মহাখালী থেকে সরলেন শিক্ষার্থীরা, সাড়ে চার ঘণ্টার অবরোধে চরম ভোগান্তি
রাজধানীর সরকারি তিতুমীর কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরের দাবিতে মহাখালী এলাকায় শিক্ষার্থীদের সাড়ে চার ঘণ্টার অবরোধে চরম ভোগান্তিতে পড়েন সাধারণ মানুষ। ভুক্তভোগী এক ব্যক্তি ক্ষুব্ধ হয়ে বলেন, ‘দাবি যৌক্তিক হলে সরকারের কাছে গিয়ে তা পেশ করুক শিক্ষার্থীরা। রাস্তাঘাট বন্ধ করে মানুষকে জিম্মি করে কেন আন্দোলন করা হচ্ছে?’
আজ সোমবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে শিক্ষার্থীরা কলেজ ক্যাম্পাস থেকে মিছিল নিয়ে এসে মহাখালী রেলক্রসিং এলাকায় সড়ক ও রেলপথ অবরোধ করেন। বিকেল চারটা পর্যন্ত এ অবরোধ চলে।
বিকেল চারটার দিকে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা মিছিল নিয়ে কলেজ ক্যাম্পাসের দিকে চলে যান। এর আগে মাইকে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের একজন বলেন, তাঁদের কর্মসূচি বিকেল চারটা পর্যন্ত। তাঁদের একটি দল আলোচনায় গেছে। তারা ফিরে এলে সাংবাদিকদের ব্রিফ করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত জানানো হবে। তাঁরা চলে যাওয়ার পর যান চলাচল শুরু হয়।
সাড়ে চার ঘণ্টার অবরোধকালে মহাখালী থেকে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের দিকের সড়কের উভয় পাশে সব ধরনের যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। তৈরি হয় দীর্ঘ যানজট। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েন সাধারণ মানুষ।
ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানজটে আটকে থেকে কেউ কেউ পায়ে হেঁটে গন্তব্যের পথে রওনা হন। তাঁদের কারও কারও হাতে মালপত্রের ভারী বস্তা, ব্যাগ দেখা গেছে। কেউ কেউ আবার সঙ্গে থাকা বয়স্ক স্বজনদের ধরে ধরে কিংবা শিশুসন্তানকে কোলে নিয়ে হেঁটে যান।
অবরোধের কারণে সৃষ্ট ভোগান্তি নিয়ে অনেক সাধারণ মানুষকে ক্ষোভ প্রকাশ করতে দেখা যায়। তাঁদের ভাষ্য, দাবি যৌক্তিক হলে সরকারের কাছে গিয়ে তা পেশ করুক শিক্ষার্থীরা। রাস্তাঘাট বন্ধ করে, মানুষকে জিম্মি করে, পেরেশানি দিয়ে কেন আন্দোলন করা হচ্ছে?
আজ ভোরে নেত্রকোনার কেন্দুয়া উপজেলা থেকে ঢাকার ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্সেস ও হাসপাতালে স্ত্রী আয়েশা বেগমকে চিকিৎসক দেখাতে নিয়ে এসেছিলেন সাইদুর রহমান। স্বামী-স্ত্রী দুজনই বয়স্ক। সাইদুর রহমান স্থানীয় একটি মসজিদের ইমাম। বেলা সোয়া একটার দিকে তাঁরা মহাখালী উড়ালসড়কের নিচে ময়মনসিংহগামী বাসের অপেক্ষায় ছিলেন। দাঁড়িয়ে থাকতে না পেরে আয়েশা বেগম ফুটপাতে বসে পড়েন। প্রথম আলোর এই প্রতিবেদক জানতে চান, ‘কোথায় যাবেন?’ জবাবে সাইদুর রহমান জানান, যাবেন নেত্রকোনা। কিন্তু কোনো বাস পাচ্ছেন না। পরে সাইদুর রহমানের প্রশ্ন, ‘তাগো দাবি কী? রাস্তা আটকাইলো কেন?’
শিক্ষার্থীরা কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তর চান জানালে সাইদুর রহমান বলেন, ‘এর লাগি মাইনষেরে বিরক্ত কইরা, কষ্ট দিয়া, রাস্তা বন্ধ করা কি উচিত? দাবি নিয়া যাইব সরকারের কাছে। রাস্তায় কী? দাবি যৌক্তিক হলে সরকার মাইনা নিব। তাইলেই ঝামেলা শেষ। অযথা মানুষেরে পেরেশানি দিতাছে।’
সাইদুর বলেন, নিউরোসায়েন্সেস হাসপাতাল থেকে চিকিৎসক তাঁর স্ত্রীকে মহাখালীর জাতীয় নাক কান গলা ইনস্টিটিউটের একজন চিকিৎসকের কাছে পাঠিয়েছেন। কিন্তু মহাখালী আসার পর তাঁরা জানতে পারেন, ওই চিকিৎসককে আগামী বুধবারের আগে পাওয়া যাবে না। তাই তাঁরা বাড়ি ফিরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। কিন্তু দুপুর ১২টা থেকে এক ঘণ্টার বেশি সময় দাঁড়িয়ে থেকেও তাঁরা কোনো বাস পাননি। আবার সাইদুর এ–ও বুঝতে পারছেন না যে কত দূর হাঁটতে হবে। তাই বাসের জন্য অপেক্ষা করছেন।
ঢাকায় থাকার মতো স্বজন থাকলেও কাউকে বিরক্ত করতে চান না এই বয়স্ক দম্পতি। সাইদুর বলেন, ‘আত্মীয় তো আছে। কিন্তু কাকে বিরক্ত করব? সবাই তো নিজেদের মতো আছে। আমাদের জন্য তো কেউ প্রস্তুত না।’
পরে সাইদুর প্রথম আলোর প্রতিবেদকের কাছে জানতে চান, কত দূর হাঁটা লাগতে পারে? সেই পথটুকু হেঁটে যেতে পারবেন কি না, তা স্ত্রীর কাছে জানতে চেয়ে তাঁর সম্মতি নিয়ে বনানীর দিকে হাঁটা শুরু করেন তাঁরা।
আন্দোলনকারীরা মহাখালী রেলগেট এলাকার রেলপথের পাশাপাশি বিমানবন্দর সড়কের ঢাকা থেকে বেরিয়ে যাওয়ার অংশও অবরোধ করেছিলেন। মহাখালী থেকে বনানী যেতে বিআরটিএর প্রধান কার্যালয়-সংলগ্ন ইউটার্ন এলাকায়ও তাঁরা অবস্থান নিয়েছিলেন। এ ছাড়া মহাখালী থেকে গুলশান যাওয়ার সড়ক এবং মহাখালী উড়ালসড়ক হয়ে চেয়ারম্যানবাড়ি এলাকায় নামার অংশের সড়কও তাঁরা অবরোধ করেছিলেন।
এক বছর বয়সী মেয়ে তানিয়াকে কোলে নিয়ে হাঁটছিলেন মো. তাইজউদ্দীন। সঙ্গে স্ত্রী রাখি বেগম। এই দম্পতির সঙ্গে প্রথম আলোর এই প্রতিবেদকের কথা হয় মহাখালী উড়ালসড়কের নিচে। তাইজউদ্দীন বলেন, বনানী থেকে আসছিলেন। প্রথমে কী হয়েছে বুঝতে পারেননি। তাই বাসে এক ঘণ্টার মতো বসে ছিলেন। কিন্তু বাস এগোচ্ছিল না। পরে জানতে পারেন, সড়কে আন্দোলন চলছে, রাস্তা বন্ধ। তাই কাকলী থেকে হাঁটা শুরু করেছেন। রোদে মেয়েটির কষ্ট হচ্ছে বলে জানান তিনি।
শিক্ষার্থীদের অবরোধের কারণে দুপুর পৌনে ১২টার পর থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত কোনো ট্রেন ঢাকার কমলাপুর স্টেশন থেকে গন্তব্যে যেতে পারেনি। আবার বিমানবন্দর অংশ থেকেও কোনো ট্রেন কমলাপুরে যেতে পারেনি।
বেলা ১১টা ৪০ মিনিটের দিকে নোয়াখালী থেকে ছেড়ে আসা উপকূল এক্সপ্রেস ট্রেন অবরোধ উপেক্ষা করে দ্রুতগতিতে মহাখালী ক্রসিং অতিক্রম করে। এ সময় সেটি লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছোড়া হয়। এতে ট্রেনের জানালার কাচ ভাঙে।