শিশুদের প্রয়োজন বিবেচনায় নিয়ে ড্যাপ বাস্তবায়নের পরামর্শ

ইনস্টিটিউট ফর প্ল্যানিং অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট ও সেভ দ্য চিলড্রেন নগর সংলাপের আয়োজন করে। সিরডাপ মিলনায়তন, ঢাকা, ২৫ অক্টোবর
ছবি: আশরাফুল আলম

হাঁটা দূরত্বে স্কুল, খেলার মাঠ ও দূষণমুক্ত পরিবেশ চায় শিশুরা। শিশুদের এসব চাহিদা বিবেচনায় নিয়ে ঢাকা মহানগরের বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনার (ড্যাপ) প্রস্তাবগুলো বাস্তবায়নের পক্ষে মত দিয়েছেন বিশিষ্টজনেরা। তবে এ জন্য সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থার কার্যকর উদ্যোগ, সঠিক প্রকল্প গ্রহণ ও প্রয়োজনীয় অর্থায়ন প্রয়োজন বলে জানিয়েছেন তাঁরা।

মঙ্গলবার রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে ‘অন্তর্ভুক্তিমূলক ও শিশুবান্ধব ঢাকা: বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনা প্রেক্ষিত’ সংলাপে আলোচকেরা এসব কথা বলেন। ইনস্টিটিউট ফর প্ল্যানিং অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (আইপিডি) ও সেভ দ্য চিলড্রেন আয়োজিত এই সংলাপের আয়োজন করে। আইপিডির নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক আদিল মুহাম্মদ খান বলেন, ‘শিশুদের ভাবনার জগৎ অনেক বিস্তৃত। আমরা বড়রা যা চাই, অনেক ক্ষেত্রে শিশুরাও তাই চায়। তাঁরা দূষণমুক্ত পরিবেশ চায়, হেঁটে স্কুলে যাওয়ার পথে ময়লা-আবর্জনা দেখতে চায় না। কিন্তু আমাদের পরিকল্পনা সেভাবে হয়নি।’ তিনি বলেন, যে এলাকা ইতিমধ্যেই গড়ে উঠেছে, সেই এলাকায় নতুন নতুন স্কুলের সুযোগ তৈরি করতে হবে। পাশাপাশি যে এলাকা নতুনভাবে গড়ে উঠছে, সেখানে যেন স্কুলে প্রাধান্য দিয়ে নগর-পরিকল্পনা করা হয়।

অধ্যাপক আদিল মুহাম্মদ খান বলেন, এটা অত্যন্ত আশাব্যঞ্জক যে এবারের বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনা প্রণয়নের বিভিন্ন পর্যায়ে শিশুদের সম্পৃক্ত করে তাদের মতামত অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। একইভাবে শিশুদের জন্য অন্তর্ভুক্তিমূলক ও বাসযোগ্য ঢাকা শহর গড়তে আইনি কাঠামো তৈরি এবং পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নের কর্মকৌশল নির্ধারণ করা দরকার। পাশাপাশি শিশুদের অধিকার সম্পর্কে শিশুদের সচেতন করা প্রয়োজন বলে তিনি মত দেন।

সংলাপে আইপিডির উপদেষ্টা ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আকতার মাহমুদ বলেন, ঢাকা শহরের প্রতিটি ওয়ার্ড কাউন্সিলর যদি তাঁর মেয়াদকালে অন্তত একটি খেলার মাঠ বা পার্ক করার উদ্যোগ নিতে পারেন, তাহলেও ঢাকার উল্লেখযোগ্য উন্নতি সম্ভব। একই সঙ্গে উন্মুক্ত স্থান ও গণপরিসরের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা ও ব্যবহারের ‘ব্যাকরণ’ শেখার ব্যাপারে আন্তরিক হওয়া প্রয়োজন।

অনুষ্ঠানে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) নগর–পরিকল্পনাবিদ ও বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনার (ড্যাপ) প্রকল্প পরিচালক আশরাফুল ইসলাম বলেন, এবারের ড্যাপে প্রস্তাবিত স্কুল জোনিংয়ের সঠিক বাস্তবায়নের মাধ্যমে শিশুদের হাঁটা দূরত্বে স্কুলের চাহিদা পূরণ করা সম্ভব হবে। এ লক্ষ্যে রাজউক বিভিন্ন কৌশলের মাধ্যমে মানসম্মত স্কুল প্রতিষ্ঠার ব্যবস্থা করবে। ড্যাপের সঠিক বাস্তবায়নের মাধ্যমে নিম্ন আয়ের লোকদের জন্য লক্ষাধিক আবাসন ইউনিট তৈরির উদ্যোগ নেওয়া হবে। যার মাধ্যমে আবাসন–সংকট মোকাবিলা করা সহজ হবে।

সংলাপে স্থপতি রোকসানা রশিদ অস্ট্রেলিয়ার ক্যানবেরা শহরের উদাহরণ তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ক্যানবেরাতে শহরের জনসংখ্যা নির্ধারণ করেই পরিকল্পনা প্রণয়ন করা হয়। কিন্তু বাংলাদেশের নগর এলাকার পরিকল্পনায় ‘ডিজাইন পপুলেশন’ সুনির্দিষ্ট না করাতেই পরিকল্পনাগুলো অকার্যকর হয়ে যাচ্ছে। পরিকল্পনায় স্বার্থের সংঘাত আসবেই, তবে এ ক্ষেত্রে রাষ্ট্র ও সরকারকে বৃহত্তর জনস্বার্থ নিশ্চিত করতে হবে।

অনুষ্ঠানে ঢাকার মিরপুর, মোহাম্মদপুর, বাড্ডা, সাভার, খিলগাঁও, যাত্রাবাড়ী এলাকার শিশু–কিশোরেরা তাদের মতামত ও দাবি তুলে ধরে। এ সময় খেলার মাঠের অভাব, হকারদের জন্য ফুটপাতে হাঁটতে সমস্যা, সবুজ এলাকা ও খোলা জায়গার অভাবের কথা জানায় তারা।

ড্যাপে প্রস্তাবিত বিদ্যালয়কেন্দ্রিক মহল্লা পরিকল্পনা, ব্লকভিত্তিক উন্নয়ন, এলাকাভিত্তিক পার্ক-খেলার মাঠ তৈরির প্রস্তাবগুলো বাস্তবায়নের মাধ্যমে শিশু-কিশোরদের দাবি পূরণ করা সম্ভব বলে সংলাপে উঠে আসে।

সংলাপে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রধান নগর–পরিকল্পনাবিদ মাকসুদ হাসেম বলেন, সিটি করপোরেশনকে নাগরিক সুবিধাদি নিশ্চিত করা ও প্রয়োজনীয় গণপরিসর বাস্তবায়নে অত্যন্ত সহায়ক দলিল হিসেবে কাজ করছে বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনা। ড্যাপের সুনির্দিষ্ট প্রস্তাবের কারণেই মিরপুরের প্যারিস রোডের মাঠ রক্ষা করা সম্ভব হয়েছে।

আরও পড়ুন

ড্যাপ প্রকল্পের ডেপুটি টিম লিডার ও পরিকল্পনাবিদ খন্দকার নিয়াজ রহমান বলেন, দেশ স্বাধীন হওয়ার পর কেন ঢাকা শহরে মানসম্মত স্কুল তৈরি করা যায়নি, সেই আত্মবিশ্লেষণ দরকার। সরকারের আন্তরিক সদিচ্ছা ছাড়া ড্যাপ বাস্তবায়ন করা যাবে না।

সংলাপে আইপিডির পরিচালক মোহাম্মদ আরিফুল ইসলাম, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক ফরহাদুর রেজা, পরিকল্পনাবিদ আবু মুসা জিন্নাহ প্রমুখ বক্তব্য দেন।

আরও পড়ুন