আওয়ামী লীগের আমলে সরকারের গোয়েন্দা সংস্থার কর্মকর্তারা আলেমদের বিভক্ত রাখতে তৎপর ছিলেন। তাই গোয়েন্দাদের কথা বিশ্বাস করে পরস্পরকে আর দোষারোপ না করে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। শুক্রবার বিকেলে রাজধানীর কাকরাইলের ইনস্টিটিউট অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স মিলনায়তনে এক আলোচনায় তাঁরা এসব কথা বলেন।
‘জনসাধারণের প্রত্যাশায় আগামীর বাংলাদেশ’ শীর্ষক এই আলোচনার আয়োজন করে সাধারণ আলেম সমাজ নামের একটি নতুন নাগরিক সংগঠন। সেখানে সংগঠনটির আত্মপ্রকাশের কথা জানানো হয়। সেখান থেকে সাধারণ আলেম সমাজের ২১ সদস্যবিশিষ্ট একটি আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়। কমিটি আগামী এক বছর কাজ করবে। কমিটির আহ্বায়ক করা হয়েছে রেদওয়ান হাসানকে। তিনি যাত্রাবাড়ী বড় মাদ্রাসার শিক্ষক। আর সদস্যসচিব করা হয়েছে রকিব মুহাম্মদকে। তিনি একটি অনলাইন নিউজ পোর্টালের সাংবাদিক।
অনুষ্ঠানে মাওলানা সাইফ সিরাজ বলেন, ‘গোয়েন্দাদের কথা বিশ্বাস করে পরস্পরকে আর দোষারোপ করবেন না। টুপি নিয়ে, ব্যক্তি ও ছোটখাটো বিষয় নিয়ে বিভাজন করা যাবে না। ইসলামের জন্য যাঁরাই কাজ করবেন, তাঁদের এখন থেকে নানা বিভেদ ভুলে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।’
মাওলানা সাকিবুল ইসলাম কাসেমি বলেন, সব ইসলামি ঘরানার ঐক্য নিশ্চিত করতে হবে। নিজেদের মধ্যে বিভাজন করা যাবে না। ঐক্যবদ্ধ থেকে ইসলাম প্রতিষ্ঠার জন্য কাজ করে যেতে হবে।
বিগত ১৬ বছর ধরে সবার সম্মিলিত চেষ্টায় ৫ আগস্ট বিজয় এসেছে উল্লেখ করে হাফেজ্জি হুজুর সেবা ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান মাওলানা রাজিবুল হক বলেন, ৫ আগস্টের পর তাঁরা ৪২টি শহীদ পরিবারের সঙ্গে দেখা করেছেন। এর মধ্যে তিনজন ছাত্র। বাকিরা সাধারণ মানুষ। ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে শহীদ প্রতিটি পরিবারকে স্মরণে রাখতে হবে।
ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজির অধ্যাপক মুখতার আহমদ বলেন, স্বাধীনতা যাতে হাতছাড়া না হয়ে যায়, সে বিষয়ে সবাইকে সজাগ থাকতে হবে। ফ্যাসিবাদের দোসররা প্রশাসনের বিভিন্ন পদে রয়ে গেছে। তারা এখনো চক্রান্ত ও ষড়যন্ত্র করছে। তাদের বিষয়ে সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে।
শেখ হাসিনার পতন আন্দোলনে নিহত দুই শিক্ষার্থীর বাবাও অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন। তাঁদের মধ্যে যাত্রাবাড়ী এলাকায় নিহত শাহাদাত হোসেনের বাবা বাছির আলম জানান, সন্তানের কথা তিনি এখনো ভুলতে পারছেন না। ১১ আগস্ট জামায়াতে ইসলামীর লোকজন তাঁর সঙ্গে দেখা করে এক লাখ টাকা দিয়েছেন। এরপর আর কেউ তাঁদের খবর নেয়নি।
একই এলাকায় নিহত মেহেদি হাসানের বাবা মেহের আলী জানান, তাঁর ছেলে গত ১৯ জুলাই শহীদ হয়েছে। পুলিশ তাঁর ছেলেকে গুলি করে মেরেছে। তিনি বর্তমান সরকারের কাছে এই হত্যার বিচার চান।
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন আল মারকাজুল ইসলামির পরিচালক হামজা শহীদুল ইসলাম, শরিয়াহভিত্তিক একটি পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের পরিচালক মুফতি আবদুল্লাহ মাসুম, জাতীয় ওলামা মাশায়েখের সাধারণ সম্পাদক মুফতি রেজাউল করীম, সাধারণ আলেম সমাজের যুগ্ম আহ্বায়ক মাওলানা আশরাফুল হক প্রমুখ। অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন নতুন সংগঠনটির যুগ্ম আহ্বায়ক মুহীন মাহফুজ।