সোনার দোকানের কর্মচারী ছিলেন ইদ্রিস শেখ। দীর্ঘদিন এ কর্মচারীর কাজ করেছেন তিনি। সাত মাস আগে অনেক কষ্টে মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেটে সাগর জুয়েলার্স নামে নিজেই একটি দোকান দেন তিনি। আজ বৃহস্পতিবার এ মার্কেটে আগুন লেগে তাঁর দোকান পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। দোকানটি একটু ভেতরে হওয়ায় কিছুই বের করতে পারেননি তিনি।
মার্কেটের সামনে কাঁদতে কাঁদতে ইদ্রিস শেখ বলেন, ‘দোকানে প্রায় দেড় কোটি টাকার সোনা ছিল। এটাই আমার জীবনের শেষ সম্বল। সারা জীবনের সঞ্চয় সব পুড়ে ছাই, কিছুই রইল না আর। জীবনটা শেষ হয়ে গেল। সরকার ক্ষতিপূরণ না দিলে আর দাঁড়াতে পারব না।’
গতকাল বুধবার দিবাগত রাত সাড়ে তিনটার পর মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেটে আগুন লাগে। আগুন নিয়ন্ত্রণে ফায়ার সার্ভিসের ১৭টি ইউনিট কাজ করে। তাদের সঙ্গে যোগ দেয় সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনীর বিশেষ দল। পরে আজ সকাল ৯টা ২৫ মিনিটে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে।
এই মার্কেটের আরেকজন সোনা ব্যবসায়ী নজরুল ইসলাম। তাঁর দোকানের নাম বিসমিল্লাহ জুয়েলার্স। আগুন লাগার পর মার্কেটের সামনে এসে স্ত্রীসহ কান্নাকাটি করছিলেন তিনি। তিনি বলেন, মার্কেটের পাশেই তাঁর বাসা। ভোরে হঠাৎ চিৎকার শুনে তাঁদের ঘুম ভেঙে যায়। দৌড়ে এসে দেখেন মার্কেটে দাউ দাউ করে আগুন জ্বলছে। এ কারণে আর ভেতরে ঢুকতে পারেননি। তাঁর দোকানে ৬০ লাখ টাকার সোনা ছিল। সব পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। এখন কীভাবে বাঁচবেন, এই চিন্তায় পড়েছেন তিনি।
এদিকে আজ সকাল পৌনে ১০টার দিকে মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেটের সামনে তাৎক্ষণিক এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের পরিচালক (অপারেশন অ্যান্ড মেইনটেন্যান্স) লে. কর্নেল তাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, আজ রাত ৩টা ৪৩ মিনিটে ফায়ার সার্ভিস আগুন লাগার খবর পায়। ৩টা ৫২ মিনিটে মোহাম্মদপুর থেকে প্রথমে একটি ইউনিট আগুন নেভাতে অংশ নেয়। আগুনের তীব্রতা বাড়তে থাকলে একে একে ১৭টি ইউনিট এ কাজে যুক্ত হয়। পানি ছিটিয়ে সকাল ৯টা ২৫ মিনিটে মার্কেটের আগুন পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসা হয়। ফায়ার সার্ভিস এখন ভেতরের ক্ষতিগ্রস্ত মালামাল সরানোর কাজ করছে।
তাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেছেন, আগুন নেভাতে ফায়ার সার্ভিসের ১৫০ জন কর্মী অংশ নিয়েছেন। তাঁদের সহযোগিতা করেছে সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনী এবং ঢাকা ওয়াসা। মার্কেটের একটি মুদিদোকান থেকে এই আগুনের সূত্রপাত। কীভাবে আগুন লেগেছে, তা তদন্ত শেষে বলা যাবে। তবে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, বৈদ্যুতিক শর্টসার্কিট বা মশার কয়েল থেকে এই আগুন লাগতে পারে। এ ঘটনায় কেউ নিহত হয়নি, তবে আগুন নেভাতে গিয়ে ফায়ার সার্ভিসের কয়েকজন কর্মী সামান্য আহত হয়েছেন। মার্কেটের সামনে অনেক ভাসমান দোকান ও উৎসুক জনতার কারণে আগুন নেভাতে বেগ পেতে হয়েছে।
তাজুল ইসলাম চৌধুরী আরও বলেছেন, মার্কেটে প্রায় ১০০টি দোকান ছিল। এসব দোকানের ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ তদন্ত করে বলা যাবে। মার্কেটটি পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়েছে।
তবে ব্যবসায়ীরা বলছেন, মার্কেটে অন্তত ৫০০ দোকান ছিল। মার্কেটে মুদি, স্টেশনারি, কনফেকশনারি, জুয়েলার্স, প্লাস্টিকের সামগ্রী, চাল, মসলা, ক্রোকারিজ, কাপড় ও জুতার দোকান ছিল। প্লাস্টিকের দোকানে আগুন লাগায় তা দ্রুত চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে। এ কারণে তাঁরা কেউ ভেতরে ঢুকতে পারেননি।
ব্যবসায়ীরা আরও বলেছেন, মার্কেটের পূর্বপ্রান্তে কাঁচাবাজার, মুরগির বাজার ও মাংসপট্টিতে আগুন ছড়ায়নি।