মিরপুরের প্যারিস রোড মাঠ: ফাঁকা কোরবানির নির্ধারিত জায়গা
রাজধানীর মিরপুর-১১ নম্বর সেকশনের প্যারিস রোড মাঠ। ঢাকা উত্তর সিটি থেকে এ মাঠ কোরবানির পশু জবাইয়ের জন্য নির্ধারিত করা হয়েছিল। ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল, ওই মাঠে পাঁচ শতাধিক পশু কোরবানি দেওয়া হবে।
নির্ধারিত ওই স্থানে পশু কোরবানি দেওয়া প্রত্যেককে এক হাজার টাকা করে দেওয়ার ঘোষণাও দেওয়া হয়।
ঈদের দিন আজ সোমবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ওই মাঠে গিয়ে দেখা যায়, পুরো মাঠে শামিয়ানা টানিয়ে প্যান্ডেল করা হয়েছে। সিটি করপোরেশনের পানির গাড়িসহ অন্যান্য গাড়িও প্রস্তুত। আছেন ঢাকা উত্তর সিটির ৩ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর জহিরুল ইসলামসহ সিটি করপোরেশনের অন্য কর্মীরা। কিন্তু যে বিষয়টির জন্য এত প্রস্তুতি, সেই কোরবানির পশুই মাঠটিতে আছে মাত্র হাতে গোনা কয়েকটি।
সকাল সাড়ে ১০টার দিকে মাঠের ভেতর তিনটি গরু বেঁধে রাখতে দেখা গেছে। এ ছাড়া মাঠের বাইরে রাস্তায় আরও ৭টি গরু কোরবানি দিয়ে চামড়া ছাড়ানোর কাজ করতে দেখা যায়। এর বাইরে মাঠের ভেতর শামিয়ানার নিচে ৫টি গরুর মাংস কাটার কাজ চলছিল।
মাঠের আশপাশের এলাকায় অনেককেই রাস্তায় কোরবানি দিতে দেখা গেছে। ওই মাঠ থেকে প্রায় ৩৫০ মিটার দূরেই অ্যাভিনিউ-৫ এলাকায় কোরবানি দিচ্ছিলেন রাকিবুল হাসান। নির্ধারিত মাঠে কোরবানি না দেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, মাঠটি বালুতে ভরা। সেখানে কোরবানি দিয়ে মাংস কাটাকাটি করার মতো পরিস্থিতি নেই। তাই সেখানে না গিয়ে বাসার সামনেই কোরবানি দেওয়া হচ্ছে।
রাকিবুলের মতো স্থানীয় একাধিক বাসিন্দাদের মাঠের আশপাশের রাস্তাতেই কোরবানি দিতে দেখা গেছে।
নির্ধারিত স্থানে না যাওয়ার বিষয়ে বাসিন্দারা বলছেন, সেখানেই কোরবানি দেওয়ার পরিকল্পনা ছিল। কিন্তু মাঠে বালু রয়েছে। সিটি করপোরেশন থেকে বালুগুলো ত্রিপল বা অন্য কিছু দিয়ে ঢেকে দেওয়ার ব্যবস্থা করেনি। এ ছাড়া কোরবানির সময় যাঁরা পেশাদার কসাই, তাঁদের বাইরেও অনেক মৌসুমি কসাই দিয়ে কোরবানির পশু জবাই ও মাংস কাটাকাটি হয়। এমন কসাইদের দিয়ে ওই জায়গায় পশু কোরবানি দেওয়াটা ঝুঁকির। একটু অসাবধানতার কারণেই মাংসে বালু লাগতে পারে। এসব কারণেই বাসিন্দারা ওই মাঠে কোরবানি দেওয়ার থেকে নিরুৎসাহিত হচ্ছেন।
জানতে চাইলে বালুর বিষয়টি স্বীকার করেন স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর জহিরুল ইসলাম। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, বালুর বিষয়টি ভুল হয়ে গেছে। এ কারণেই অনেকে গরু মাঠে আনার পরেও ফিরিয়ে নিয়ে গেছেন। সামনের বছর থেকে বালু ত্রিপল দিয়ে ঢেকে দেওয়ার ব্যবস্থা করা হবে।
কাউন্সিলর আরও বলেন, এলাকার যাঁরা কোরবানি দেবেন, তাঁরা একই সময়ে কসাই পান না। তাই ধাপে ধাপে দুপুর থেকে বিকেল পর্যন্ত কোরবানি হবে। সন্ধ্যার মধ্যে মাঠটিতে তিন শতাধিক গরু কোরবানি হবে বলেও প্রত্যাশা করছেন বলে জানান কাউন্সিলর।
এদিকে আজকে ঢাকা উত্তর সিটির মেয়র আতিকুল ইসলামের দ্বিতীয় কর্মসূচিই ছিল প্যারিস রোড মাঠে পাঁচ শতাধিক পশুর কোরবানির কার্যক্রম। পূর্বঘোষিত সূচি অনুযায়ী মেয়রের তৃতীয় কর্মসূচি ছিল ওই মাঠ থেকেই কোরবানির বর্জ্য অপসারণ কার্যক্রমের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন।
পরিস্থিতির কারণে এ দুটো কর্মসূচিই বাতিল করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তারা। জায়গা বদলে বেলা পৌনে ১১টার দিকে গণমাধ্যমে একটি বার্তা পাঠিয়েছে ঢাকা উত্তর সিটির জনসংযোগ বিভাগ। এতে বলা হয়, কোরবানির বর্জ্য অপসারণ কার্যক্রমের উদ্বোধনের স্থান পরিবর্তন করা হয়েছে। বেলা দেড়টায় মেয়র আতিকুল ইসলাম মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামের এক নম্বর ফটকের বিপরীত পাশে এ কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন।