মশা নিধনে ওষুধ ছিটালেন ৫ জন, সঙ্গে ছিলেন ৬ জন

ডেঙ্গু পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আজ থেকে ঢাকা দক্ষিণ সিটির ১৭টি ওয়ার্ডে তিন দিনব্যাপী বিশেষ চিরুনি অভিযান শুরু হয়েছে। এসব ওয়ার্ডের মধ্যে ৪৯ নম্বর ওয়ার্ড রয়েছে।

মশা নিধনে ওষুধ দেওয়া হচ্ছে। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ৪৯ নং ওয়ার্ডে চিরুনি অভিযান শুরু করা হয়েছে। ঢাকা, ২৬ জুলাই
ছবি: খালেদ সরকার

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ৪৯ নম্বর ওয়ার্ডে একজন সুপারভাইজারসহ মশকনিধন কর্মী আছেন ১৪ জন। আজ বুধবার বেলা পৌনে ১১টা থেকে দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত এই ওয়ার্ডের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে পাঁচজন কর্মীকে মশার ওষুধ ছিটাতে দেখা গেছে।

বাকি কর্মীদের মধ্যে আজ দুজন কাজে আসেননি। অন্যদের মধ্যে পাঁচজন কর্মী স্প্রে মেশিনে ওষুধ ছিটিয়েছেন। তাঁদের সঙ্গে ঘুরেছেন অন্য ছয়জন কর্মী। কর্তৃপক্ষ বলছে, অনুপস্থিত দুজন কর্মী অসুস্থ। আর যাঁদের হাতে ওষুধ ছিটানোর স্প্রে মেশিন ছিল না, তাঁরা মশার লার্ভা খুঁজে বের করার কাজ করছেন।

ডেঙ্গু পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে আজ থেকে দক্ষিণ সিটির ১৭টি ওয়ার্ডে তিন দিনব্যাপী বিশেষ চিরুনি অভিযান শুরু হয়েছে। এসব ওয়ার্ডের মধ্যে ৪৯ নম্বর ওয়ার্ড রয়েছে। যাত্রাবাড়ী এলাকায় ধলপুর ও ব্রাহ্মণ চিরন এলাকা নিয়ে এই ওয়ার্ড গঠিত।

মশার অত্যাচারে এলাকা ছেড়েছি। এই এলাকায় ঘরে ঘরে ডেঙ্গু রোগী। তোমাদের ওষুধে কাজ হয় না। আর কাউন্সিলর এসি রুমে বসে থাকেন, মাঠে আসেন না
শিউলি আক্তার, দক্ষিণ সিটির বাসিন্দা

দক্ষিণ সিটি সূত্র বলছে, বিশেষ চিরুনি অভিযান চলাকালে একটি ওয়ার্ডে সকাল ও বিকেলে পালা করে যে ১৩ জন মশকনিধন কর্মী কাজ করেন, তাঁরা সবাই একসঙ্গে সকালে এবং বিকেলে মশার ওষুধ ছিটানোর কাজ করবেন। স্বাভাবিক সময়ে একটি ওয়ার্ডে সকালে সাতজন এবং বিকেলে ছয়জন মশকনিধন কর্মী কাজ করেন।

এদিকে সুনির্দিষ্ট কিছু ওয়ার্ডে বিশেষ চিরুনি অভিযান ঘোষণা করা হলেও অন্য সময়ে একটি ওয়ার্ডে যে পরিমাণ ওষুধ ছিটানো হয়, এখনো একই পরিমাণ ওষুধ ছিটানো হচ্ছে। আজ ৪৯ নম্বর ওয়ার্ডের মশকনিধন কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, স্বাভাবিক সময়ে সকালে ওষুধ ছিটাতে প্রত্যেক মশকনিধন কর্মীকে ৫০ মিলিমিটার ওষুধ দেওয়া হতো। বিশেষ চিরুনি অভিযানেও একই পরিমাণ ওষুধ দেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া জনবল বাড়ালেও স্বাভাবিক সময়ে যে কটি যন্ত্র দিয়ে ওষুধ ছিটানো হতো, এখনো একইসংখ্যক যন্ত্র দিয়ে ওষুধ ছিটানো হচ্ছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা দক্ষিণ সিটির প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ফজলে শামসুল কবির প্রথম আলোকে বলেন, যাঁদের হাতে ওষুধ ছিটানোর স্প্রে মেশিন ছিল না, তাঁরা মশার লার্ভা খুঁজে বের করার কাজ করছেন। বিশেষ অভিযানে বলা হলেও ওষুধ ও যন্ত্র বাড়ানো হয়নি কেন, জানতে চাইলে তিনি বলেন, অনেক ওয়ার্ডে ওষুধ ও যন্ত্রপাতি বাড়ানো হয়েছে। ৪৯ নম্বর ওয়ার্ডে হয়তো অতিরিক্ত যন্ত্র ছিল না।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ৪৯ নং ওয়ার্ডে মশা নিধনে ওষুধ দেওয়া হচ্ছে। ঢাকা, ২৬ জুলাই
ছবি: খালেদ সরকার

দক্ষিণ সিটির মশকনিধন কার্যক্রমের সঙ্গে সম্পৃক্ত লোকজন প্রথম আলোকে বলছেন, যন্ত্রপাতির সংকটের কারণে প্রতিটি ওয়ার্ডে আগে যে যন্ত্র ছিল, তা দিয়েই কাজ হচ্ছে। কেবল সকাল ও বিকেলে আলাদা করে কাজ করা ব্যক্তিদের একত্রে করা ছাড়া আদতে কোনো কাজ হচ্ছে না।

ঢাকা দক্ষিণ সিটির তথ্য অনুযায়ী, ৪৯ নম্বর ওয়ার্ডে যে ১৩ জন মশকনিধন কর্মী কাজ করেন তাঁরা হলেন নবীর হোসেন, মো. সুজন, মো. আরশাদ, মো. জাকির, মো. রাশেদ, মো. মানিক, আবদুল মান্নান, মো. কামরুল, শামসুল হক, মো. সজীব, মো. মিন্টু, আবুল হোসেন ও সাবিনা ইয়াসমিন।

তাঁদের মধ্যে মশার প্রজননস্থলে সকালে ওষুধ ছিটানোর কাজ করেন নবীর হোসেন, আরশাদ, মানিক, আবুল হোসেন, সজীব, মো. মিন্টু ও সাবিনা ইয়াসমিন। তবে আজ মিন্টু ও সাবিনা ইয়াসমিনকে ওষুধ ছিটাতে দেখা যায়নি।

এ বিষয়ে ওয়ার্ডের সুপারভাইজার আশরাফুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, মিন্টু ও সাবিনা ইয়াসমিন অসুস্থ, তাই তাঁরা কিছু সময় ওষুধ ছিটিয়ে বাসায় চলে গেছেন।

যাঁদের হাতে ওষুধ ছিটানোর স্প্রে মেশিন ছিল না, তাঁরা মশার লার্ভা খুঁজে বের করার কাজ করছেন।
ফজলে শামসুল কবির, ঢাকা দক্ষিণ সিটির প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা  

বিশেষ চিরুনি অভিযান হওয়ার কারণে বিকেলে যে ছয়জন ওষুধ ছিটানোর কাজ করেন, তাঁদেরও সকালে কাজ করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল। তবে ওই ছয় কর্মীর মধ্যে একজনকে মাইক নিয়ে ঘুরতে আর বাকি পাঁচজনকে অন্য পাঁচজন মশকনিধন কর্মীর সঙ্গে থাকতে দেখা গেছে। তাঁদের মধ্যে দুজনকে সচেতনতামূলক লিফলেট হাতে নিয়ে ঘুরতে দেখা গেছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে তাঁদের তিনজন প্রথম আলোকে বলেন, মাঠে থাকতে বলা হলেও তাঁদের স্প্রে মেশিন দেওয়া হয়নি। তাই তাঁরা যাঁদের স্প্রে মেশিন আছে, তাঁদের সঙ্গ দিচ্ছেন, কোথাও লার্ভা আছে কি না, তা খুঁজে দেখছেন।

বাসিন্দাদের ক্ষোভ

মশকনিধন কর্মীদের কার্যক্রম সরেজমিনে দেখার সময় ধলপুরের কোল্ড স্টোরেজ গলি এলাকার শিউলি আক্তার ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানান। তিনি সুপারভাইজারের উদ্দেশে বলেন, ‘মশার অত্যাচারে এলাকা ছেড়েছি। এই এলাকায় ঘরে ঘরে ডেঙ্গু রোগী। তোমাদের ওষুধে কাজ হয় না। আর কাউন্সিলর এসি রুমে বসে থাকেন, মাঠে আসেন না।’ তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘মশার কারণে এলাকায় থাকি না। মাঝে মাঝে বাড়ি দেখার জন্য আসি। এই সংকটে জনগণের পাশে থাকা কাউন্সিলরের দায়িত্ব।’

এ বিষয়ে কথা বলতে ওয়ার্ডের কাউন্সিলর বাদল সরদারের মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করে হলেও তিনি ফোন ধরেননি।

ধলপুরের দুজন বাসিন্দা মশকনিধন কর্মীদের সামনেই এই প্রতিবেদককে বলেন, তাঁদের এলাকায় নিয়মিত মশার ওষুধ ছিটানো হয় না। সপ্তাহে এক দিন, মাঝেমধ্যে মাসে এক দিন মশকনিধন কর্মীদের তাঁরা দেখতে পান। সেখানেই এর জবাবে উপস্থিত দুজন মশকনিধন কর্মী বলেন, তাঁরা প্রতিটি এলাকায় সপ্তাহে অন্তত দুই দিন ওষুধ ছিটিয়ে দেন।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যমতে, চলতি বছর এ পর্যন্ত ২১৫ জন ডেঙ্গুতে মারা গেছেন। আর চলতি জুলাই মাসে মারা গেছেন ১৬৮ জন। আর ডেঙ্গু নিয়ে এ পর্যন্ত হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৪০ হাজার ৩৪১ জন। তাঁদের মধ্যে ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হন ২৩ হাজার ৬৭৬ জন।