ঢাকার গণপরিবহন
মেট্রোরেল খুলবে স্বস্তির দরজা
দেশের প্রথম মেট্রোরেল সেবার উদ্বোধন চলতি মাসের শেষ সপ্তাহে।উত্তরা থেকে আগারগাঁও যাতায়াত ২০ মিনিটে।
উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী।
প্রথম ট্রেন চালাবেন একজন নারী চালক।
সর্বনিম্ন ভাড়া ২০ টাকা। উত্তরা থেকে আগারগাঁও ৬০ টাকা।
দেশের প্রথম মেট্রোরেল চালু হচ্ছে এ মাসের শেষ সপ্তাহে। শুরুতে চলবে উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত। দু-এক দিনের মধ্যে উদ্বোধনের তারিখ দেবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তাঁর উপস্থিতিতেই মেট্রোরেল চলাচল শুরু হবে। মেট্রোরেল সেবার প্রথম ট্রেনটি চালাবেন একজন নারী চালক।
মেট্রোরেল লাইন নির্মাণ ও পরিচালনার দায়িত্বে থাকা ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল) সূত্র জানিয়েছে, প্রধানমন্ত্রীর কাছে ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে মেট্রোরেল উদ্বোধনের জন্য প্রস্তাবের সারসংক্ষেপ পাঠানো হয়েছে।
সরকারি সূত্রগুলো বলছে, সাধারণত প্রধানমন্ত্রী উপস্থিত থাকেন, এমন উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধন করা হয় শনিবার। চলতি মাসের শেষ দিকে দুটি শনিবার রয়েছে—২৪ ও ৩১ ডিসেম্বর। তবে ২৪ ডিসেম্বর আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলন। ফলে ওই দিন মেট্রোরেল উদ্বোধনের সম্ভাবনা কম। ২৫ ও ২৬ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রীর কর্মসূচি রয়েছে। ফলে ২৭ থেকে ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে যেকোনো দিন মেট্রোরেল উদ্বোধনের তারিখ নির্ধারিত হতে পারে।
মেট্রোরেলের পথে যাঁরা বসবাস করেন, তাঁদের যাত্রা আরামদায়ক, দ্রুতগতির ও নিরবচ্ছিন্ন হবে। যাত্রীরা নির্দিষ্ট সময়ে গন্তব্যে যেতে পারবেন। এখনকার গণপরিবহনে নির্দিষ্ট সময়ে পৌঁছানোর কোনো নিশ্চয়তা নেই।সামছুল হক, পরিবহনবিশেষজ্ঞ ও বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) পুরকৌশলের অধ্যাপক
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, মেট্রোরেল চালু হলে ঢাকার একটি গুরুত্বপূর্ণ রুটে গণপরিবহনে চলাচলে স্বস্তির দরজা খুলবে। মানুষ নির্দিষ্ট সময়ে গন্তব্যে যেতে পারবে। এখন যেমন লক্কড়ঝক্কড় বাসে ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানজটে পড়ে থাকতে হয়, অটোরিকশাচালকদের ভাড়ার নৈরাজ্য সহ্য করতে হয়, সেই ভোগান্তি থাকবে না।
পরিবহনবিশেষজ্ঞ ও বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) পুরকৌশলের অধ্যাপক সামছুল হক প্রথম আলোকে বলেন, মেট্রোরেলের পথে যাঁরা বসবাস করেন, তাঁদের যাত্রা আরামদায়ক, দ্রুতগতির ও নিরবচ্ছিন্ন হবে। যাত্রীরা নির্দিষ্ট সময়ে গন্তব্যে যেতে পারবেন। এখনকার গণপরিবহনে নির্দিষ্ট সময়ে পৌঁছানোর কোনো নিশ্চয়তা নেই।
২০১২ সালে প্রকল্প
মেট্রোরেল প্রকল্প নেওয়া হয় ২০১২ সালে। জাপানের উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা জাইকার সঙ্গে ঋণচুক্তি হয় পরের বছর। মূল কাজ শুরু হয় ২০১৭ সালে। এ প্রকল্পের আওতায় উত্তরা (দিয়াবাড়ি) থেকে মতিঝিল পর্যন্ত মেট্রোরেলের কাজ চলছে। এ মাসে উদ্বোধন করা হবে উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত অংশের।
পুরো মেট্রোরেল পথের দৈর্ঘ্য ২০ কিলোমিটারের কিছু বেশি। এর মধ্যে উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত পথের দৈর্ঘ্য ১১ দশমিক ৭৩ কিলোমিটার। এ পথে ৯টি স্টেশন রয়েছে। উত্তরা উত্তর (দিয়াবাড়ি), উত্তরা সেন্টার, উত্তরা দক্ষিণ, পল্লবী, মিরপুর ১১, মিরপুর-১০, কাজীপাড়া, শেওড়াপাড়া ও আগারগাঁও। আগারগাঁও থেকে মতিঝিল পর্যন্ত স্টেশন রয়েছে সাতটি—বিজয় সরণি, ফার্মগেট, কারওয়ান বাজার, শাহবাগ, টিএসসি, প্রেসক্লাব ও মতিঝিল। অবশ্য মেট্রোরেল কমলাপুর রেলস্টেশন পর্যন্ত ১ দশমিক ১৬ কিলোমিটার সম্প্রসারণ করা হবে। মতিঝিল পর্যন্ত মেট্রোরেল আগামী বছরের শেষ দিকে চালুর কথা রয়েছে। কমলাপুর পর্যন্ত চালু হতে ২০২৫ সাল লেগে যেতে পারে।
‘আগারগাঁও পর্যন্ত চালু হলে আমার বিশেষ কোনো লাভ হবে না। কারণ, আমার অফিস মতিঝিল। আমি সেই পর্যন্ত মেট্রোরেল চালুর অপেক্ষায় আছি।’সুমন রহমান, রাজধানীর শেওড়াপাড়ার বাসিন্দা
ডিএমটিসিএলের তথ্যমতে, মেট্রোরেল ছুটবে সর্বোচ্চ ১০০ কিলোমিটার গতিতে। শুরুর দিকে রাজধানীর উত্তরা উত্তর স্টেশন থেকে আগারগাঁও যেতে সময় লাগবে প্রায় ২০ মিনিট। পরে যাত্রার সময় ১৬ থেকে ১৭ মিনিটে নেমে আসবে।
বৈশ্বিক চর্চা মেনে উদ্বোধনের পর শুরুতে মেট্রোরেল চলবে কম যাত্রী নিয়ে। পর্যায়ক্রমে যাত্রীসংখ্যা বাড়ানো হবে। উদ্বোধনের পর দুই থেকে তিন মাসের মধ্যে পূর্ণ যাত্রী নিয়ে ট্রেন চলবে। প্রথম দিকে সকালে কিছুক্ষণ, আবার বিকেলে কিছুক্ষণ ট্রেন চলবে। অর্থাৎ ট্রেন চলাচলের সংখ্যা কম থাকবে। যাত্রীদের ওঠানামা ও আসনে বসা—এসব বিষয়ে অভ্যস্ত ও পরিচিত করাতে স্টেশনে ট্রেন কিছুটা বাড়তি সময় দাঁড়াবে। কিন্তু পরে ট্রেনের সংখ্যা বাড়বে এবং স্টেশনে দাঁড়ানোর সময় কমে যাবে। ডিএমটিসিএলের কর্মকর্তারা জানান, শুরুতে পাঁচটি ট্রেন চলাচল করবে।
ডিএমটিসিএল কর্মকর্তারা বলছেন, শুরুতে সব স্টেশনে থামবে না মেট্রোরেল। শুরুর স্টেশন উত্তরা উত্তর থেকে ছেড়ে ট্রেনটি পল্লবী গিয়ে থামবে। এরপর না থেমে আগারগাঁও চলে যাবে। মাঝের স্টেশনগুলোতে ট্রেন থামানোর কার্যক্রম শুরু হবে পরে।
মেট্রোরেল স্টেশনগুলোয় সংযোগকারী সড়কগুলোয় যানবাহনের চাপ বেড়ে যেতে পারে। সারা পৃথিবীতে এ ধরনের প্রকল্প নেওয়া হয় সমন্বিত চিন্তা মাথায় রেখে। বাংলাদেশে একটি প্রকল্প হিসেবে মেট্রোরেল নির্মিত হয়েছে, সমন্বিত পরিকল্পনা নেই।সামছুল হক, বুয়েটের অধ্যাপক
শেষ সময়ের প্রস্তুতি
মেট্রোরেল উদ্বোধন উপলক্ষে ডিএমটিসিএল কর্তৃপক্ষ শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি চালাচ্ছে। মিরপুর এলাকায় কিছু স্টেশনে সিঁড়ি ও চলন্ত সিঁড়ির (এস্কেলেটর) কিছু কাজ চলমান আছে। ট্রেনগুলো এখন যাত্রীবিহীন অবস্থায় পরীক্ষামূলক চলাচল করছে। জাপানি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ও পরামর্শকেরা ডিএমটিসিএলের নিয়োগ করা কর্মীদের সবকিছু বুঝিয়ে দিচ্ছেন।
বর্তমানে মেট্রোরেল পরিচালনায় ২৭৪ জন কর্মী নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ট্রেনচালক (অপারেটর) রয়েছেন ২৪ জন ও স্টেশন নিয়ন্ত্রক (স্টেশন কন্ট্রোলার) রয়েছেন ৫৮ জন। চালক ও স্টেশন নিয়ন্ত্রক উভয়ই ট্রেন চালাতে পারবেন। ট্রেনচালক ও স্টেশন অপারেটরের মধ্যে নারী আছেন চারজন। চালকদের মধ্যে একজনের নাম মরিয়ম আফিজা। তাঁকেই প্রথম মেট্রোরেল চালানোর দায়িত্বটি দেওয়া হতে পারে।
ডিএমটিসিএল সূত্র বলছে, ট্রেন পুরোদমে চালাতে হলে আরও জনবল লাগবে। ৪০০ জনকে নিয়োগের একটি প্রক্রিয়া চলছে। এ ছাড়া মেট্রোরেল প্রকল্পে পরিচালনার জন্য বাজেট রাখা হয়নি। আগামী এক বছর এ কাজের জন্য সরকারের কাছে এক হাজার কোটি টাকা চেয়েছে ডিএমটিসিএল। টিকিট থেকে আয় করার পর তা ফেরত দেওয়া হবে।
ডিএমটিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম এ এন সিদ্দিক প্রথম আলোকে বলেন, তাঁরা শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি সারছেন। প্রধানমন্ত্রীর সময় পেলেই টিকিট বিক্রি শুরু করবেন। ট্রেন চালানোর বিষয়ে তিনি বলেন, প্রথম ট্রেনটি নারী চালকেরাই চালাবেন। তবে কে চালাবেন, সেটা এখনো ঠিক হয়নি।
মেট্রোরেলে চলাচল
মেট্রোরেলের স্টেশনে লিফট, এস্কেলেটর ও সিঁড়ি দিয়ে ওঠা যাবে। তিনতলা স্টেশন ভবনের দ্বিতীয় তলায় টিকিট কাটার ব্যবস্থা, অফিস ও নানা সরঞ্জাম থাকবে, যাকে বলা হচ্ছে কনকোর্স হল। তিনতলায় থাকবে রেললাইন ও প্ল্যাটফর্ম। শুধু টিকিটধারী ব্যক্তিরাই ওই তলায় যেতে পারবেন। দুর্ঘটনা এড়াতে রেললাইনের পাশে বেড়া থাকবে। স্টেশনে ট্রেন থামার পর বেড়া ও ট্রেনের দরজা একসঙ্গে খুলে যাবে। আবার নির্দিষ্ট সময় পর তা স্বয়ংক্রিয়ভাবে বন্ধ হবে।
মেট্রোরেলের প্রতিটি ট্রেনে ছয়টি কোচ রয়েছে। এর মধ্যে দুই প্রান্তের দুটি কোচকে বলা হচ্ছে ট্রেইলর কার। এতে চালক থাকবেন। এসব কোচে ৪৮ জন করে যাত্রী বসতে পারবেন। মাঝখানের চারটি কোচ হচ্ছে মোটরকার। এতে বসার ব্যবস্থা আছে ৫৪ জনের।
সব মিলিয়ে একটি ট্রেনে বসে যেতে পারবেন ৩০৬ জন। প্রতিটি কোচ সাড়ে ৯ ফুট চওড়া। মাঝখানের প্রশস্ত জায়গায় যাত্রীরা দাঁড়িয়ে ভ্রমণ করবেন। পুরোদমে চালুর পর মেট্রোরেল ঘণ্টায় ৬০ হাজার যাত্রী পরিবহন করবে বলে প্রকল্পে উল্লেখ করা হয়েছে।
ভাড়া কত
সরকার মেট্রোরেলের সর্বনিম্ন ভাড়া ঠিক করেছে ২০ টাকা। আর উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত ভাড়া হবে ১০০ টাকা। প্রথম পর্যায়ে মেট্রোরেল যে অংশে চলাচল শুরু করবে, সেই উত্তরা উত্তর স্টেশন থেকে আগারগাঁও স্টেশনের ভাড়া হবে ৬০ টাকা।
উত্তরা উত্তর স্টেশন থেকে উত্তরা সেন্টার (মধ্য) ও উত্তরা দক্ষিণ স্টেশনের ভাড়া একই—২০ টাকা। এ ছাড়া প্রথম স্টেশন (উত্তরা উত্তর) থেকে পল্লবী ও মিরপুর-১১ স্টেশনের ভাড়া ৩০ টাকা, মিরপুর-১০ ও কাজীপাড়া স্টেশনের ভাড়া ৪০ টাকা এবং শেওড়াপাড়া স্টেশনের ভাড়া ৫০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।
বর্তমানে ঢাকার বাস-মিনিবাসে সর্বনিম্ন ভাড়া ১০ টাকা। যাঁরা এখন সর্বনিম্ন এই ভাড়া দিয়ে ২ থেকে ৩ কিলোমিটার দূরে নেমে যান, তাঁদের জন্য মেট্রোরেলের ভাড়া কিছুটা বেশিই মনে হবে। আবার যাঁরা রিকশা, সিএনজিচালিত অটোরিকশা বা রাইড শেয়ারিংয়ে চলেন, তাঁদের জন্য মেট্রোরেলের ভাড়া সাশ্রয়ী হবে।
কারণ, ঢাকায় এখন সিএনজিচালিত অটোরিকশায় স্বল্পদূরত্বেও ১৫০ টাকার আশপাশে ভাড়া দিতে হয়। যাত্রীর ইচ্ছামতো গন্তব্যে অটোরিকশাচালক যেতে রাজি হন না। অন্যদিকে ঢাকায় রিকশার ভাড়া এখন কমপক্ষে ২০ টাকা। এর বিপরীতে মেট্রোরেল শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত (এসি) হবে। ফলে যাতায়াত আরামদায়ক হবে।
স্মার্ট কার্ডে ভাড়া পরিশোধ করলে ১০ শতাংশ ছাড় দেওয়ার বিষয়ে ব্যবস্থা নেবে ডিএমটিসিএল। কোম্পানি সূত্র জানিয়েছে, সাপ্তাহিক, মাসিক, পারিবারিক কার্ড আগে থেকে কিনতে হবে। মেট্রোরেলের প্রতিটি স্টেশনে থাকা যন্ত্রেও কার্ডে টাকা ভরা (রিচার্জ) যাবে। প্ল্যাটফর্মে প্রবেশের সময় যাত্রীদের কার্ড পাঞ্চ করতে হবে, তা না হলে দরজা খুলবে না। এরপর নেমে যাওয়ার সময় আবার কার্ড পাঞ্চ করতে হবে, তা না হলে যাত্রী বের হতে পারবেন না।
আরেকটি কার্ড সাময়িক, যা প্রতি যাত্রায় দেওয়া হবে। স্টেশন থেকে নির্দিষ্ট গন্তব্যের ভাড়া দিয়ে এ কার্ড সংগ্রহ করতে হবে। এটিও স্মার্ট কার্ডের মতো। ভাড়ার অতিরিক্ত যাতায়াত করলে ওই কার্ড দিয়ে দরজা খুলতে পারবেন না। সে ক্ষেত্রে দায়িত্বে থাকা কর্মীদের কাছে বাড়তি ভাড়া পরিশোধ করেই বের হতে হবে।
স্টেশনে টিকিট বিক্রির দুটি কাউন্টার থাকবে। এর একটিতে সাধারণ মানুষ টিকিট কিনতে পারবেন। অন্যটিতে কেনার সুযোগ পাবেন শারীরিক ও দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা।
রাজধানীর শেওড়াপাড়ার বাসিন্দা সুমন রহমান প্রথম আলোকে বলেন, মেট্রোরেলের কাজ প্রায় শেষ হওয়ায় তাঁদের ভোগান্তি কমেছে। এটি চালুর জন্য তিনি অপেক্ষা করছেন। তিনি বলেন, ‘আগারগাঁও পর্যন্ত চালু হলে আমার বিশেষ কোনো লাভ হবে না। কারণ, আমার অফিস মতিঝিল। আমি সেই পর্যন্ত মেট্রোরেল চালুর অপেক্ষায় আছি।’
স্টেশন প্লাজা
মেট্রোরেলের চারটি স্টেশনে যাত্রীরা চাইলে নিজের গাড়ি একেবারে স্টেশনের সিঁড়ি বা লিফটের কাছাকাছি নিয়ে আসতে পারবেন। এ ছাড়া বাস, ট্যাক্সি, অটোরিকশা—এসব গণপরিবহনে আসা যাত্রীরাও দূরে নয়, স্টেশনের কাছে এসে নামতে পারবেন। এ জন্য চারটি স্টেশনের চত্বরে পর্যাপ্ত জায়গা রাখা হবে। এ ব্যবস্থাকে বলা হচ্ছে স্টেশন প্লাজা। এসব স্থানে হালকা নাশতা করারও (স্ন্যাকস) ব্যবস্থা থাকবে। উত্তরা (উত্তর), আগারগাঁও, ফার্মগেট ও কমলাপুর—চারটি স্টেশনে প্লাজা নির্মাণ করা হবে।
শুরুর দিকে মেট্রোরেল প্রকল্পের ব্যয় ছিল প্রায় ২২ হাজার কোটি টাকা। পথ সম্প্রসারণ, স্টেশন প্লাজা নির্মাণ, কিছু স্টেশনে নতুন করে জমি অধিগ্রহণ, পরামর্শকের পেছনে ব্যয় বৃদ্ধি, পণ্যের মূল্যবৃদ্ধি, বাড়তি ভ্যাটসহ (মূল্য সংযোজন কর) বিভিন্ন কারণে ব্যয় প্রায় সাড়ে ১১ হাজার কোটি টাকা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩৩ হাজার ৪৭২ কোটি টাকায়। এর মধ্যে জাইকা ১৯ হাজার ৭১৯ কোটি টাকা দিচ্ছে। সরকার খরচ করছে ১৩ হাজার ৭৫৩ কোটি টাকা।
সর্বশেষ নভেম্বর পর্যন্ত প্রকল্পের কাজের অগ্রগতি ৮৪ শতাংশের কিছু বেশি। উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত অংশের অগ্রগতি ৯৫ শতাংশ।
বুয়েটের অধ্যাপক সামছুল হক প্রথম আলোকে বলেন, মেট্রোরেল স্টেশনগুলোয় সংযোগকারী সড়কগুলোয় যানবাহনের চাপ বেড়ে যেতে পারে। সারা পৃথিবীতে এ ধরনের প্রকল্প নেওয়া হয় সমন্বিত চিন্তা মাথায় রেখে। বাংলাদেশে একটি প্রকল্প হিসেবে মেট্রোরেল নির্মিত হয়েছে, সমন্বিত পরিকল্পনা নেই।