‘গরমে ঘণ্টার পর ঘণ্টা লোডশেডিং, তাই আইপিএস কিনলাম’
হাসান আলী পেশায় একজন ব্যবসায়ী। আজ বুধবার দুপুর ১২টার দিকে রাজধানীর গুলিস্তানের কাপ্তানবাজার কমপ্লেক্স ভবনের রান অ্যাসোসিয়েটস নামের দোকানের সামনে আসেন তিনি। তখন এখানকার দোকানগুলোয় বিদ্যুৎ ছিল না।
হাসান আলী ওই দোকানের বিক্রয় প্রতিনিধিকে বলেন, ‘ভাই, লুমিনাস কোম্পানির আইপিএস আছে?’ জবাবে বিক্রেতা রাকিব হাসান বলেন, ‘বড় ভাই, লুমিনাস কোম্পানির আইপিএস আমার দোকানে নেই। সব বিক্রি হয়ে গেছে। তবে মাইক্রো টেক কোম্পানির আইপিএস আছে।’
আমাদের এলাকায় তো কারেন্ট থাকে না। দুই ঘণ্টা কারেন্ট থাকে তো তিন ঘণ্টা থাকে নাহামিদুর রহমান, আইপিএস কিনতে ঢাকায় আসা জামালপুরের ব্যবসায়ী।
হাসান আলী এবার বললেন, ‘ছোট ভাই, লোডশেডিং শুরু হয়ে গেছে। এক ঘণ্টার লোডশেডিং কোথায় গিয়ে ঠেকে কেই-বা তা জানে? আমার বাসায় চলবে চারটি ফ্যান, দুটি লাইট।’
হাসানের মুখের কথা কেড়ে নিয়ে রাকিব বললেন, ‘বড় ভাই, মাইক্রো টেকের আইপিএস ভালো সার্ভিস দেয়। দাম পড়বে ১২ হাজার টাকা। এর কমে কিন্তু হবে না।’
হাসিমুখে হাসান আলী রাকিবকে বললেন, ‘ছোট ভাই, ১০ হাজার টাকায় আইপিএসটা দেওয়া যায় না?’
রাকিব বললেন, ‘কমে হবে না। আইপিএস যা ছিল, তা সব বিক্রি হয়ে গেছে। সকাল থেকে একের পর এক কাস্টমার আসছে। যে দাম বলেছি, সেই দামে নিলে নেন, না নিলে কিছুই করার নেই।’
নিরুপায় হাসান আলী বললেন, ‘ঠিক আছে ছোট ভাই। আইপিএসটা ঠিক আছে কি না, তা দেখে দেন।’
১২ হাজার টাকায় আইপিএস কেনার পর হাসান আলী প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি আগে আইপিএস ব্যবহার করতাম। তবে দুই থেকে তিন বছর বাসায় আইপিএস ব্যবহারের প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়নি। তখন তো লোডশেডিং বলতে কিছু ছিল না। এখন লোডশেডিং শুরু হয়ে গেছে। কিছুদিন পর তো লোডশেডিং আরও বাড়বে। এই গরমে ঘণ্টার পর ঘণ্টা লোডশেডিং। এ জন্য আইপিএস কিনে নিয়ে গেলাম।’
নবাবপুরে আইপিএস ও চার্জার ফ্যান কিনতে আসা অন্তত ১০ জন ক্রেতা বলেছেন, লোডশেডিং শুরু হওয়ার পর থেকে আইপিএস, চার্জার ফ্যান, চার্জার লাইটের দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন অসাধু ব্যবসায়ীরা।
পরিকল্পিত লোডশেডিংয়ের সরকারি ঘোষণা আসার পর হাসান আলীর মতো আরও অনেককে আইপিএস, চার্জার ফ্যান, চার্জার লাইট, জেনারেটর কেনার জন্য রাজধানীর পুরান ঢাকার নবাবপুর মার্কেটে ছুটতে দেখা গেছে।
হঠাৎ করে এসব পণ্যের চাহিদা বেড়ে যাওয়া নিয়ে বিক্রেতারা বলেছেন, লোডশেডিং শুরু হওয়ার পর থেকে এসব পণ্যের চাহিদা বেড়ে গেছে অনেক গুণ। ঢাকার বাইরে থেকে দোকানিরাও এখানকার পাইকারি দোকানে আসছেন। কিন্তু সবাইকে পণ্য দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।
তবে নবাবপুরে আইপিএস ও চার্জার ফ্যান কিনতে আসা অন্তত ১০ জন ক্রেতা বলেছেন, লোডশেডিং শুরু হওয়ার পর থেকে আইপিএস, চার্জার ফ্যান, চার্জার লাইটের দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন অসাধু ব্যবসায়ীরা। যে আইপিএসের দাম ছিল ৮ হাজার টাকা, তা বিক্রি করছেন ১০ থেকে ১২ হাজার টাকায়। যে চার্জার ফ্যানের দাম ছিল আড়াই হাজার টাকা, তা এখন বিক্রি করা হচ্ছে ৩ হাজার ২০০ থেকে সাড়ে ৩ হাজার টাকায়। যে চার্জার লাইটের দাম ছিল ৭০০ টাকা, তা এখন ১ হাজার থেকে ১ হাজার ২০০ টাকা। নবাবপুর পাইকারি দোকানগুলোয় সরকারি নজরদারি বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছেন সাধারণ ক্রেতা হাসিবুল হাসান।
ক্রেতারা এখন নবাবপুরমুখী
আইপিএস, চার্জার ফ্যান, লাইট, জেনারেটরসহ ইলেকট্রনিক পণ্যের পাইকারি বাজারের জন্য বিখ্যাত নবাবপুর মার্কেট। রাজধানীর অন্যান্য এলাকার দোকান থেকে তুলনামূলকভাবে কিছুটা কম দামে এখান থেকে পণ্য কেনা যায় বলে মনে করেন ক্রেতারা। তাই রাজধানীর বাইরে থেকেও খুচরা ব্যবসায়ীরা এসব পণ্য সংগ্রহে এখানে ভিড় করেন। লোডশেডিং শুরু হওয়ার পর থেকে ঢাকার বাইরের ব্যবসায়ীরা আইপিএস, চার্জার ফ্যান, জেনারেটর, চার্জার লাইট কিনতে নবাবপুরে ভিড় করছেন বেশি।
জামালপুর থেকে আইপিএস কিনতে ব্যবসায়ী হামিদুর রহমান গতকাল মঙ্গলবার রাতে ঢাকায় এসে নবাবপুরের একটি হোটেলে ওঠেন। আজ নবাবপুরের দোকানগুলোয় আইপিএসের দোকান ঘুরে ঘুরে বাজার যাচাই করেন। লোডশেডিংয়ের কারণে আইপিএস ও ব্যাটারিরও সংকট শুরু হবে, সেটি তাঁর ধারণায় ছিল না। সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত ঘুরেও তিনি আইপিএস সংগ্রহ করতে পারেননি।
হামিদুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের এলাকায় তো কারেন্ট থাকে না। দুই ঘণ্টা কারেন্ট থাকে তো তিন ঘণ্টা থাকে না। আগে আমার দোকানে আইপিএসের কাস্টমার (ক্রেতা) ছিল ১০ জন, এখন লোডশেডিংয়ে কাস্টমার বেড়ে গিয়ে দাঁড়িয়েছে ২০ জনে। আমি যে দোকান থেকে নিয়মিত আইপিএস নিতাম, তারা আমাকে আইপিএস দিতে পারছে না। বাজারে আইপিএসের সংকট। দামও বেড়েছে।’