কোথাও দেয়ালের অংশ, কোথাও সিঁড়িতে ধস

আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করছেন ফায়ার সার্ভিসের এক সদস্যছবি: ফায়ার সার্ভিসের সৌজন্যে

সচিবালয়ে ৭ নম্বর ভবনে বুধবার মধ্যরাতে আগুন লাগার খবরটি রাতেই ফেসবুকে জানতে পারেন স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা। ভবনটির সপ্তম তলায় তাঁর কর্মস্থল। গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে ফায়ার সার্ভিস আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার পর তিনি নিজ কক্ষে যান। দেখেন, সব নথিপত্র, কম্পিউটারসহ আসবাব পুড়ে ছাই হয়ে গেছে।

সপ্তম তলায় ৫০টির মতো কক্ষ রয়েছে। এ তলায় রয়েছে স্থানীয় সরকার এবং পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগের দপ্তর। এর মধ্যে নিজ দপ্তরের একটি ভিডিও চিত্র ধারণ করেন ওই কর্মকর্তা।

নিচে এসে এই প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, সপ্তম তলার প্রায় প্রতিটি কক্ষ আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পুড়ে গেছে নথিপত্র। কোথাও দেয়ালের অংশ, কোথাও সিঁড়ি ধসে পড়েছে। কোথাও জানালার কাচ ভেঙে গেছে। অবশ্য দু–একটি কক্ষের ক্ষতি কম হয়েছে।

৭ নম্বর ভবনের অষ্টম তলায় দুটি মন্ত্রণালয়ের দপ্তর। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের একটি অংশ, অন্যটি ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়। এ তলায় বসেন অন্তর্বর্তী সরকারের স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া এবং ডাক ও টেলিযোগাযোগ উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম। আগুনে দুই উপদেষ্টার কক্ষে সব নথি, আসবাব পুড়ে গেছে। কক্ষের সামনের চলাচলের পথও (করিডর) ধসে পড়েছে বলে জানা গেছে।

এ ভবনের সবার ওপরে নবম তলায় রয়েছে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ। এ দপ্তর পুরোটা আগুনে পুড়ে গেছে। সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. এহছানুল হক প্রথম আলোকে বলেন, ‘অফিসের নথিপত্র, কম্পিউটার, আসবাব পুড়ে ছাই হয়ে গেছে বলে শুনেছি। ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণে একটি কমিটি গঠন করা হবে।’

আগুন নিয়ন্ত্রণে এলেও ৭ নম্বর ভবনের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নতুন চিন্তা হচ্ছে, আগামী সপ্তাহ থেকে তাঁরা বসবেন কোথায়। কত দিন বাইরে থাকতে হবে। কবে আবার স্বাভাবিক কার্যক্রম শুরু হবে। কবে নাগাদ পুড়ে যাওয়া নথির বিকল্প পাওয়া যাবে।

ভবনের সামনে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, তিনি ধারণা করছেন, বাজেটের কাগজপত্রগুলো ফিরে পাওয়া কঠিন হবে। দপ্তরে তাঁর ব্যক্তিগত শিক্ষা সনদ ছিল। প্রশাসন শাখার গুরুত্বপূর্ণ ফাইল ধ্বংস হয়ে গেছে বলে আশঙ্কা করছেন তিনি।

সচিবালয়ে ৭ নম্বর ভবনের সামনে একজন কর্মচারী তাঁর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে ফোনে বলছিলেন, ‘স্যার, সব শেষ হয়ে গেল।’

সকাল সাড়ে নয়টার দিকে ৭ নম্বর ভবনের চারপাশে দেখা যায়, ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে জানালার ভাঙা কাচ। আগুনে ভবনের ছয় থেকে নয়তলা পুড়েছে। ভবনের চারদিকে ফায়ার সার্ভিসের ছিটানো পানি। কয়েকটি কবুতর মরে পড়ে আছে। ফায়ার সার্ভিসের কয়েকজন কর্মীকে পুড়ে যাওয়া একটি কুকুর নিয়ে ভবন থেকে নামতে দেখা যায়। কুকুর কীভাবে পুড়ে মারা গেল, তা জানা যায়নি।

ঢাকা কলেজের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের স্নাতকোত্তর শিক্ষার্থী নাহিদ আলম আগুন লাগার খবর শুনে ভোর সাড়ে চারটার দিকে সচিবালয়ের ১ নম্বর ফটকের সামনে আসেন। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর এ ঘটনাকে তিনি নিছক দুর্ঘটনা বলতে রাজি নন। সকাল সাড়ে সাতটার দিকে প্রথম আলোকে বলেন, তিনি এসে ভবনের পশ্চিম পাশে আগুন দেখেন। আগুন এক পাশ থেকে কীভাবে আরেক পাশে এত দ্রুততার সঙ্গে চলে গেল, তা নিয়ে প্রশ্ন রাখেন।

সকাল সোয়া নয়টার দিকে সচিবালয়ের ৫ নম্বর ফটক খুলে দেওয়া হয়। তবে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা সচিবালয়ে ঢুকলেও সবচেয়ে উঁচু ২০ তলা ভবনটি (৬ নম্বর) ছিল বিদ্যুৎহীন। এ কারণে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা দীর্ঘ সময় বাইরে দাঁড়িয়ে থাকেন। এ সময় দাপ্তরিক কাজ ছিল বন্ধ। দুপুরের পর অবশ্য বেশির ভাগ কর্মকর্তা-কর্মচারী বাসায় চলে যান।