এবার কেমন নকশার পাঞ্জাবি বেশি পছন্দের
মিরপুর ৬ নম্বর সেকশনের একটি ব্র্যান্ডের শোরুমে পাঞ্জাবি দেখছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী জাহিদ চৌধুরী। সুতি কাপড়, হালকা কাজ আর স্লিম ফিট—এই তিন মিলিয়ে নিজের পাঞ্জাবি খুঁজছিলেন। জাহিদ বলেন, ‘গরমে যেন পরে আরাম পাই। আর ঈদের পরপরই পয়লা বৈশাখেও যেন একই পাঞ্জাবি পরতে পারি।’
ঈদের আর বেশি দিন বাকি নেই। শেষ মুহূর্তে ছেলেদের পাঞ্জাবির দোকানে কেনাকাটা বেশ জমে উঠেছে। মিরপুর, মালিবাগ ও বসুন্ধরা শপিং কমপ্লেক্সের স্থানীয় ও ব্র্যান্ডের শোরুম ঘুরে দেখা যায়, গরমের মৌসুমের কারণে পাঞ্জাবিতে এবার আরামদায়ক কাপড়ে হালকা কাজকে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। ঈদের পর পয়লা বৈশাখ। রং নির্বাচনে এই বিষয়কেও গুরুত্ব দিচ্ছেন ক্রেতারা, যাতে এক পাঞ্জাবি উভয় উৎসবে পরা যায়। বেশি বিক্রি হচ্ছে দুই থেকে তিন হাজার টাকা দামের পাঞ্জাবি।
মিরপুর ১০ নম্বর গোলচত্বরের ফায়ার সার্ভিসের উল্টো পাশ থেকে শুরু করে মিরপুর থানা পর্যন্ত সারি সারি বুটিকস ও ফ্যাশন হাউসের দোকান। এখানে নামীদামি ব্র্যান্ডের পাশাপাশি বেশ কিছু স্থানীয় বুটিকের দোকান রয়েছে। বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টায় গিয়ে দেখা যায়, ছেলেদের পাঞ্জাবির সেকশনে বেশ ভিড়।
জেন্টলপার্কের শোরুম ব্যবস্থাপক পিয়াল হাসান প্রথম আলোকে বলেন, আরামদায়ক ও হালকা ডিজাইনের পাঞ্জাবি বেশি বিক্রি হচ্ছে। গরমের কারণে ক্রেতারা ভারী কাজের পাঞ্জাবি কম কিনছেন। তাঁদের সব পাঞ্জাবির দাম দুই হাজার থেকে সাড়ে চার হাজারের মধ্যে রাখা হয়েছে।
কয়েক দিন ধরেই রোদের তেজ বেশি। মৃদু থেকে মাঝারি তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। ঈদের সময়ও গরম কমার সম্ভাবনা কম। ফলে ক্রেতারা গরমের কথা মাথায় রেখেই পাঞ্জাবির কাপড় ও রং বেছে নিচ্ছেন। কাপড়ের মধ্যে সুতিই ক্রেতাদের প্রথম পছন্দ। জ্যাকার্ড, অ্যান্ডি, রেয়ন, ভয়েল, অরগাঞ্জা, লিনেন, রেমি কটন, ভিসকসের মতো কাপড়ের পাঞ্জাবি বেশ বিক্রি হচ্ছে।
ঈদের উৎসবে প্রিমিয়াম মানের পাঞ্জাবিরও বেশ চাহিদা রয়েছে। গুলশানের ভাসাবি, জারা, লুবনান, ইলিয়েন, আড়ং, লা রিভসহ বেশ অনেক ব্র্যান্ডই প্রিমিয়াম পাঞ্জাবি এনেছে। এসব পাঞ্জাবি কিনতে হলে ক্রেতাদের খরচ হবে ছয় হাজারের ওপরে।
ফ্যাশন ব্র্যান্ড লা রিভের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মন্নুজান নার্গিস বললেন, সিল্ক, হাফ সিল্ক, আর্ট সিল্ক, প্রিমিয়াম কটন, জ্যাকার্ড ফেব্রিকে কারচুপি বা এমব্রয়ডারি করা পাঞ্জাবিগুলোর প্রতিই ক্রেতাদের আগ্রহ বেশি দেখা যাচ্ছে। লা রিভে ১ হাজার ৪০০ থেকে শুরু হয়ে সাড়ে ৬ হাজার টাকা দামের পাঞ্জাবি রয়েছে।
তরুণদের পাঞ্জাবিতে এবার স্লিম ফিট আর সেমি লম্বা বেশি চলছে। তবে রেগুলার ফিট, হেরিটেজ, টিউন ফিট, সেমি স্লিম ফিট, কলি কাট, শেরওয়ানি কাটসহ নানা ধরনও আছে। একরঙা পাঞ্জাবির বুকে, কলার, প্লেট বা হাতায় ভিন্ন রঙের কাপড় বা হাতের কাজ দেখা যাচ্ছে।
ব্র্যান্ডের পাশাপাশি বিভিন্ন স্থানীয় বুটিকের দোকানেও নানা নকশা ও মানের পাঞ্জাবি বিক্রি হচ্ছে। এসব দোকানে অধিকাংশ পাঞ্জাবির দাম ১ হাজার ২০০ থেকে ২ হাজারের মধ্যে। মিরপুরের স্থানীয় বুটিকসের দোকান শ্রাবণের ব্যবস্থাপক মোস্তাকিম হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, এবার এক রঙের পাঞ্জাবির ওপর কনট্রাস্ট সুতার কাজ প্রাধান্য পেয়েছে। সর্বোচ্চ ২ হাজার ২০০ টাকা দামের পাঞ্জাবি রয়েছে।
ক্রেতারা বলছেন, এবার পাঞ্জাবির দাম কিছুটা বেশি। আগে ১ হাজার ৮০০ থেকে ২ হাজারের মধ্যে ছিল, সেগুলোর জন্য এবার আড়াই থেকে তিন হাজার টাকা গুনতে হচ্ছে। পায়জামার দাম কমবেশি ৪০০ থেকে ১ হাজার ২০০ টাকা পর্যন্ত। যদিও বিক্রেতারা বলছেন, দাম খুব একটা বাড়েনি; বরং অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার বিক্রি কম।
মালিবাগের আয়শা শপিং কমপ্লেক্সের পুরোটাই পাঞ্জাবির মার্কেট। বৃহস্পতিবার দুপুরে গিয়ে দেখা যায়, মার্কেটে ক্রেতাদের উপস্থিতি ভালো। এই মার্কেটে অধিকাংশ পাঞ্জাবির দাম ৬০০ থেকে শুরু। দেড় থেকে দুই হাজারের মধ্যেই এখানকার পাঞ্জাবির দাম। এখানকার নাহিদ ফ্যাশনসের স্বত্বাধিকারী নাইমুল খান বলেন, আগে এই মার্কেটে ঢাকার বিভিন্ন এলাকা থেকে লোকজন আসতেন। এখন আশপাশের এলাকার লোকজনই এখানকার প্রধান ক্রেতা। দাম কিছুটা কম থাকায় নিম্নমধ্যবিত্ত ও মধ্যবিত্তের লোকজন বেশি আসেন।
এবার শিশুদের ঈদের পাঞ্জাবি একটু বেশি রঙিন ও নানা ধরনের নকশা করা। এসবের দাম ৭০০ থেকে শুরু করে ২ হাজার টাকার মধ্যে। ছেলের জন্য খিলগাঁও থেকে আয়শা কমপ্লেক্সে পাঞ্জাবি কিনতে এসেছেন ব্যবসায়ী আবদুল মান্নান। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, এখানে ৬০০ থেকে ৭০০ টাকার মধ্যে ছোটদের পাঞ্জাবি কেনা যায়।
ছেলেদের ঈদের পোশাক হিসেবে পাঞ্জাবির আবেদন এখনো অটুট। ঈদের নামাজ থেকে শুরু করে পারিবারিক আয়োজন, বন্ধুদের আড্ডা—সবখানেই পাঞ্জাবি খুব মানানসই পোশাক। যে কারণে পাঞ্জাবির রং-নকশা নিয়ে নিরীক্ষা চলছে এবারও। ক্রেতারাও নিজেদের সাধ্যের মধ্যে পছন্দের পাঞ্জাবি কিনে ঈদের আনন্দের প্রস্তুতি সারছেন।