ইতিহাস গণহত্যার সাক্ষ্য বহন করে। ইউক্রেন ও ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় এখন গণহত্যা চলছে। ইতিহাসের প্রেক্ষাপট ও নৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে গণহত্যা প্রতিরোধে লড়াই চালিয়ে যেতে হবে। গণহত্যাবিষয়ক আন্তর্জাতিক সম্মেলনের সমাপনী দিনে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞের বক্তব্যে উঠে এসেছে এসব কথা।
রাজধানীর আগারগাঁওয়ে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর মিলনায়তনে শনিবার ছিল গণহত্যাবিষয়ক অষ্টম আন্তর্জাতিক সম্মেলনের সমাপনী দিন। ‘গণহত্যা অস্বীকারের রাজনীতি: সত্য, স্বীকৃতি ও ন্যায়বিচারের প্রতি বৈশ্বিক লড়াই’ শিরোনামে গত বৃহস্পতিবার সম্মেলন শুরু হয়। গণহত্যা ও যুদ্ধাপরাধ প্রতিরোধ এবং বিশ্বজুড়ে শান্তি রক্ষায় করণীয় নিয়ে সমাপনী দিনে ১৮ দফা ঘোষণা করা হয়।
সম্মেলনে বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালসের (বিইউপি) অধ্যাপক সৈয়দ আনোয়ার হোসেন বলেন, ইতিহাস গণহত্যার সাক্ষ্য বহন করে। এখন ইউক্রেন ও গাজায় গণহত্যা চলছে। বাংলাদেশের রাজনীতি এত সংকীর্ণ যে বিরোধীরা যুক্তরাষ্ট্রের ভয়ে গাজার গণহত্যা নিয়ে চুপ করে আছে। বাংলাদেশে সুশাসন দরকার। বাংলাদেশে সংঘটিত গণহত্যার স্মৃতি ধারণ করে এর স্বীকৃতির বিষয়টি তুলে ধরতে হবে।
মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি ও সেন্টার ফর দ্য স্টাডি অব জেনোসাইড অ্যান্ড জাস্টিসের পরিচালক মফিদুল হক বলেন, ‘আমরা বিশ্বজুড়ে শান্তি চাই। কোথাও নৃশংসতা ঘটবে না। গাজায় যে নৃশংস ঘটনা ঘটছে, তার বিরুদ্ধে কিছু করার দায়িত্ব রয়েছে সবার। ইতিহাসের প্রেক্ষাপট থেকে ও নৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে গণহত্যা প্রতিরোধে লড়াই চালিয়ে যেতে হবে।’
অনুষ্ঠানে ইতালির আন্তর্জাতিক মানবাধিকারবিষয়ক সংস্থা পার্মানেন্ট পিপলস ট্রাইব্যুনালের মহাসচিব জুভান্নি তোগননি বলেন, বিশ্ব এখনো গণহত্যার মধ্যে বাস করছে। গণহত্যা প্রতিরোধে এর জন্য দায়ী ব্যক্তিদের অভিযুক্ত করতে হবে।
বাংলাদেশেও গণহত্যা হয়েছে। গণহত্যা প্রতিরোধে তরুণদের কাজ করতে হবে।
কলকাতার প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের সহকারী অধ্যাপক নাভরাস জাত আফ্রিদি বলেন, গণহত্যা প্রতিরোধ করা কতটা প্রয়োজন, তা বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর বিশ্বকে উপলব্ধি করায়। এ ধরনের জাদুঘর সচরাচর দেখা যায় না।
যুক্তরাষ্ট্রের লেমকিন ইনস্টিটিউট ফর জেনোসাইড প্রিভেনশনের নির্বাহী পরিচালক এলিজা ফন জুয়েদো–ফরগে বলেন, এ সম্মেলনে বাংলাদেশের যেসব তরুণকে তিনি দেখেছেন, এমন তরুণেরা থাকলে বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল। বিশ্বজুড়ে গণহত্যা প্রতিরোধে ও দেশে সংঘটিত গণহত্যার স্মৃতি ধারণ করার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের লক্ষ্য ও কার্যক্রমের প্রশংসা করেন তিনি।
পোল্যান্ডের ইনস্টিটিউট অব সোশিওলজি অব কলেজুম সিভিটাসের অধ্যাপক রাফাল পানকোস্কি বলেন, ইউরোপজুড়ে এখন কট্টরপন্থা, বর্ণবাদ ও ফ্যাসিবাদ চলছে। বিশ্বের সব প্রগতিশীল মানুষদের দায়িত্ব এসব অসহিষ্ণুতার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে একাত্ম হওয়া।
১৮ দফা ঢাকা ঘোষণা পাঠ করেন সেন্টার ফর দ্য স্টাডি অব জেনোসাইড অ্যান্ড জাস্টিসের সমন্বয়ক ইমরান আজাদ। ঢাকা ঘোষণায় গাজায় নৃশংস হত্যাকাণ্ড বন্ধের আহ্বানের পাশাপাশি বাংলাদেশ থেকে রোহিঙ্গাদের নিরাপদে প্রত্যাবাসন, গণহত্যা, মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য দায়ী ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের জবাবদিহি নিশ্চিত করা ও অপরাধের দায়মুক্তির সমাপ্তি টানার বিষয়ে জোর দেওয়া হয়।
অনুষ্ঠানটি উপস্থাপন করেন মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের গবেষণা স্বেচ্ছাসেবক শাওলী দাস গুপ্তা। তিন দিনব্যাপী সম্মেলনে আর্জেন্টিনা, অস্ট্রেলিয়া, কম্বোডিয়া, বেলজিয়াম, কানাডা, ইতালি, পোল্যান্ড, ভারত, শ্রীলঙ্কা, যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্র থেকে প্রতিনিধিরা অংশ নেন।
সম্মেলনে গণহত্যাবিষয়ক বিভিন্ন গবেষণা প্রতিবেদন উপস্থাপন, চলচ্চিত্র ও পোস্টার প্রদর্শন, আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।