সিদ্দিকবাজারে বিস্ফোরণ
অন্তত হিসাব খাতাটি ফিরে পাওয়ার আশা
ব্যবসায়ীরা বলছেন, সব মিলিয়ে ৯টি প্রতিষ্ঠানের আর্থিক ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ১০ কোটি টাকার মতো।
রাজধানীর গুলিস্তানের সিদ্দিকবাজারে বিধ্বস্ত কুইন স্যানিটারি মার্কেটের নিচতলায় বিসমিল্লাহ স্যানিটারি নামের দোকান ছিল ব্যবসায়ী আবুল বাশারের। দুর্ঘটনার সময় ভবনটির দোতলায় শৌচাগারে গিয়ে প্রাণে বেঁচে যান তিনি। তবে মারা গেছেন তাঁর দোকানের ব্যবস্থাপক ওবায়দুল হোসেন।
বিস্ফোরণে তাঁর দোকান ও ভেতরের পণ্য লন্ডভন্ড হয়ে গেছে। কোটি টাকা লগ্নি করে ব্যবসায় নেমে এখন কীভাবে ঘুরে দাঁড়াবেন, তা নিয়ে দুশ্চিন্তা আবুল বাশারের। তাই অন্তত বাকির হিসাবের খাতাগুলো ফিরে পাওয়ার আশা করছেন তিনি।
আবুল বাশার গতকাল শনিবার প্রথম আলোকে বলেন, ‘কেউ স্পষ্ট কিছু বলছে না। ভেতরে (দোকান) কী অবস্থা, তা–ও জানি না। ব্যবসা তো করতেই হবে। কিন্তু কী করব, কীভাবে করব—বুঝতে পারছি না।’ তিনি জানান, দোকানে কমপক্ষে ৩০ লাখ টাকার পণ্য ছিল। নগদ ছিল আনুমানিক দেড় লাখ টাকা। তাঁর কাছে এখন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে বাকিতে পণ্য বিক্রির প্রায় কোটি টাকার লেনদেনের হিসাব খাতাটা।
‘দোকানে প্রায় ৪০ লাখ টাকার স্যানিটারি পণ্য ছিল, নগদ টাকা ছিল প্রায় ৩ লাখ।’ আর কুইন স্যানিটারি মার্কেটের একটি দোকান ছাড়া সিদ্দিকবাজার ও হাতিরপুলে দুটি করে মোট পাঁচটি প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছিলেন সুমন। তাঁর (সুমনের) মৃত্যুতে পরিবারের সদস্যদের মতো এসব প্রতিষ্ঠানের দোকান ও গুদামের প্রায় ১৪০ কর্মীও পড়েছেন বড় অনিশ্চয়তায়।জহিরুল ইসলাম, দোকানের ব্যবস্থাপক
বিস্ফোরণে বাশারের দোকান ছাড়াও কুইন স্যানিটারি মার্কেটের নিচতলার আরও চারটি ও বেজমেন্টের একটি দোকান বিধ্বস্ত হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে দ্বিতীয় তলার একটি বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান। দুই পাশের ফাতেমা মার্কেট ও কাদের ম্যানশনের নিচতলার আরও দুটি দোকান বিধ্বস্ত হয়েছে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, সব মিলিয়ে ৯টি প্রতিষ্ঠানের আর্থিক ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ আনুমানিক ১০ কোটি টাকার মতো।
ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীরা বলছেন, বিধ্বস্ত সাততলা ভবনটি বাসযোগ্য করার বিষয়টি এখনো নিশ্চিত নয়, হলেও অনেক সময় লাগবে। তা ছাড়া সেখানে আবার আগের মতো ব্যবসা গোছানো নিয়েও অনিশ্চয়তা আছে।
বাসযোগ্যতার সম্ভাব্যতা যাচাইয়ে অন্তত ৪৫ দিন সময় লাগবে বলে প্রথম আলোকে জানিয়েছেন রাজউকের সদস্য (উন্নয়ন) সামসুদ্দীন আহমদ চৌধুরী। তিনি রাজউকের গঠিত কারিগরি কমিটির আহ্বায়ক।
বিধ্বস্ত কুইন স্যানিটারি মার্কেটের নিচতলায় ছিল আনিকা এজেন্সির দোকান। দুর্ঘটনায় প্রতিষ্ঠানটির মালিক মমিন উদ্দিন সুমন মারা যান। বিস্ফোরণে দোকানের মেঝে ধসে নিচে চলে গেছে। ছাদটাও ভেঙে নিচের দিকে ঝুলছে।
দুর্ঘটনার সময় নামাজে গিয়ে প্রাণে বাঁচেন দোকানের ব্যবস্থাপক জহিরুল ইসলাম। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘দোকানে প্রায় ৪০ লাখ টাকার স্যানিটারি পণ্য ছিল, নগদ টাকা ছিল প্রায় ৩ লাখ।’ আর কুইন স্যানিটারি মার্কেটের একটি দোকান ছাড়া সিদ্দিকবাজার ও হাতিরপুলে দুটি করে মোট পাঁচটি প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছিলেন সুমন। তাঁর (সুমনের) মৃত্যুতে পরিবারের সদস্যদের মতো এসব প্রতিষ্ঠানের দোকান ও গুদামের প্রায় ১৪০ কর্মীও পড়েছেন বড় অনিশ্চয়তায়।
ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ কোনো অংশেই ১০ কোটি টাকার নিচে নয়। এখানে সবাই কমবেশি কোটি টাকার ব্যবসায়ী।মুহাম্মদ রবিউল হক, বাংলাদেশ পাইপ অ্যান্ড টিউবওয়েল মার্চেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি (ক্ষতিগ্রস্ত বাদশা ট্রেডিংয়ের স্বত্বাধিকারী)
তবে কর্মীদের নিয়ে সুমনের দুই ভাই মনির উদ্দিন ও নিয়াজ মোর্শেদ পারিবারিক এই ব্যবসায় ঘুরে দাঁড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছেন। এই লক্ষ্যে দুর্ঘটনাস্থলের পাশেই আনিকা এজেন্সির আরেকটি দোকানে প্রায় ৩০ কর্মী নিয়ে গতকাল তাঁরা আলোচনায় বসেন।
বিস্ফোরণের ঘটনায় নিহত ২৪ জনের মধ্যে স্যানিটারি দোকানের মালিক ও কর্মী ১১ জন। বিধ্বস্ত ভবনের আন্ডারগ্রাউন্ডের পুরোটাই ছিল বাংলাদেশ স্যানিটারি নামের একটি দোকান। বর্তমানে এর মালিক আবদুল মোতালিব হোসেন কারাগারে আছেন। দোকানটির কোনো কর্মী বা প্রতিনিধিকে না পাওয়ায় আর্থিক ক্ষয়ক্ষতির আনুমানিক হিসাব জানা যায়নি।
বিধ্বস্ত আরেকটি দোকান হারুন এন্টারপ্রাইজের মালিক মো. খালেদ বলেন, দোকানে প্রায় অর্ধকোটি টাকার মালামাল ছিল। ভেতরে যেতে না পারায় ওগুলোর কী অবস্থা তা এখনো জানা যায়নি।
এ ছাড়া কুইন স্যানিটারি মার্কেটের নিচতলায় আজাদ ও একমি স্যানিটারি নামের আরও দুটি দোকানের পাইকারি ব্যবসা ছিল। বিধ্বস্ত ভবনের উত্তর পাশের ফাতেমা মার্কেটের বাদশা ট্রেডিং আর দক্ষিণ পাশের কাদের ম্যানশনের সালু এন্টারপ্রাইজ নামের দুটি পাইকারি ব্যবসার দোকানও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
এ ছাড়া ফাতেমা মার্কেটে প্রথম চারটি তলায় ১৫টি দোকান রয়েছে আর দক্ষিণ পাশের কাদের ম্যানশনের নিচতলায় রয়েছে চারটি দোকান। বিস্ফোরণের ঘটনার পর থেকে এসব দোকান বন্ধ রয়েছে।
বাংলাদেশ পাইপ অ্যান্ড টিউবওয়েল মার্চেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মুহাম্মদ রবিউল হক (ক্ষতিগ্রস্ত বাদশা ট্রেডিংয়ের স্বত্বাধিকারী) প্রথম আলোকে বলেন, ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ কোনো অংশেই ১০ কোটি টাকার নিচে নয়। এখানে সবাই কমবেশি কোটি টাকার ব্যবসায়ী।
দোকানে সবার মালামাল হয়তো সমান থাকে না, তবে ব্যবসা বড়। লেনদেনের যাবতীয় তথ্য দোকানেই ছিল। এগুলো পাওয়া না গেলে ব্যবসায়ীরা আরও ক্ষতিগ্রস্ত হবেন।