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানেরও আয়োজন করা হয়েছিল। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব ফরিদ আহাম্মদ অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন। সেখানে আরও বক্তব্য দেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও সাবেক মন্ত্রী মোস্তাফিজুর রহমান, এই সংসদীয় কমিটির সদস্য শিরীন আখতার, ফেরদৌসী ইসলাম, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক শাহ রেজওয়ান হায়াত। বক্তব্য শেষে অতিথিরা কয়েকজন শিক্ষার্থীর হাতে নতুন বই তুলে দিয়ে এবং বেলুন উড়িয়ে এই বই বিতরণ উৎসবের উদ্বোধন করেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠের এই অনুষ্ঠানের পাশাপাশি সারা দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতেও আজ উৎসব করে বই বিতরণ করা হচ্ছে। করোনাভাইরাসের সংক্রমণের কারণে গত দুই বছর বই উৎসব হয়নি। করোনা নিয়ন্ত্রণে আসায় এবার নতুন শিক্ষাবর্ষের প্রথম দিনে সারা দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোয় উৎসব করে শিক্ষার্থীদের হাতে বিনা মূল্যে পাঠ্যবই তুলে দেওয়া হচ্ছে।

মাধ্যমিকের কেন্দ্রীয় পাঠ্যপুস্তক উৎসব হয়েছে গাজীপুরের কাপাসিয়া উপজেলার কাপাসিয়া পাইলট উচ্চবিদ্যালয়ে। সকালে এর উদ্বোধন করেন শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি।

সেখানে ছিলেন শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী, স্থানীয় সংসদ সদস্য সিমিন হোসেন, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের বিদায়ী সচিব মো. আবু বকর ছিদ্দীক, কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের জ্যেষ্ঠ সচিব মো. কামাল হোসেন প্রমুখ।

এর আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল শনিবার বিনা মূল্যে ২০২৩ শিক্ষাবর্ষের পাঠ্যপুস্তক বিতরণ কার্যক্রমের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেছেন। এবার সারা দেশে মোট ৪ কোটির মতো শিক্ষার্থীকে বই দেওয়া হচ্ছে। এ জন্য  প্রাথমিকে ৯ কোটি ৬৬ লাখ ৮ হাজার ২৪৫টি এবং মাধ্যমিকে ২৩ কোটি ৮৩ লাখ ৭০ হাজার ৫৮৮টি বই ছাপানো হচ্ছে।

এনসিটিবির সূত্রমতে, গতকাল বিকেল পর্যন্ত প্রাথমিকে ৭ কোটি ৫০ হাজারের কিছু বেশি বই ছাপা হয়েছে। তবে ছাপার পর আনুষঙ্গিক কাজ শেষে উপজেলা পর্যায়ে গেছে ৬ কোটি ৭৭ লাখের বেশি বই। অন্যদিকে মাধ্যমিকে ১৯ কোটি ২২ লাখের বেশি বই ছাপা হয়েছে। এর মধ্যে উপজেলা পর্যায়ে গেছে ১৭ কোটি ৭৯ লাখের বেশি বই। প্রাথমিকের প্রায় ২৭ শতাংশ এবং মাধ্যমিকের ১৯ শতাংশের মতো বই ছাপা হয়নি।

আরও পড়ুন
নতুন বই হাতে পেয়ে শিশুরা উচ্ছ্বাস প্রকাশ করছিল,
ছবি:  দীপু মালাকার

এসব তথ্য বলছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোয় উৎসব হলেও আজ বছরের প্রথম দিনে সব শিক্ষার্থী সব বই হাতে পাবে না। নানামুখী জটিলতায় এবার ছাপার কাজ পুরোপুরি শেষ না হওয়ায় বিপুলসংখ্যক শিক্ষার্থী কয়েকটি করে বই পাবে।

এনসিটিবির চেয়ারম্যান মো. ফরহাদুল ইসলাম গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, পাঠ্যপুস্তক উৎসবের কোনো ঘাটতি হবে না। উৎসবের জন্য সব জায়গাতেই বই গেছে এবং সব শিক্ষার্থীই নতুন বই হাতে পাবে। তবে শতভাগ বই দিতে ১৫ জানুয়ারি পর্যন্ত লেগে যেতে পারে।

এদিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে বই বিতরণ উৎসবে এ বিষয়ে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেন বলেন, ইতিমধ্যে সব বিদ্যালয়েই বই পৌঁছে গেছে। হয়তো দু-এক সেট কম থাকতে পারে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণ সৃষ্ট কাগজ সংক্রান্ত সমস্যার কারণে ছাপাখানাগুলো সঠিক সময়ে পূর্ণাঙ্গ বই দিতে পারেনি। প্রায় ৮০ ভাগ বই দিয়েছে। তবে এ মাসের মধ্যে সারা বাংলাদেশে শতভাগ বই দিতে পারবেন বলে প্রতিমন্ত্রী আশা প্রকাশ করেছেন।