সিদ্দিকবাজারে বিস্ফোরণে: যাঁর ওপর সবাই নির্ভরশীল, তিনিই লাইফ সাপোর্টে

শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউট
ফাইল ছবি

শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন মৃধা আজমের শরীরের ৮০ ভাগ পুড়ে গেছে। তাঁর শ্বাসনালিও পুড়েছে। অবস্থার অবনতি হওয়ায় গতকাল বৃহস্পতিবার তাঁকে লাইফ সাপোর্টে নেওয়া হয়।

সিদ্দিকবাজারে বিস্ফোরণ ঘটা ভবনে বাংলাদেশ স্যানিটারি দোকানের কর্মী আজম। পাঁচ ভাই-বোনের মধ্যে সবার বড় তিনি। পরিবারে স্ত্রী, পাঁচ বছরের এক মেয়ে, মা, বাবা ও পড়াশোনা করা তিন ভাই-বোনের সবাই তাঁর আয়ের ওপর নির্ভরশীল। পরিবারের সবাইকে নিয়ে তিনি থাকেন রাজধানীর মধুবাগে। তাঁদের গ্রামের বাড়ি পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলায়।

আজ শুক্রবার দুপুরে বার্ন ইনস্টিটিউটে আজমের বাবা মো. শাজাহান মৃধাসহ পরিবারের কয়েকজনের সঙ্গে কথা হয়। তাঁরা জানান, আজমের আয়ে সংসার চলত। সামনের দিনগুলোয় তাঁদের ভাগ্যে কী অপেক্ষা করছে, তা কেউ জানেন না।

নয়াটোলা বাজারে শাজাহান মৃধার একটি চায়ের দোকান আছে। তবে তিনি অসুস্থ। শাজাহান প্রথম আলোকে বলেন, ছেলের শরীরের ৮০ ভাগ পুড়েছে। চিকিৎসক কিছু বলছেন না। এখন সব আল্লাহর হাতে।

মঙ্গলবার সিদ্দিকবাজারের বিস্ফোরণের পর বার্ন ইনস্টিটিউটে ১২ জন ভর্তি হন। তাঁদের মধ্যে মো. মোস্তফা (৫০) ও কামাল শেখ (৪০) নামের দুজন চিকিৎসা নিয়ে চলে যান। গত বুধবার রাতে মো. মুসা (৪৫) নামের একজন মারা যান। লাইফ সাপোর্টে থাকা ইয়াসিন আলী (২৬) নামের আরও একজনের মৃত্যু হয় বৃহস্পতিবার রাতে। শুক্রবার রাত পর্যন্ত বার্ন ইনস্টিটিউটে আইসিইউতে থাকা তিনজনের মধ্যে দুজন লাইফ সাপোর্টে রয়েছেন।

বাকি পাঁচজনের শরীরের পাশাপাশি কারও কারও শ্বাসনালিও পুড়েছে। শরীরের বিভিন্ন অংশে আঘাত রয়েছে। গ্লাসসহ ছিটকে আসা বিভিন্ন পদার্থে শরীরও কেটেছে।  

শুক্রবার দুপুরে বার্ন ইনস্টিটিউটের সমন্বয়ক অধ্যাপক সামন্ত লাল সেন প্রথম আলোকে জানান, এখানে ভর্তি হওয়া সবার অবস্থা খারাপ। কারও অবস্থার উন্নতি হয়নি।

বেড়াতে এসে তাঁরা এখন হাসপাতালে

পটুয়াখালী সদর থেকে ঢাকার বাড্ডায় আত্মীয়ের বাড়িতে বেড়াতে এসেছিলেন রোকেয়া বেগম (৫০), তাঁর মেয়ে খুশি আক্তার ও খুশির স্বামী রিয়াজ। বেড়ানো শেষে মঙ্গলবার বাড়ি ফিরে যাচ্ছিলেন তাঁরা। বিকেল সাড়ে ৫টায় দিকে তাঁদের লঞ্চ। বাসে করে তাঁরা বাড্ডা থেকে গুলিস্তানে আসেন। গুলিস্তান থেকে তাঁরা হেঁটে যাচ্ছিলেন। পাঁচ-ছয় মিনিট হাঁটার পর বিস্ফোরণের শিকার হন তাঁরা।

এই তিনজনের মধ্যে সবচেয়ে গুরুতর রোকেয়া বেগম ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে ভর্তি। তাঁর মাথা ফেটে গেছে। কানের পর্দা ছিঁড়ে গেছে। শয্যাশায়ী রোকেয়া মৃদু স্বরে শুক্রবার প্রথম আলোকে বললেন, ‘হাঁটতে হাঁটতে হঠাৎ উইড়া পইড়া গেলাম। চোখে আর কিছু দেখি না। আমি ডাহি, আমারে ওডাও ওডাও। কেউরে দেহি না। কর্থন (কিছুক্ষণ) পরে জামাই চিল্লাই উডাইছে। মাগো মাগো কইয়া জামাই সাইডে বহাইছে। মাইয়্যারও রক্ত পড়ে, আমারও পড়ে।’

তুলনামূলক কম আঘাত পেলেও শাশুড়ি ও স্ত্রীর রক্ত ঝরা দেখে হতবিহ্বল হয়ে পড়েন রিয়াজ। একপর্যায়ে স্ত্রী ও শাশুড়িকে নিয়ে ঢামেক হাসপাতালে আসেন তিনি। খুশির কানের কাছে ১২টি সেলাই দেওয়া হয়েছে।

রাস্তার যে পাশে বিস্ফোরণ হয়, তার বিপরীত পাশে ছিলেন তাঁরা। রিয়াজ বলেন, ‘রিকশায় করে যখন স্ত্রী-শাশুড়িকে আনছিলাম, তখন লোকজন বলছিল তারা বাঁচবে না।’

সিদ্দিকবাজারের বিস্ফোরণে সব মিলিয়ে ১৭৩ জন হতাহত হয়ে ঢামেক হাসপাতালে এলেও তাঁদের মধ্যে ২০ জনকে ভর্তি করা হয়। ঢামেকের ভর্তি তালিকায় রোকেয়ার নাম থাকলেও খুশির নেই। খুশির স্বামী রিয়াজ হালকা আঘাত পাওয়ায় হাসপাতালে ভর্তি হননি। এই বিস্ফোরণে এখন পর্যন্ত ২৩ জনের মৃত্যু হয়েছে।